Jungolmohol

কাজের দাবিতে জেগেছে জঙ্গলমহলও

রাজ্য

 জেগেছে জঙ্গলমহলও। সোমবার পদযাত্রায় উড়ল লাল ঝান্ডা চন্দ্রীতে। প্রস্তুতি চলছে বাঁশপাহাড়ি থেকে সাঁকরাইল— ঝাড়গ্রামের প্রতিটি ব্লকের গ্রামগুলিতে। 
মাওবাদী-তৃণমূলের হামলা, নাশকতার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল চন্দ্রী। আশেপাশে সাপধরার মতো এলাকাগুলিতে বারবার হামলা চালিয়েছিল মাওবাদী-তৃণমূল। সহায়তা ছিল বিজেপি’র। কিন্তু চন্দ্রীর প্রতিরোধ ভাঙতে পারেনি তারা। ২০১১-য় মমতা ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর পুলিশের সাহায্যে তৃণমূল অত্যাচার চালায় চন্দ্রীতে, বামপন্থীদের উপর। লুটের ভোটের পথে চন্দ্রীর পঞ্চায়েত দখল করেছে তৃণমূল। কিন্তু এই সময়কালে গ্রামবাসীরা নানাভাবে বঞ্চিত। এদিন সেই বঞ্চিত মানুষই পদযাত্রায় শামিল ছিলেন। ছিলেন মহিলারা। ছিলেন খেতমজুররা। ছিলেন গরিব কৃষকরাও। অসংগঠিত শ্রমিকরাও ছিলেন। 
গত প্রায় এক বছর একশো দিনের প্রকল্পে কাজ নেই ঝাড়গ্রামের কোথাও। অনুর্বর জমি, জলের অভাব কৃষির বড় বাধা। ফলে চাষেও কাজ নেই। চন্দ্রী, সাপধরা, নেদাবহড়া, শালবনীর এলাকাগুলি থেকে অনেক যুবক কাজের খোঁজে চলে গেছেন সংলগ্ন ওডিশা কিংবা ঝাড়খণ্ডে। এরই মধ্যে চলেছে তৃণমূলের দেদার চুরি। আদিবাসীদের অনেক হস্টেল বন্ধ। স্কুলছুট অনেক ছাত্র। এই সব সমস্যার সমাধান দাবি করে জঙ্গলমহলের এই গ্রামগুলিতে পদযাত্রার প্রস্তুতি চলছে। চন্দ্রীর সোমবারের পদযাত্রাতেও এই দাবিগুলিই স্লোগানে ধ্বনিত হয়েছে। 
পাঁচ শহীদের গ্রাম মোড়াইখুটি থেকে এদিন পদযাত্রা শুরু হয়। ১৬ কিমি সেই পদযাত্রার পথে পড়েছে ধানশোল, হরিনা, পেটবিন্দি, ধানঘোরীর মতো ৭টি মৌজা। মৌজাগুলিতে এখনেও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া ৫১টি বসত বাড়ির ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সদস্যরা ছিলেন এদিনের পদযাত্রায়। ফুলসুন্দর মৌজার পুলিন বেরা, পেটবিন্দি মৌজার দুর্গা রানা, ধানঘোরী মৌজার রামচরণ কিসকু এমন একাধিক মানুষ বলেন আজ তারা নিঃস্ব। 
পুজোর আগে ভুলাভেদা মৌজায় অনাহারে অপুষ্টিজনিত অসুখে মারা যায় এক পরিযায়ী শ্রমিক। তিন বছর আগে লালগড়ের পূর্ণাপানিতে এমনই কারণে এগারো জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। অপুষ্টিজনিত অসুখে আক্রান্ত জেলার ৩৫ হাজার নারী পুরুষ। সিভিয়ার অ্যা কিউট ম্যাল নিউট্রেশনে আক্রান্ত ৮শিশুর হদিশ পাওয়া গেছে। ক্ষমতায় এসে বনাঞ্চলের রসদ সংগ্রহে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বনভূমির অধিকার কেড়ে নেয় তৃণমূল। এখন পাথর নুড়ি সংগ্রহেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। এক ঝুড়ি সাদা পাথর ২৫টাকা। সারাদিন ঘাম ঝরিয়ে রোজগার মাত্র ১৭০/১৮০ টাকা হতো। তড়ার পাথর, ডুংরির পাথর, খেতের আলের পাথর কুড়িয়ে এনে ভেঙে সাইজ করে দিলেই ঝুড়ি প্রতি ২৫ টাকা পেতেন।  পাথর ব্যবসায়ীরা আসে, গাড়ি বোঝাই করে, নগদে নিয়ে চলে যায়। প্রান্তিক মানুষদের, যাদের কোনও কাজ নেই তাদের জন্য পাথর ভাঙার কাজ ছিলই। হাতে নগদ পেয়েই নুন তেল চাল এমন রসদ পাশাপাশি দু’চার পিস ডিমও জোগাড় করতে পারতেন। আজ সেই  মুখের গ্রাসটুকুও কেড়ে নিয়েছে তৃণমূলের সরকার।
এদিন ১৬ কিমি রাস্তায় চারটি পথসভা হয়। বক্তব্য রাখেন কৃষকনেতা প্রদীপ সরকার, দিবাকর হাঁসদা, শ্রমিকনেতা পার্থ যাদব, প্রশান্ত দাস, খেতমজুর নেতা ব্যোমকেশ সিংহ প্রমুখ। 
 

Comments :0

Login to leave a comment