রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০৩০ সাল অবধি যদি ক্রমাগত ২০ শতাংশ হারে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে জৈব গ্যাসের ব্যবহার বাড়ানো যায়, তাহলে ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাশ্রয় করবে ভারতীয় অর্থনীতি। প্রসঙ্গত, প্রতি বছর বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণে প্রাকৃতিক জ্বালানী গ্যাস আমদানি করে ভারত।
আইইইএফএ’র রিপোর্ট বলছে, আর্থিক সাশ্রয়ের পাশাপাশি জৈব গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে বর্জ্য নিষ্কাশন সংক্রান্ত সমস্যাও অনেকটা কমানো যাবে। গবেষক দলের অন্যতম সদস্য পূর্বা জৈন জানাচ্ছেন, ‘‘প্রাকৃতিক গ্যাস সহ অন্যান্য জীবাস্ম জ্বালানীর বিকল্প হয়ে ওঠার সম্ভবনা রয়েছে জৈব গ্যাসের। জীবাস্ম জ্বালানীর ফলে পরিবেশে কার্বোন ডাই অক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইডের মত দূষণকারী পদার্থের সৃষ্টি হয়। এই পদার্থগুলির ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু জৈব গ্যাসের ব্যবহার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক নয়। বরং জৈব গ্যাসে মিথেনের পরিমাণ ৯০ শতাংশ অবধি বৃদ্ধি করে প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিপূরক তৈরি সম্ভব।’’
গবেষকরা জানাচ্ছেন, মিথেনযুক্ত জৈবগ্যাসকে জৈব মিথেন বলা হয়। পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ প্রক্রিয়ায় এটিকে যুক্ত করা সম্ভব। জীবাস্ম জ্বালানীর সমস্ত গুণ মজুত রয়েছে জৈব মিথেনে।
এত সুফল থাকলেও ভারতবর্ষে জৈব গ্যাস কিংবা জৈব মিথেনকে এখনও জনপ্রিয় করা সম্ভব হয়নি। জনপ্রিয় না হওয়ার বেশ কিছু কারণও খুঁজে বের করেছে আইইইএফএ’র রিপোর্ট। গবেষকরা জানাচ্ছেন, জৈব গ্যাসের বাজার তৈরি হয় এখনও। এই গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রেও গাফিলতি রয়েছে। সরকারের তরফেও এই জ্বালানীকে জনপ্রিয় করার কাঙ্খিত উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
রিপোর্টে বলা হচ্ছে, নতুন এই জ্বালানীর সম্পূর্ণ সুফল পেতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ক্ষেত্র এবং বেসরকারি ক্ষেত্র- উভয়কেই সামিল করতে হবে জৈব গ্যাসের উৎপাদনে।
যদিও রিপোর্টে একটি বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, ব্রাজিলের মত জৈব গ্যাসের মূল উপাদান হিসেবে ভারতেও যেন জ্বালানী ফসলের চাষ না শুরু হয়। জ্বালানী ফসলের চাষ শুরু হলে জমি ব্যবহারের চরিত্র বদলে যাবে। একইসঙ্গে সেই প্রক্রিয়ায় কার্বন নির্গমনের মাত্রাও বৃদ্ধি পাবে। এক কথায় হিতে বিপরীত হবে তখন।
প্রসঙ্গত, ব্রাজিল কিংবা ইন্দোনেশিয়ার মত দেশগুলিতে ইথানল এবং বায়ো ডিজেল তৈরিতে জ্বালানী ফসল ব্যবহার করা হয়। জ্বালানী ফসলের চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় ধ্বংস করা হয়েছে আমাজন অরণ্য। আগাম সতর্কতা না নিলে ভারতেও একই পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জোর দিচ্ছেন, বর্জ্য পদার্থ থেকেই জৈব গ্যাস তৈরির উপরে।
Comments :0