রাজ্যের উত্তর অংশকে ভেঙে বিজেপি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করতে চাইছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। শুক্রবার আলিপুরদুয়ারের প্যারেড গ্রাউন্ডে সিপিআই(এম)’র ডাকা জনসমাবেশে রাজ্য ভাগের চক্রান্তের বিরুদ্ধে মানুষকে সজাগ হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেছেন, পৌরসভার মতো ছোট ছোট রাজ্য বানিয়ে কেন্দ্রের আমলা দিয়ে শাসনের চক্রান্ত করেছে বিজেপি। জম্মু ও কাশ্মীরকে যেভাবে ভেঙে টুকরো করে সেখানকার মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, সেভাবেই সীমান্তবর্তী এলাকায় ছোট কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করতে চাইছে। মমতা ব্যানার্জি মানুষের ভোট লুট করে সরকার চালাচ্ছে, আর মোদী রাজ্যগুলির সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে সব ক্ষমতা নিজেদের কবজায় রাখতে চাইছে।
তিনি বলেছেন, কাশ্মীর, বিহার, ঝাড়খণ্ড, কোথাও আলাদা রাজ্য করে মানুষের কোনও সুবিধা হয়নি। মুখে রাজবংশী, আদিবাসীদের কথা বললেও উত্তরবঙ্গের মানুষের স্বার্থে বিজেপি কিছুই করতে চাইছে না, এখানে একটা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করতে চাইছে। পৃথিবীর সব জায়গায় দক্ষিণপন্থীরা এভাবেই ক্ষমতা কায়েম করে রাখতে চায়। আরএসএস মনে করে সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রচুর মুসলমান আছেন, আদিবাসী, নেপালী, রাজবংশী আছেন, তাঁদের কাউকে বিশ্বাস করা যায় না। এই এলাকা শাসন করতে বসাতে চায় কেন্দ্রের পুতুল কোনও আমলাকে। এর জন্যই ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার দোভালকে পাঠানো হয়েছিল। এর পরামর্শেই জম্মু ও কাশ্মীরকে ভাগ করা হয়েছে। এবার পশ্চিমবঙ্গ ভাঙার চক্রান্ত হচ্ছে। এই চক্রান্ত রুখতে লাল ঝান্ডার নিচে সব মানুষকে সমবেত করতে হবে। তৃণমূল রাজ্য ভাগ ঠেকাবে না, তৃণমূলের নেত্রীর একটাই লক্ষ্য আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতকে সন্তুষ্ট করে ভাইপোকে বাঁচানো আর নিজের জেল যাত্রা থেকে রক্ষা পাওয়া।
এদিন আলিপুরদুয়ারে সিপিআই(এম)’র ডাকে বিরাট মিছিল বের হয়। মহম্মদ সেলিম ও অলকেশ দাস সহ মিছিলে নেতৃত্ব দেন পার্টির জেলা নেতৃবৃন্দ। তারপরে জনসভায় সেলিম বলেন, তৃণমূল আর বিজেপি দুটো দলই আসলে বেচারাম। ওদের একজন দেশ বেচছে, আরেক জন রাজ্য বেচছে। দেশ ও রাজ্য বাঁচাতে পারবে একমাত্র লাল ঝান্ডা। তেভাগা আন্দোলন থেকে চা বাগান শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লড়াই সবই হয়েছে লাল ঝান্ডা হাতে ধরে।
সেলিম বলেন, রাজ্য সরকার কার্নিভাল, মেলা খেলা করে সাধারণ মানুষের নজর ঘোরাতে চাইছে। যোগ্য শিক্ষক পদপ্রার্থীরা রাস্তায় আন্দোলন করছেন। নির্লজ্জ রাজ্য সরকার পুলিশ দিয়ে ওদের পেটাচ্ছিল, জেলে পুরছিল, এখন তো সরকারের পুলিশ কামড়েও দিচ্ছে। মহম্মদ সেলিম এদিন বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টকে হটাতে মমতা ব্যানার্জি বিজেপি’র মদতে কংগ্রেস ভেঙে নতুন দল গড়েছিলেন। আর সেই দলের প্রতীক পেতে বিজেপি নেতা আদবানি নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছিলেন। বিজেপি আর তৃণমূল দুটো দলেরই টিকি বাঁধা আছে নাগপুরে। এই কারণেই মোদী-মমতা একই সুরে গান গায়।
এদিনের ভিড়ে ঠাসা সমাবেশে সেলিম আরও বলেন, গত ১২ বছরে রাজ্যে শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে এটা ভাবার কোনও কারণ নেই। স্বাস্থ্য থেকে সেচ, বন থেকে খাদ্য সব দপ্তরেই নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। পুলিশে নিয়োগেও দুর্নীতি করতে পিছপা হয়নি তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীরা। আমরা চাই ইডি, সিবিআই দুর্নীতির মাথা কালীঘাটে হানা দিক। কিন্তু লুটের টাকার হদিশ পেতে মানুষ যখন কালীঘাটের টালির চালের নিচে কী আছে জানতে চাইছে, তখন বিজেপি বলছে কুতুব মিনার তাজমহলের নিচে কী আছে সেটা দেখা হোক।
এদিনের সমাবেশে পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জিয়াউল আলম বলেন, রাজ্যে কাজ নেই, আলিপুরদুয়ার জেলার ১৫ শতাংশ মানুষ ভিন রাজ্যে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। চা বাগানগুলি ধ্বংসের মুখে। বামফ্রন্ট শাসিত কেরালায় চা বাগান শ্রমিক ৪২৫ টাকা মজুরি পান, তামিলনাড়ুর শ্রমিকরা পান ৪২৮ টাকা। আর বিজেপি শাসিত আসাম ও তৃণমূল শাসিত এরাজ্যের শ্রমিকরা মজুরি পান মাত্র ২৩২ টাকা। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ভুটান লাগোয়া ডুয়ার্সের ২৫টি বাগান বিপন্ন। যথেচ্ছ ডলোমাইট তোলা ও ভুটানের কেমিক্যাল কারখানার দূষিত রাসায়নিক মিশছে পাহাড়ি নদীতে। এসবের সাথে জড়িয়ে আছে রাজ্যের শাসক দলের নেতারা। ওদিকে মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন চা বাগানের ১৫ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করতে। চা বাগানের জমি অধিগ্রহণ করতে এলে আদিবাসী শ্রমিকরা সরকারকে উপযুক্ত জবাব দেবে।
সিপিআই(এম) নেতা অলকেশ দাসও সমাবেশে ভাষণ দেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পার্টির আলিপুরদুয়ার জেলা সম্পাদক কিশোর দাস। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আলিপুরদুয়ার আলাদা জেলা হয়েছে। অথচ জেলার উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়া হয়নি আজও। ২৫ দফা দাবিতে জেলার ৩৫ হাজার মানুষের স্বাক্ষর সম্বলিত ডেপুটেশন জেলা শাসকের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে। সেই দাবি আদায়ের জন্যই এই সমাবেশ। উন্নয়নের কোনও চিহ্ন নেই জেলা জুড়ে। সরকার হাত গুটিয়ে বসে থাকলে দাবি আদায়ে আরও বড় আন্দোলন শুরু হবে।
Comments :0