Capitalism

ধান্দার ধনতন্ত্র: একটি অর্থনৈতিক স্ট্র্যাটেজি

জাতীয় বিশেষ বিভাগ

প্রভাত পট্টনায়েক

একথা প্রায়শই সঠিকভাবে বলা হয় যে মোদি সরকারের অর্থনৈতিক নীতি গরীব মানুষের স্বার্থের প্রতি চূড়ান্ত রকমের নিষ্ঠুর, এবং তা তার বন্ধুদেরস্বার্থসিদ্ধির প্রতি নিবেদিত। একথাও সত্যি যে ভারতীয় ষ্টেট ব্যাংক (SBI) ও ভারতীয় জীবন বীমা নিগমের (LIC) মতো রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক সংস্থাগুলির সম্পদকে বেসরকারি আর্থিক সাম্রাজ্য নির্মাণ করার কাজে ব্যবহার করা হয়। সরকারের এরূপ কার্যকলাপ প্রায়ই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। এটাও সত্যি যে গরীব মানুষের কল্যাণের জন্য ব্যয় হ্রাস করে বৃহৎ পুঁজিকে যে কর ছাড় দেওয়া হয়েছে, তার বে-আব্রু শ্রেণি-পক্ষপাত এতই ন্যক্কারজনক, যে এমনকি অন্যান্য বুর্জোয়া সরকাগুলিও শ্রেণিস্বার্থে অনুরূপ পদক্ষেপ এত খোলাখুলিভাবে নিতে দ্বিধাবোধ করবে। তোষামুদেপণারএ এক বিরল উদাহরণ শুধু নয় এ হল এক বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ তোষামুদেপণাঅথবা ধান্ধাবাজিযেখানে ধান্ধাকে রাষ্ট্রগড়ার কাজে লাগানো হয়। সেই রাষ্ট্র হচ্ছে সংখ্যাগুরুর রাষ্ট্র’, সংক্ষেপে হিন্দু রাষ্ট্র।  

 

এটা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ যে তার বিরুদ্ধে হিন্ডেনবার্গ জালিয়াতির যে অভিযোগ তুলেছে, গৌতম আদানি সে সম্পর্কে বলেছেন, তার বিরুদ্ধে এই আক্রমণ আসলে হচ্ছে ভারতীয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ। এই ঘটনার মাত্র কিছুদিন আগেই মোদির ওপরে তৈরি বিবিসির ডকুমেন্টারি ছবিটিকে সরকারের তরফ থেকে এই বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে ছবিটা এক ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রতিফলন এবং ফলত ছবিটিকে ভারত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ হিসেবে গণ্য করতে হবে। মোদি যেভাবে নিজেকে রাষ্ট্রের মূর্তরূপ হিশেবে প্রচার করেন, সেই একইভাবে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে আদানির পক্ষে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আক্রমণেরই শামিল বলার সাহস হত না, যদি আদানি নিশ্চিত না-হতেন যে মোদি তার বক্তব্যের সঙ্গে সহমত হবেন। অর্থাৎ মোদি ও আদানি উভয়েই নিজেদের রাষ্ট্রের-ই মূর্তরূপ হিসেবে মনে করেন। কর্পোরেট-হিন্দুত্ববাদের জোটের অন্তঃস্থলে রয়েছে মোদি-আদানির মৈত্রী। তাদের উভয়ের ধারণায় এটাই আদতে হচ্ছে রাষ্ট্র। এ থেকে এই ধারণা প্রতিষ্ঠা পায় যে, আবহমান কাল ধরে মোদি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে বিরাজমান থেকে গেলে এবং আদানি অর্থনীতির দুনিয়ায় চিরকাল পত্রপুষ্পে বিকশিত হতে থাকলেই রাষ্ট্রের সৌভাগ্য দেদীপ্যমান হতে থাকবে। অন্যথা দেশের সর্বনাশ।

মোদির মতাদর্শ যুক্তি-বুদ্ধির ঠিক এই উলটো পথে হাঁটে। এই মতাদর্শ মেনে নিলে মোদি-আদানি মাণিকজোড়কে কখনই এই বলে অভিযুক্ত করা যাবে না যে তারা অনৈতিক ও অন্যায় কাজে লিপ্ত, কারণ তারা যাই করুন না কেন, সেই কাজ তারা কার্যত দেশের স্বার্থেই করেছেন, এবং কে না জানে দেশের স্বার্থই সর্বাগ্রগণ্য। কেবল দেশ-বিরোধীও দেশের শত্রুরাই একমাত্র এ কথার বিরোধিতা করে। জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলে আদানির এই আত্মরক্ষার কৌশলকে বে-আব্রু করে হিন্ডেনবার্গ বলেছে, কোনো জালিয়াত জাতীয় পতাকার আড়ালে লুকিয়ে তার জালিয়াতিকে ঢেকে রাখতে পারে না। জাতীয় স্বার্থকে যদি স্বাধীনভাবে এবং বস্তুগত দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করা হয় তাহলে হিন্ডেনবার্গের যুক্তির অকাট্যতাকে স্বীকার করতে হবে। কিন্তু একথা যদি মেনে নেওয়া হয় যে মোদি-আদানি মাণিকজোড়ের স্বার্থই জাতির স্বার্থের সমতুল, তাহলে হিন্ডেনবার্গের অভিযোগের কোন সারবত্তা নেই।

একথা প্রায়শই সঠিকভাবে বলা হয় যে মোদি সরকারের অর্থনৈতিক নীতি গরীব মানুষের স্বার্থের প্রতি চূড়ান্ত রকমের নিষ্ঠুর, এবং তা তার বন্ধুদেরস্বার্থসিদ্ধির প্রতি নিবেদিত। একথাও সত্যি যে ভারতীয় ষ্টেট ব্যাংক (SBI) ও ভারতীয় জীবন বীমা নিগমের (LIC) মতো রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক সংস্থাগুলির সম্পদকে বেসরকারি আর্থিক সাম্রাজ্য নির্মাণ করার কাজে ব্যবহার করা হয়। সরকারের এরূপ কার্যকলাপ প্রায়ই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। এটাও সত্যি যে গরীব মানুষের কল্যাণের জন্য ব্যয় হ্রাস করে বৃহৎ পুঁজিকে যে কর ছাড় দেওয়া হয়েছে, তার বে-আব্রু শ্রেণি-পক্ষপাত এতই ন্যক্কারজনক, যে এমনকি অন্যান্য বুর্জোয়া সরকাগুলিও শ্রেণিস্বার্থে অনুরূপ পদক্ষেপ এত খোলাখুলিভাবে নিতে দ্বিধাবোধ করবে। তোষামুদেপণারএ এক বিরল উদাহরণ শুধু নয় এ হল এক বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ তোষামুদেপণাঅথবা ধান্ধাবাজিযেখানে ধান্ধাকে রাষ্ট্রগড়ার কাজে লাগানো হয়। সেই রাষ্ট্র হচ্ছে সংখ্যাগুরুর রাষ্ট্র’, সংক্ষেপে হিন্দু রাষ্ট্র।

  ধান্ধার ধনতন্ত্রবলতে সাধারণভাবে বোঝায় বাছাই করা কিছু অনুগ্রহপ্রার্থী পুঁজিপতিদের সম্পদ বৃদ্ধির বিকৃত ও অবৈধ প্রচেষ্টা। সকলেই এই প্রচেষ্টাকে অন্যায় বলে স্বীকার করে ,তবুও হয় কোনো দায়বদ্ধহীনতার জন্য, নতুবা এইরকম প্রচেষ্টা যথেষ্ট চুপিচুপি করা হচ্ছে এই ধারণার বশবর্তী হয়ে এই ধরনের হীন প্রচেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু মোদির জমানায় এই বিকৃত, অন্যায় ও হীন উদ্যোগকে অর্থনৈতিক ষ্ট্র্যাটেজির স্তরে উন্নীত করা হয়েছে এবং জাতীয় স্বার্থেপরিপূর্ণ আস্থার সঙ্গে এই নীতি প্রকাশ্যভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে।

কেউ কেউ মনে করছেন দক্ষিণ কোরিয়ায় জ্যাবলস (chaebols, দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার দ্রুত শিল্পায়নের জন্য বৃহৎ কর্পোরেট সংস্থাগুলি, যথা স্যামসাং, হুন্ডাই, এলজি ইত্যাদিকে প্রোৎসাহিত করেছিল)-এর মতো মোদি সরকারও আদানি আম্বানিদের প্রোৎসাহিত করছে। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়া ও যুদ্ধোত্তর জাপানে শিল্পপতিদের প্রোৎসাহনের সরকারি নীতির সাথে মোদির উদ্বাহু হয়ে তোষামুদে বন্ধুদের তোষণ করার মধ্যে একটি মৌলিক তফাৎ রয়েছে। উল্লিখিত দেশগুলিতে একগুচ্ছ সরকারী দপ্তর একচেটিয়া সংস্থাগুলির সাথে নানা স্তরে যোগাযোগ রক্ষা করে চলত, তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় এবং শিল্পকে বিভিন্ন শাখায় বিস্তৃত করার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করে চলত। সংক্ষেপে, এটি ছিল এক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা। ভারতের ক্ষেত্রে সেই ধরনের কোন প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার নামগন্ধও নেই, রয়েছে কেবল সুপ্রীমোর সাথে পুঁজিপতির ঘনিষ্ঠ আঁতাত। এই আঁতাতের প্রভাবে ঐ পুঁজিপতির জন্য সরকারি,  ও আর্থিক নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলির বন্ধ দরজা অবলীলায় খুলে যায়। 

ভারতের সাথে এই ক্ষেত্রে নাৎসি জার্মানিরও তফাৎ রয়েছে। সে সময়ের জার্মানিতে শাসক দলের বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সংস্থাগুলির ঘনিষ্ঠ আঁতাত ছিল। যুদ্ধের আগে প্রত্যেক নাৎসি নেতার সাথে কয়েকটি করে বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের দহরম-মহরম ছিল এবং এই আঁতাত নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে পারস্পারিক রেষারেষিও ছিল। যখন শাসক চক্রের মধ্যে সেই নেতার প্রভাব  হ্রাস পেত, তার অনুগত প্রতিষ্ঠানগুলিও প্রতিযোগিতায় পরাজিত হত। সিনেমা পরিচালক লুকিনো ভিসকনত্তি (Luchino Visconti)-র চলচ্চিত্র The Damned-এ এরূপ ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। (যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে অবশ্য বিভিন্ন ইউনিটের উৎপাদনের মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজন হল এবং প্রত্যেককেই উৎপাদনের নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হত। এজন্য পূর্বপরিকল্পনার প্রয়োজন  হয়ে পড়ে।)। সুতরাং দেখা যাচ্ছে জার্মানির থেকে ভারতের রাজনীতি-পুঁজিপতি সম্পর্কটা সম্পূর্ণ পৃথক। এখানে একজন অবিসংবাদিত নেতার সঙ্গে এক নির্দিষ্ট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ঘনিষ্ঠ আঁতাত রয়েছে এবং সেই প্রতিষ্ঠানটির অভূতপূর্ব বৃদ্ধি ঘটেছে। ফ্যাসিস্ট অথবা ফ্যাসিস্টতুল্য সরকারের জমানায় সরকারি নেতৃত্বের সঙ্গে বৃহৎ কর্পোরেট পুঁজির আঁতাত একটি সাধারণ ঘটনা  বটে, যেজন্য মুসোলিনি ফ্যাসিবাদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে নাকি বলেছিলেন ফ্যাসিবাদ হচ্ছে রাষ্ট্রের সঙ্গে কর্পোরেটের মিলন। এই সামগ্রিক ছবিটার মধ্যে ভারতে এরূপ আঁতাত বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।

যাইহোক, পুঁজিবাদের চরিত্র এমনই যে কয়েকজন বৃহৎ কর্পোরেটের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ আঁতাত পুঁজিবাদকে সম্পূর্ণভাবে নিজেদের ইচ্ছাধীন করতে পারে না। যদি কোনো দেশের পুঁজিবাদকে একটি পরিসরে সম্পূর্ণ আবদ্ধ করে রাখা সম্ভব হয়, তবে তর্কের খাতিরে মেনে নেওয়া যায় যে ওই পরিসরের মধ্যে পুঁজিবাদের স্বতস্ফূর্ত চরিত্রের কারণে রাজনীতিক-কর্পোরেট আঁতাতের হুকুমদারী অপ্রতিহত চলতে পারে। কিন্তু এইভাবে পুঁজিবাদকে কর্ডন করে রাখা কষ্টকর তো বটেই, উপরন্তু বর্তমানে বিশ্বায়িত ব্যবস্থার কাঠামোর মধ্যে তা একপ্রকার অসম্ভব। কারণ প্রথমত, বাণিজ্য-গোষ্ঠীটি দেশের আভ্যন্তরীণ বাজারে সীমাবদ্ধ থাকতে অনিচ্ছুক হবে, কারণ তাহলে প্রতিযোগিতার দৌড়ে অন্যান্য বাণিজ্য-গোষ্ঠীর কাছে তার পরাজিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এরূপ অবস্থায় অন্যরা তাকে গিলে ফেলার আশঙ্কা বেড়ে যায়। রাজনৈতিক প্রভুর স্নেহচ্ছায়ার আচ্ছাদনের বাইরে বেরিয়ে এসে আন্তর্জাতিক আঙিনায় পা দেওয়ার মুহূর্ত থেকেই তার বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের যাবতীয় খুঁটিনাটি অন্যান্য গোষ্ঠীগুলির পর্যবেক্ষণের আওতায় চলে আসে। এবার তাকে লড়তে হবে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়, যেখানে পুঁজিবাদী বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠিত রীতিনীতির বিন্দুমাত্র লঙ্ঘন সকলের অনুসন্ধানী চোখের সামনে বে-আব্রু হয়ে পড়বে শুধু নয়, তার ওপরে নেমে আসতে পারে শাস্তির খাঁড়া। এমনটা ঘটে এই কারণে নয় যে প্রতিষ্ঠিত নিয়মরীতির প্রতি কর্পোরেট খেলোয়ারদের অগাধ শ্রদ্ধা আছে, বরং এই কারণে যে বিভিন্ন বাণিজ্যিক গোষ্ঠীর মধ্যে খেয়োখেয়ি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা বর্তমান।

আদানির ক্ষেত্রে ঠিক এটাই ঘটেছে।

রাষ্ট্রের হস্তপ্রসারিত সহায়তার দাক্ষিণ্যে আমাদের আলোচ্য বাণিজ্যিক গোষ্ঠীটি হয়তো এযাত্রায় রক্ষা পেয়ে যেতে পারে। কিন্তু গোষ্ঠীটির যাবতীয় জালিয়াতি ও কারচুপির কাণ্ড-কারখানা আন্তর্জাতিক মতামত’-এর শ্যেনদৃষ্টির কবলে পড়লে এরূপ সহায়তা প্রদান কঠিন হয়ে পড়ে। জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ কুক্ষিগত করার ঘটনায় ভারতীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি যদি প্রভুকে তুষ্ট করার জন্য চোখ বুজে থাকে এবং যথোচিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না-করে, তাহলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলি এদেশের আর্থিক শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণের বেহাল অবস্থা দেখে আতঙ্কিত হয়ে এদেশে তাদের বিনিয়োগ রক্ষার স্বার্থে হাত গুটিয়ে নেবে এবং ভারতের বিদেশি মুদ্রার উৎসগুলি শুকিয়ে যাবে। এই অবস্থায় চলতি খাতে পাওনা মিটিয়ে দেওয়াটা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়বে। সেই পরিস্থিতিতে আদানিকে রাষ্ট্রের সহায়তা প্রদান অসম্ভব হয়ে পড়বে। 

যদি আদানি এই যাত্রায় রক্ষা পায় ও বা, মোদি সরকারের অপরিমিত ধৃষ্টতার কিন্তু অবসান হবে। আদানির সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু না-করা অসম্ভব হয়ে পড়বে, কারণ তাহলে দুনিয়ার আর্থিক মহলের চোখে সরকারের অপদার্থতা প্রকট হয়ে উঠবে। একইভাবে সেই তদন্তে যদি আদানি নিষ্পাপ ও লিলি ফুলের মত শুভ্র প্রতিপন্ন হয়, তারও কোনো বৈধতা আন্তর্জাতিক আর্থিক মহলের কাছে মোটেই গ্রহণযোগ্য হবে না। সুতরাং নামেমাত্র হলেও আদানির কিছু শাস্তি পাওয়া অনিবার্য। এই ধান্ধাবাজের ওপরে যখন শাস্তির খাঁড়া নেমে আসবে, তখন প্রভুজী তার সাথে আগের মতো মাখামাখির সম্পর্ক রাখতে পারবে না এবং সরকারের পক্ষেও এই দাবি করা অসম্ভব হয়ে পড়বে যে মোদি-আদানি আঁতাতের দ্বারা, বকলমে কর্পোরেট-হিন্দুত্ব আঁতাতের দ্বারা দেশউপকৃত হয়েছে।

আদানিকে কেন্দ্র করে এই যাবতীয় কুনাট্য আন্তর্জাতিক লগ্নীপুঁজির সঙ্গে জাতি-রাষ্ট্রের দ্বন্দ্বকে, বা বলা ভালো হিন্দুজাতিরাষ্ট্রের দ্বন্দ্বকে প্রকট করে তুলেছে। একথা ভাবার কিন্তু কোনো কারণ নেই যে বিশ্বায়ন একটি সংশোধনী প্রক্রিয়া যেখানে কোনো শঠতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না, দ্বন্দ্বটি প্রকাশ্যে এসেছে কারণ বিশ্বায়নের যুগে পুঁজির মধ্যেকার প্রতিযোগিতা এমন একটি উচ্চ স্তরে সংঘটিত হয়, যা কোনো একটি দেশের পক্ষে অবহেলা করার উপায় থাকে না।

মূল প্রন্ধটি পিপলস ডেমোক্রেসি-র ০৬-১২ সংখ্যায় প্রকাশিত। তর্জমা- নন্দন রায়।

সৌজন্যে: https://marxbadipath.org/article/Business-Finance-An-Economic-Strategy/122

Comments :0

Login to leave a comment