Editorial Adani

আদানি গোষ্ঠীর জালিয়াতি

সম্পাদকীয় বিভাগ

তিনি সাথেও ‍‌ছিলেন না, পাছেও ছিলেন না, এমন এক নির্দোষ ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন গুজরাট দাঙ্গাকে ঘিরে। কিন্তু ব্রিটিশ সংস্থা বিবিসি’র তৈরি দুই পর্বের তথ্যচিত্রে নরেন্দ্র মোদীর সেই ভাবমূর্তি ঘেঁটে গেছে। গুজরাট দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকাকে এই ছবি শুধু প্রশ্নের মুখেই তুলে দেয়নি, রীতিমতো দায়ী করেছে। সেই ছবি নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হতেই আর এক বিতর্কের রসদ হা‍‌জির করেছে মার্কিন সংস্থা। ‘হিডেনবার্গ রিসার্চ’ নামক মার্কিন সংস্থাটি কার্যত বেআব্রু করে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠতম কর্পোরেট বন্ধু গৌতম আদানির মালিকানাধীন সংস্থাকে। আদানি শুধু মোদীর কাছের বন্ধু নন ভারত তথা এশিয়ার সবচেয়ে ধনী শিল্পপতি। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধনী। মোদী জমানায় উল্কা গতিতে বিশ্বের বিলিয়নার (শত কোটিপতি) তালিকায় শীর্ষস্তরে উঠে আসা আদানির উত্থান রহস্যের অনেককিছুই প্রকাশ পেয়েছে হিডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টে। কোনোরকম রাখঢাক না রেখে আদানি গোষ্ঠী কারচুপি করে তাদের সংস্থাগুলির শেয়ার দর বা‍‌ড়িয়েছে। মরিশাস, সাইপ্রাস, আরব আমিরশাহী সহ বিশ্বের করমুক্ত অঞ্চলগুলিতে গুচ্ছ গুচ্ছ ভুয়া কোম্পানি (শেল কোম্পানি) খুলে তাদের মাধ্যমে আদানি গোষ্ঠীর কোম্পানিগুলি শেয়ার নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক লেনদেন করে কর ফাঁকি দিচ্ছে এবং কোম্পানির সম্পদ মূল্য ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখিয়ে অতিরিক্ত ঋণ নিয়েছে। সরকারের সঙ্গে অলিখিত বোঝাপড়া ছাড়া অথবা সরকারি সহযোগিতা ছাড়া এধরনের অনিয়ম তথা জালিয়াতি করা সম্ভব নয়।


লক্ষণীয় গৌতম আদানির নিট সম্পদ ১২ হাজার কোটি ডলারের মধ্যে ১০ হাজার কোটি ডলারই এসেছে গত তিন বছ‍‌রে। ব্যাপক হারে কারচুপি করে কৃত্রিমভাবে‍‌ শেয়ার মূল্য না বাড়ালে এটা কোনও অবস্থাতেই সম্ভব হতো না। হিসাব-নিকেষেও জালিয়াতির কথা বলেছে হিডেনবার্গ। তারা জানিয়েছে গত দু’বছর ধরে অনুসন্ধান করে অজস্র নথি যাচাই করে এবং ওয়াকিবহালদের সঙ্গে কথা বলে তারা এই রিপোর্ট তৈরি করেছে। আদানি গোষ্ঠী রিপোর্টের রিরোধিতা করলেও হিডেনবার্গ হাল ছাড়ার পাত্র নয়।
মোদীর বন্ধু আদানিদের সম্পর্কে এমন অভি‍‌যোগ নতুন নয়। গত বছর মার্কিন মূল্যায়ন সংস্থা ‘ফিচ’-র অধীন সংস্থাও অনুরূপ অভিযোগ তুলেছিল। এমন অভিযোগ উঠেছিল ভারতের শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘সেবি’-র তরফ থেকেই। এমন অভিযোগে সেবি আদানিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছিল। কিন্তু যাদের হাত খোদ প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত প্রসারিত তাদের লাগাম টানা যে সহজ নয় আদানিরা তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
যে সময় ভারতের অর্থনীতির গতি মন্থর হচ্ছে তখন ছুটছে আদানিদের অশ্বমেধ ঘোড়া। তারও পরে যখন করোনা মহামারীর ধাক্কায় বিশ্বজুড়ে মন্দার কালো মেঘ তখন আদানিদের সম্পদ বাড়ছে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টিকারী গতিতে। এমন প্রতিকূল জাতীয় ও বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এত দ্রুতগতিতে কোনোদিন কোনও সংস্থার ব্যবসা, মুনাফা ও সম্পদ বা‍ড়েনি। এটা যে স্বাভাবিক স্বচ্ছ পথে হয়নি সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
 

Comments :0

Login to leave a comment