গ্রামবাংলায় পদযাত্রার ওপরে আক্রমণ হলে তা মানুষকে সমবেত করেই প্রতিহত করা হবে বলে জানালেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। রবিবার বহরমপুরে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, লড়াইতে যখন নেমেছি, আক্রমণ হলে তা প্রতিহতও করতে হবে। তৃণমূল সব জায়গায় বাধা দিতে পারছে না, কিছু জায়গায় অস্ত্র নিয়ে চেষ্টা করছে। বগটুইয়ের পরে মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করা হবে, তিনি যে মিথ্যাচার করেছেন তা বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু এখন মানুষের মেজাজ তৃণমূল এবং পুলিশকে বুঝতে হবে। মানুষের বিক্ষোভ আক্রমণ করে আটকানো যাবে না। আমরা প্রত্যাঘাত করতে বলছি না, কিন্তু মানুষের সমাবেশের মধ্য দিয়েই আক্রমণ রুখতে হবে।
গ্রামে গ্রামে লাল ঝান্ডা হাতে পদযাত্রায় সাড়ার উল্লেখ করে সেলিম বলেছেন, মানুষের জীবন জীবিকার দুর্দশা চলছে গ্রামে। কৃষিতে সমস্যা, বেকারি, লকডাউনের পর থেকে ক্ষুদ্র শিল্পও বিপদে। গোদের ওপরে বিষফোড়ার মতো দুর্নীতি চেপে বসেছে। এসবের প্রতিবাদে নিবিড় ভূমিস্তরে পদযাত্রা শুরু হয়েছে। মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন হচ্ছে। এতে ব্যাপক সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে। মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে, যাঁরা ধোঁকা খেয়েছিলেন তাঁরাও ফিরে আসছেন। বিজেপি এবং তৃণমূলের প্রতি মোহ ভাঙছে। তৃণমূল এখন আর নিজের দলের নামে প্রকাশ্য সভাও করতে পারছে না। দুমাস ধরে তৃণমূল বাজার থেকে হাওয়া। ‘খেলা হবে’ বলে চেঁচালেও রাস্তায় নামতে পারেনি। উৎসবের নাম করে সরকারি টাকায় মঞ্চ থেকে ভাষণ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্যদিকে হকের দাবিতে, ইনসাফের দাবিতে, চোরদের হাত থেকে পঞ্চায়েতকে মানুষের হাতে ফেরাতে মানুষ রাস্তায় নামছেন।
সেলিম বলেছেন, বোমা ফাটলে মুখ্যমন্ত্রী বাজি বলে দায় এড়াতে চাইছেন। বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে অশান্তি থাকবে না। যেখানে বোমা বিস্ফোরণে সাধারণ মানুষ, নিরীহ শিশু আহত নিহত হচ্ছে সেখানে পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? পুলিশকে বলব, আইন সংবিধান মেনে চলো, তৃণমূলের দালালি ছাড়ো।
রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ দেওয়া নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, সরকার ডিএ নিয়ে মিথ্যাচার করছে। সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে বলছে টাকা নেই, আর দুর্গাপুজোর সময়ে দুমাস ধরে কার্নিভাল করেছে। আর্থিক সঙ্কট তো আছেই। কিন্তু দানছত্র খুলে ক্লাবগুলোকে টাকা দেওয়ার সময় মনে ছিল না? কেন্দ্র ও রাজ্য দুই পক্ষ মিলেই দেনা করে চলেছে। এই দেনা আগামী প্রজন্মের ওপরে চাপিয়ে দিচ্ছেন। রাজ্য সরকার প্লেন পাইলট ভাড়া নিয়ে রেখেছে। বিধায়ক মন্ত্রীদের ভাতা সুযোগ সুবিধা যা বাড়িয়েছেন তা আগে কখনো বাড়েনি। আর্থিক সঙ্কট হলে লোকে জাঁকজমক বন্ধ করে, প্রয়োজনীয় ব্যয় কী কেউ বন্ধ করে? রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা সরকারের এই বেয়াদপি মানবে না।
ওয়াকফ বোর্ড দুর্নীতি নিয়ে মহম্মদ সেলিম বলেন, আমরা প্রথম থেকেই বলছে ওয়াকফ বোর্ডে দুর্নীতি হচ্ছে। ওয়াকফের সম্পত্তি পৌরসভা, পঞ্চায়েত, তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রী, এমএলএ ওয়াকফ বোর্ডের লোকজন মিলে লুট করছে। নিলাম হচ্ছে। দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল যেখানে হাত দিচ্ছে সেখানেই দুর্নীতিতে ভরিয়ে দিচ্ছে।
মুর্শিদাবাদ মালদহের নদী ভাঙনের প্রসঙ্গে সেলিম বলেছেন, ভাঙন রোধের জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার কোনো ব্যবস্থা করেনি। আমরা বামপন্থীরা কেন্দ্রের কাছে, ফারাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের কাছে বারে বারে দাবি করেছি। মোদী সরকার সব টাকা বেনারসে নিয়ে গিয়ে খরচ করছে, তার বাইরে যে দেশ আছে সেটা ওরা ভুলিয়ে দিচ্ছে। তৃণমূলও কখনো বিধানসভায় ও লোকসভায় এই নিয়ে কোনও কথা বলে না। ভাঙন রোধের জন্য যে টাকা আসছে সেই টাকাতেও কোনও কাজ হচ্ছে না। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কোনও ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা ভাঙন কবলিতদের দাবি নিয়ে আন্দোলন আরও তীব্র করব।
Comments :0