কোনও রক্ষাকবচেই তৃণমূলের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের আর রক্ষা করা যাবে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনরোষের উল্লেখ করে রবিবার একথা বলেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
এদিন কলকাতার টালিগঞ্জের নেতাজীনগর নারকেলবাগান অঞ্চলে সিপিআই(এম) টালিগঞ্জ ২নং এরিয়া কমিটির উদ্যোগে প্রয়াত কমরেড প্রশান্ত শূরের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত রক্তদান শিবিরের উদ্বোধন করে তিনি বলেছেন, তৃণমূলকে বাঁচাবে এমন কবচ কই? এমন দল যার মন্ত্রী, বিধায়ক পর্যন্ত জেলে, যে দলের নেতাদের লুট অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষ অসন্তোষে ফেটে পড়ে তাড়া করছে, তাদের রক্ষা করবে কোন কবচ? ইতিহাসে যুদ্ধের সময় অস্ত্রের হাত থেকে শরীরের অংশকে রক্ষা করতে ধাতব কবচের আবরণ ব্যবহার হতো।
কিন্তু তৃণমূলের সর্বাঙ্গ যেভাবে দুর্নীতিতে ভরে গেছে তাতে রক্ষা পাওয়ার মতো কবচ মেলা ভার।
আধুনিক টালিগঞ্জের অন্যতম রূপকার কমরেড প্রশান্ত শূরের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে নেতাজীনগর নারকেলবাগান অঞ্চলে এদিন সকালে রক্তদান শিবিরটি অনুষ্ঠিত হয়। অস্থায়ী আচ্ছাদন টাঙিয়ে মোট ৬টি শয্যায় রক্তদাতাদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করেন বাঙ্গুর হাসপাতাল ব্লাড ব্যাঙ্কের স্বাস্থ্যকর্মীরা।
শিবিরে রক্ত দিয়েছেন মোট ১০৬ জন, তার মধ্যে ১৩ জন মহিলা। মহম্মদ সেলিম ছাড়াও সমাজের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন এই অনুষ্ঠানে। এলাকার বেশ কয়েকজন শহীদ পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন। ছিলেন তরুণ আইনজীবী ফিরদৌস শামিম, অভিনেত্রী মানসী সিনহা, অভিনেতা ও পরিচালক অভিজিৎ গুহ, প্রগতিশীল চিকিৎসক সংগঠক প্রদ্যোৎ শূর, প্রাক্তন ফুটবলার অমিতাভ মুখার্জি, সিপিআই(এম) নেতা শতরূপ ঘোষ, চয়ন ভট্টাচার্য, ফৈয়াজ আহমদ খান, সুব্রত দত্ত, সমিতা হরচৌধুরি, রোশন মণ্ডল সহ আরও অনেকেই। রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন পর্বে শহীদ স্মারক উদ্যানে মালা দেন মহম্মদ সেলিম। মাল্যদান করেন প্রশান্ত শূরের প্রতিকৃতিতেও।
উদ্বোধনের পরে ভাষণে সেলিম বলেন, এই টালিগঞ্জ এলাকা জুড়ে উদ্বাস্তু আন্দোলন, তাঁদের আশ্রয়ের সংস্থান, জীবনজীবিকা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থানের জন্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কমরেড প্রশান্ত শূর। এলাকার প্রবীণ প্রজন্ম তো বটেই এমনকি নতুন প্রজন্মের মানুষজনও তা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন, শাসক দল ভুলিয়ে দিতে চাইলেও পারেনি। সাতের দশকের সন্ত্রাস ও তার বিরুদ্ধে রক্ত ঝরানো লড়াই আন্দোলনের ইতিহাস স্মরণে রেখে আজকের দিনের জন্য তার থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে অত্যাচারী শেষ কথা বলে না, আজকের অত্যাচারী তৃণমূলও শেষ কথা বলবে না। গ্রামে গ্রামে শহর ও শহরতলিতে চোখ রাখলেই দেখা যাচ্ছে মানুষ ওদের শঠতা বুঝতে পারছেন। তাই তৃণমূল নেতারা দিদির দূত সেজে গেলেই তাড়া খাচ্ছেন সর্বত্র। কবচ বা বর্ম পরে আর বাঁচা যাবে না জনরোষের হাত থেকে। মানুষ জেগে উঠেছেন নিজেদের অধিকার ফিরে পেতে।
তিনি বলেন, মানুষের প্রতিবাদ ও জনরোষ দেখে আতঙ্কিত তৃণমূল এবং বিজেপি রাম রহিমের নাম করে মানুষকে ভাগ করতে চাইছে। অন্যদিকে আমরা বামপন্থীরা রামের রক্তে রহিমকে, আর রহিমের রক্তে রামকে বাঁচাতেই রক্তদান শিবিরের মতো সামাজিক উদ্যোগ চালাচ্ছি। সব মানুষের কাছে গিয়ে তাঁদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে এবং বোঝাতে হবে যে জীবনজীবিকার দুর্দশা ঘোঁচাতে, লুট দুর্নীতি ঠেকাতে বামপন্থীদেরই শক্তিশালী করতে হবে। তৃণমূল আর বিজেপি মানুষকে রক্ষা করবে না।
Comments :0