KOLKATA DENGUE

বাড়ি বাড়ি ঘোরার কর্মী নেই, ডেঙ্গু বেলাগাম

রাজ্য কলকাতা

DENGUE DENGUE KOLKATA KOLKATA MUNICIPAL CORPORATION KMC ডেঙ্গু আক্রান্তের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে

ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে কলকাতার ডেঙ্গু চিত্র? 

কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক সূত্র শনিবার জানিয়েছে, কলকাতা কর্পোরেশনের১০ এবং ১২ নম্বর বরোর বিস্তীর্ণ অঞ্চলে থাবা ফেলেছে ডেঙ্গু(DENGUE)।  কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২’র জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত কলকাতায় মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪২৬। সূত্র জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়েছে। প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা। কলকাতা(KOLKATA) কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্ব রয়েছেন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। তিনি ঘোষণা করেছিলেন, প্রতি সপ্তাহে শহরের ডেঙ্গু চিত্র প্রকাশ করা হবে বুলেটিনে। কিন্তু শনিবারও প্রকাশিত হয়নি এ সপ্তাহের বুলেটিন।
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, কর্পোরেশনের(KMC) তথ্য প্রকাশের অনীহা থেকে স্পষ্ট, বিগত বছরগুলির মতো এবারেও ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্যে কারচুপি চলছে। ফলে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪২৬’র বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কমে গিয়েছে বাড়ি বাড়ি ঘুরে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার মতো কর্মীবাহিনী।

কলকাতা শহরের সংযুক্ত এলাকাগুলিতেই মূলত থাবা ফেলেছে ডেঙ্গি। দক্ষিণ কলকাতায় ১০ এবং ১২ নম্বর বরোর বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এখনও বহু জমি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। সেখানে ঝোপঝাড়ের ফাঁকে জল জমে থাকলেও দেখার কেউ নেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খামখেয়ালি বৃষ্টির সমস্যা। আগাছা এবং জঞ্জালের স্তূপের ফাঁকে ফাঁকে তৈরি হচ্ছে পরিষ্কার জমা জলের অজস্র ‘পকেট’। এডিস মশার বেড়ে ওঠার জন্য আদর্শ পরিবেশ। 

ডেঙ্গু রোধে একগুচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণের কথা ঘোষণা করেছিলেন মেয়র এবং ডেপুটি মেয়র। সেগুলির কী অবস্থা? 

স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, বামফ্রন্ট(LEFT FRONT) পরিচালিত বোর্ডের সময়কালে ডেঙ্গু দমনের জন্য ওয়ার্ড পিছু গড়া হয়েছিল র্‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স। ২০১০ সালের পর থেকে দফায় দফায় সেই ফোর্সকে দুর্বল করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ওয়ার্ড ভিত্তিক অ্যাকশন ফোর্সকে বরো ভিত্তিকঅ্যাকশন ফোর্সে রূপান্তরিত করা হয়। বর্তমানে ময়দান থেকে কার্যত হাওয়া গিয়েছে সেই ফোর্স। বাড়ি বাড়ি ঘোরার লোক কম। শূন্যপদ ভরা হচ্ছে না। এই ফোর্স মূলত বাড়ি বাড়ি গিয়ে জমা জলের সন্ধান চালাতো। অতিরিক্ত আবর্জনা জমে থাকলে জমি কিংবা বাড়ির মালিককে জরিমানাও করা হত। ডেঙ্গির মরশুমে কোনও ব্যক্তি জ্বরে আক্রান্ত হলে, সেই খবরও সংগ্রহ করতেন তাঁরা।  সেই ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ফলে ডেঙ্গির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রথম থেকেই ব্যাকফুটে কলকাতা কর্পোরেশন। 
কাউন্সিলররা ব্যক্তিগত উদ্যোগে এলাকায় নামলে ডেঙ্গু বিরোধী অভিযান চালালে একমাত্র এই খামতি পূরণ করা সম্ভব। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে হাতে গোনা কয়েকজন পৌর প্রতিনিধি ছাড়া কোনও কাউন্সিলরকেই ডেঙ্গু রোধে পথে নামতে দেখা যায়নি। 

কর্পোরেশনের তরফে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশার লার্ভা মারার জন্য ওষুধ স্প্রে করা হয়ে থাকে। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক এবং সুপারভাইজারদের বক্তব্য, বহু বাড়িতেই তাঁদের সঙ্গে সহযোগিতা করা হয় না। বারবার দরজা ধাক্কালে বা কলিং বেল বাজালেও দরজা খুলে দেওয়া হয় না। বড় এবং মাঝারি আবাসনগুলির ক্ষেত্রে এই অনীহা বেশি। শরিকি বিবাদের ফলেও বহু বাড়িতে ঢুকতে সমস্যা পড়তে হয় তাঁদের। সেখানে জল কিংবা আবর্জনা জমে থাকলেও তাঁরা নিরুপায়। এর ফলে খামতি থেকে যাচ্ছে সচেতনতা গড়ার কাজেও। তাই ফ্রিজের ট্রে কিংবা এসি’র পাইপ থেকে বেরনো পরিষ্কার জমা জলে ডেঙ্গির লার্ভা জন্মালেও দেখার কেউ নেই। 

কিন্তু এই ধরনের ক্ষেত্রে তো জরিমানা করার ক্ষমতা রয়েছে কলকাতা কর্পোরেশনের? স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ সদস্য অতীন ঘোষ সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন, ফাঁকা জমিতে আবর্জনা ফেললে স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে নোটিশ পাঠিয়ে জরিমানা আদায় করা হবে। স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, কার্যক্ষেত্রে এর কিছুই হয়নি। তার ফলে মোট কত নোটিশ পাঠানো হয়েছে, কিংবা জরিমানা বাবদ কত টাকা আদায় হলো, এর কোনও তথ্যই দিতে পারেনি কলকাতা কর্পোরেশন। কলকাতা কর্পোরেশনের সূত্র জানাচ্ছে যে কার্যত অন্তরালে রয়েছেন অতীন ঘোষ। তিনি কর্পোরেশনে এলেও ডেঙ্গি সংক্রান্ত মেয়র পারিষদদের একাধিক বৈঠক এড়িয়ে গিয়েছেন। তাঁকে এবার পথেও নামতে দেখা যায়নি।

Comments :0

Login to leave a comment