Inflation

বৃদ্ধির হার কমবে, মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে

জাতীয়

ভাষ্য রয়েছে, তথ্য নেই। আশাবাদ রয়েছে, সে আশার ভিত্তি যে দুর্বল তা বোঝা যাচ্ছে। সংক্ষেপে, এই হলো অর্থনৈতিক সমীক্ষা, কেন্দ্রীয় বাজেটের আগের দিন অর্থমন্ত্রী যা সংসদে পেশ করেছেন।
প্রথমত, মোট অভ্যন্তরীণ বৃদ্ধির হার কমবে। সমীক্ষার অনুমান, আগামী এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া অর্থবর্ষে জিডিপি বৃদ্ধির হার হবে ৬ থেকে ৬.৮ শতাংশ। ২০২২-এর এপ্রিল থেকে ২০২৩-এর মার্চের জন্য গত অর্থনৈতিক সমীক্ষায় অনুমান করা হয়েছিল ৭ শতাংশ। তার আগের বছর বৃদ্ধির হার ছিল ৮.৭ শতাংশ। উল্লেখ্য, গত বছর বাজেট পেশের সময়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন দাবি করেছিলেন বৃদ্ধির হার চলতি অর্থবর্ষে হবে ৯ শতাংশেরও বেশি। সমীক্ষায় কোভিড থেকে শুরু করে কয়েকটি বাধার কথা বলা হয়েছে যা বৃদ্ধির হারকে এগতে দিচ্ছে না। যদিও অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রের নীতিগত সমস্যার কথা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। বরং দাবি করা হয়েছে, বৃদ্ধির হার কমলেও ভারতই বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতি। 
দ্বিতীয়ত, মুদ্রাস্ফীতির হার চলতি অর্থবর্ষে ৬.৮ শতাংশ থাকবে বলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমান। এই হার কমবে, এমন কোনও দাবি করতে পারেনি সমীক্ষা। মুদ্রাস্ফীতির কারণে মানুষ যখন জর্জরিত, তখন সমীক্ষার মূল্যায়ন হলো এই হার এমন নয় যে এতে ব্যক্তির ক্রয়ের চাহিদা কমবে, বা এত কম নয় যে বিনিয়োগের সম্ভাবনা কমবে। 
তৃতীয়ত, অর্থনীতির পরিভাষার আড়ালে স্বীকার করা হয়েছে ভারতের মুদ্রার অবনমন চলতেই থাকবে। এইসঙ্গে চলতি খাতে ঘাটতি বাড়ছে, বাড়বেও। আমদানি বাড়ছে, রপ্তানি কমছে। এখানেও একটি চমৎকার ব্যাখ্যা হাজির করা হয়েছে! আমদানি বাড়ছে কেননা স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে আর রপ্তানি কমছে কেননা বিশ্ব অর্থনীতি দুর্বল হচ্ছে। এক বছর আগে ভারতের চলতি খাতে ঘাটতি ছিল ১.৩ শতাংশ। তা এখন বেড়ে হয়েছে ৪.৪ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। 
চতুর্থত, সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে বেসরকারি ক্রয় ও মূলধন তৈরিই কর্মসংস্থানের চালিকাশক্তি হিসাবে কাজ করছে। এখানেও তথ্যের বিপুল গরমিল রয়েছে। ভারতের বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়েনি, বরং কমছে। ফলে বেসরকারি উদ্যোগ থেকে কর্মসংস্থানের হার কমছে বলেই একের পর এক সমীক্ষায় প্রকাশিত হয়েছে। চলতি অর্থবর্ষে স্থায়ী মূলধন তৈরির হার ৩০ শতাংশ। কিন্তু আগামী অর্থবর্ষে তা ২৯ শতাংশ হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। ২০০৩-২০০৮ পর্বে এই হার ৩৫ শতাংশের ধারেকাছে ছিল। উল্লেখ্য চীনে এই হার ৫০ শতাংশের কাছে। কর্মসংস্থানের প্রশ্নে সমীক্ষায় বেসরকারি উদ্যোগকেই প্রধান বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। বাজেটে আরও ইঙ্গিত মিলবে, এই লক্ষ্যে বেসরকারিকরণের আর কী কী পদক্ষেপ নেয় সরকার। কিন্তু পরিকাঠামো সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোনও সুপারিশ সমীক্ষায় নেই। 
সমীক্ষায় সবচেয়ে অবহেলিত গ্রামীণ দুর্দশার কথা। সমীক্ষার তথ্যেই দেখা যাচ্ছে, ২০২০-২১ সালে কৃষিক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ছিল ৩.৩ শতাংশ। ২০২১-২২-এ তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩.০ শতাংশ। ফসলের দাম নেই, গ্রামে কাজ নেই (এমনকি সমীক্ষায় জানানো হয়েছে শহরে ফের পরিযায়ীদের স্রোত বাড়ছে), রেগার চাহিদা কমার কোনও লক্ষণ নেই, কৃষিতে সরকারি বিনিয়োগের হার প্রকৃত হিসাবে কমছে। এইসব কথা এড়িয়ে গেলেও সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভারতীয় কৃষিকে অভিমুখ পরিবর্তন করতে হবে। কেননা বেশ কিছু ‘চ্যালেঞ্জ’ রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, জমি টুকরো হয়ে যাওয়া, কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহারে ঘাটতি, কম উৎপাদনশীলতা, ছদ্ম বেকারত্ব, কৃষির উপাদানের ব্যয় বৃদ্ধির কথা উল্লেখ রয়েছে। এই ‘অভিমুখ’ কী হবে, তা কি তিন বাতিল হওয়া কৃষি আইনের মতো কর্পোরেট-নির্ভর হবে, তার স্পষ্ট উল্লেখ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment