বাতাসে কার্বন কম মিশিয়ে উন্নয়নের পরিকল্পনা পেশ করল ভারতও। এই নিয়ে বিশ্বের ৬০টি দেশ এই পরিকল্পনা পেশ করেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘের কাছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের আয়োজনে মিশরের শারম অল শেখে চলছে বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলন ‘কোপ ২৭’।
বিদ্যুতে চলা যান বাড়ানো, হাইড্রোজেনের ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্য জানিয়েছে ভারত। বিশ্ব মঞ্চে ভারত জানিয়েছে পরমাণু বিদ্যুতের উৎপাদন ২০৩২ সালের মধ্যে ৩ গুন বাড়ানো হবে। কয়লা, পেট্রোল-ডিজেল বা প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো হবে উন্নয়নের গতি শ্লথ না করে। এদিন ভারতের ‘ভিশন প্ল্যান’ পেশ করেন কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রী ভূপেন্দর যাদব। তিনি বলেন, সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে। তাতে আরও জোর দেওয়া হবে।
কোপ-এ অংশ নেয় এমন দেশ বা স্বীকৃত পক্ষের মোট সংখ্যা প্রায় ২০০। এর আগে মাত্র ২৩টি দেশ উষ্ণায়ন রোধ পরিকল্পনা জমা দিয়েছিল। বাস্তবায়ন তো পরের বিষয়। তা নিয়ে ক্ষোভ চেপে রাখেননি রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
দেশের মধ্যে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকার জন্য যদিও সমালোচনার মুখে বারবারই পড়ছেন যাদব এবং সরকার। পরিবেশবিধির তোয়াক্কা না করে বড় বড় প্রকল্পের অনুমোদন নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। বনাঞ্চলের বাসিন্দাদের মত নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা হটাতেও তৎপর সরকার।
সোমবার ভূপেন্দর যাদবের শারম অল শেখে বলেছেন, ‘‘বিশ্বের ১৭ শতাংশ জনসংখ্যার বাস ভারতে। কিন্তু তারপরেও ভারতের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের হার উন্নত দেশগুলির তুলনায় নগন্য। অপরদিকে উন্নত দেশগুলি নিজেদের দায় অস্বীকার করে নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এবং জলবায়ু পরিবর্তনের যাবতীয় দায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলির দিকে।’’
ভারতের পরিবেশ মন্ত্রীর বক্তব্য বিশ্বের সব উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত দেশের প্রতিনিধিদের মুখে শোনা গিয়েছে। উল্লেখ্য, তাপ আটকে রেখে বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী বিভিন্ন গ্যাস বা ‘গ্রিনহাউস গ্যাস’ নির্গমণের দায় উন্নয়নশীল দেশগুলির ওপরই চাপাতে তৎপর শিল্পোন্নত বিশ্ব।
ভারতের স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী, আর্থিক বৃদ্ধির গতি শ্লথ না করেই পরিবেশের দিকে নজর দেওয়া হবে। তার ফলে জ্বালানি হিসেবে খনিজ তেল কিংবা কয়লার ব্যবহার কমিয়ে এনে হাইড্রোজেনের মতো জ্বালানিকে জনপ্রিয় করা হবে। বাতাসে দূষণ কমাতে পারে ‘গ্রিন হাইড্রোজেন’। তার উৎপাদন বাড়াতে ইলেক্ট্রোলাইজার তৈরির কারখানা বাড়ানো হবে।
এছাড়াও সৌর শক্তি এবং পরমাণু শক্তি বৃদ্ধির উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। ভারতের স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী, ২০৩২ সালের মধ্যে পরমাণু শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের হার ৩ গুণ বৃদ্ধি পাবে।
ভারত বলেছে, ইতিমধ্যেই পেট্রোলের সঙ্গে ইথানল মিশিয়ে বিকল্প জ্বালানি তৈরির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এই জ্বালানির ব্যবহার ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। খাদ্যশস্য ইথানলের উৎপাদনের জন্য ব্যবহার কতটা সঙ্গ তা নিয়ে যদিও বিশ্বজুড়ে বিতর্ক রয়েছে।
মিশরের শারম অল শেখ ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে কোপ-২৭ সম্মেলন। চলবে ১৮ নভেম্বর অবধি। বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধের জন্য এই সম্মেলনে মিলিত হয়েছে বিশ্বের দেশগুলি। উন্নয়নশীল দেশগুলি বলেছে,, জলবায়ু পরিবর্তন রোধের প্রধান দায়িত্ব শিল্পোন্নত দেশগুলির। উন্নয়নশীল দেশগুলির বৃদ্ধির পায়ে শিকল বাঁধা যাবে না। পশ্চিমী দেশগুলিকে দায়ী করে ক্ষতিপূরণেরও দাবি জানায় উন্নয়নশীল দেশগুলি।
Comments :0