PRESS TRUST OF INDIA

আরএসএস প্রভাবিত সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রসার ভারতীর চুক্তি

জাতীয়

PTI CENTRAL GOVERNMENT PRASAR BHARATI BENGALI NEWS

কেন্দ্রীয় সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান প্রসার ভারতী চুক্তি করল আরএসএস পরিচালিত ‘হিন্দুস্তান সমাচার’-র সঙ্গে। এর আগে দেশে পরিচিত সংবাদসংস্থা পিটিআই’র সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে প্রসার ভারতী। সরকারি প্রচারে রাখঢাক না রেখে আরএসএস’র মতাদর্শ প্রচারের রাস্তা পরিষ্কার করল বিজেপি সরকার।

দূরদর্শন এবং অল ইন্ডিয়া রেডিও নিয়ন্ত্রণ করে প্রসার ভারতীই। যা আবার নিয়ন্ত্রিত হয় কেন্দ্রীয় তথ্য এবং সম্প্রচার মন্ত্রক থেকে। এই সংস্থাগুলি স্বশাসিত হলেও ২০১৪ সালের পর থেকে এদের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি চলে গিয়েছে সরকার এবং বকলমে শাসক দলের হাতে। 

সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির প্রতিক্রিয়া, ‘‘২০২৪’র লোকসভা নির্বাচনের আগে খোলাখুলি সরকারি প্রচারমাধ্যম থেকে বিদ্বেষের প্রচার চলবে। তাকে ‘সংবাদ’ বলে দেখানো হবে। ’’

আরএসএস’র প্রধান মাধব সদাশিব গোলওয়ালকর সরাসরি ‘হিন্দুস্তান সমাচার’ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত। উগ্র হিন্দুত্ব সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতেই পরিচালিত হয় আরএসএস। যার রাজনৈতিক শাখা বিজেপি। 

ইংরেজি ওয়েবসাইট  ‘দি ওয়্যার’ প্রকাশিত সংবাদে এই তথ্য জানানো হয়। এবার থেকে ‘প্রসার ভারতী’ সংবাদের উৎস বা ‘নিউজ ফিড’ কিনবে হিন্দুস্তান সমাচারের থেকে। 

‘দি ওয়্যার’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি হিন্দুস্থান সমাচারের সঙ্গে ২ বছরের চুক্তি করেছে প্রসার ভারতী। আর পিটিআই’র সঙ্গে প্রসার ভারতীর চুক্তি বাতিল হয়েছে ২ বছর আগে। যদিও পিটিআই’র সঙ্গে চুক্তি থাকা অবস্থাতেই পরীক্ষা মূলক ভাবে হিন্দুস্থান সমাচারের থেকে খবর বা ‘নিউজ ফিড’ সংগ্রহ করত প্রসার ভারতী। যদিও প্রসার ভারতীর তৎকালীন আধিকারিকদের বক্তব্য, সেই সময় হিন্দুস্থান সমাচার বিনামূল্যে ফিড সরবরাহ করত। 

‘দি ওয়্যার’র  প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, হিন্দুস্থান সমাচারের সঙ্গে ২০২৫ সালের মার্চ মাস অবধি খবর সরবরাহের চুক্তি করেছে প্রসার ভারতী। এরফলে সরকারী কোষাগারের খরচ পড়বে ৭.৭ কোটি টাকা। চুক্তি অনুযায়ী, দৈনিক ১০০টি খবরের ফিড প্রসার ভারতীকে সরবরাহ করবে হিন্দুস্থান সমাচার। এরমধ্যে জাতীয় এবং আঞ্চলিক খবরের সংখ্যা যথাক্রমে ১০ এবং ৪০। 

১৯৪৮ সালে শিবরাম শঙ্কর আপটে’র হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় হিন্দুস্থান সমাচার। সাংবাদিক ছাড়াও আপটের অপর একটি পরিচয়ও রয়েছে। তিনি আরএসএস’র প্রচারক ছিলেন। একইসঙ্গে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতাও তিনি। হিন্দুস্থান সমাচারের ঘোষিত নীতি হল জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গীতে সংবাদ পরিবেশন করা। আগামী দিনে প্রসার ভারতীর মাধ্যমে দেশের মানুষ কোন ধারার খবর দেখবেন তা সহজেই অনুমেয়। 

হিন্দুস্থান সমাচার সম্পর্কে আরও একটি চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে ‘দি ওয়্যার’র  প্রতিবেদনে। ১৯৮৬ সালে অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় হিন্দুস্থান সমাচার। কিন্তু ২০০২ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের সময়কালে ফের আত্মপ্রকাশ করে হিন্দুস্থান সমাচার। আর ২০১৪ সালের পর থেকে এই সংবাদ প্রতিষ্ঠানকে ফিরে তাকাতে হয়নি। দিল্লির ঝান্ডেওয়ালা অঞ্চল থেকে সম্প্রতি হিন্দুস্থান সমাচারের দপ্তর সরে এসেছে নয়ডায়। 

অপরদিকে ২০১৬ সাল থেকেই পিটিআই’র সঙ্গে নানা আছিলায় সংঘাতে জড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রসার ভারতী। পিটিআই’র একাধিক আধিকারিক জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে পিটিআই’র সম্পাদকের পদ থেকে সরে দাঁড়ান এমকে রাজদান। তাঁর জায়গায় সরকারের পছন্দের সাংবাদিককে বসানোর জন্য কেন্দ্রের তরফে একাধিকবার পিটিআই’র বোর্ডকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়। কিন্তু তাতে কর্ণপাত না করেই রাজদানের জায়গায় বিজয় যোশীকে আনে পিটিআই’র এডিটোরিয়াল বোর্ড। 

এর পরবর্তীতে পিটিআই ভবন থেকে নিজেদের সদর কার্যালয় সরিয়ে নেয় প্রসার ভারতী। সরকারের তরফে সেই সময় দাবি করা হয়েছিল, ফিড এবং প্রসার ভারতী অফিসের ভাড়া হিসেবে অত্যধিক অর্থ দাবি করছে পিটিআই। 

এরপরেও কোনওক্রমে দুইপক্ষের মধ্যে সম্পর্ক টিকে ছিল। সেই বন্ধন পুরোপুরি ছিন্ন হয় ২০২০ সালে। ‘দি ওয়্যার’র দাবি, ২০২০ সালে লাদাখে চিনের অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে পিটিআই। সেই প্রতিবেদনে লাদাখ অনুপ্রবেশের বিষয়ে চিনের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যও ছিল। অপরদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি ছিল, ভারতের এক ছটাক জমিও চিন দখল করতে পারেনি। কিন্তু পিটিআই’র প্রতিবেদন প্রকাশের পরেই সরকারের মিথ্যাচার স্পষ্ট হয়। তার একপ্রকার আক্রোশেই পিটিআই’র সঙ্গে চুক্তি রদ করে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। 

পিটিআই’র বদলে  তুলনায় অখ্যাত হিন্দুস্থান সমাচারের সঙ্গে চুক্তি করার নেপথ্যে আরও একটি বিষয় তুলে ধরছে ওয়াকিবহাল মহল। তাঁদের যুক্তি, ভারতীয় সংবাদ সংস্থাগুলির মধ্যে পিটিআইতে কর্মরত সাংবাদিকের সংখ্যা সর্বাধিক। তারপরেও তাঁদের বদলে হিন্দুস্থান সমাচারের মতো তুলনায় অতিক্ষুদ্র সংবাদ প্রতিষ্ঠানকে বেছে নিয়ে আসলে উগ্র জাতীয়তাবাদী সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলিকে সদর্থক বার্তা দিতে চেয়েছে। আগামীদিনে আরও এই ধরণের সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করবে কেন্দ্র। এটা তারই ইঙ্গিত। 

Comments :0

Login to leave a comment