Supreme Court

আগামীকাল ফের ওয়াকফ শুনানি সুপ্রিম কোর্টে

জাতীয়

সংশোধনী ওয়াকফ আইনে অন্তবর্তী স্থগিতাদেশ দিল না সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চের পক্ষ থেকে আগামীকাল ফের এই বিষয় সংক্রান্ত মামলা শুনবে সুপ্রিম কোর্ট। 
ওয়াকফ সংশোধনী নিয়ে একাধিক পিটিশন জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টে। সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও পিটিশন জমা দিয়েছেন। সব পিটিশনকে একত্রিত করে এদিন মামলার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। মামলাকারিদের পক্ষ থেকে আইনজীবী কপিল সিব্বাল দাবি করেন, ওয়াকফ সলশোধনী আইনের ফলে সংবিধানের ২৬ নম্বর ধারা লঙ্ঘিত হচ্ছে। সিব্বাল দাবি করেন এই নতুন আইনের মাধ্যমে জেলা শাসকের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে ওয়াকফ সম্পত্তিকে কেন্দ্র করে, যা সংবিধানের ২৬ নম্বর ধারা বিরোধী।
সিব্বালের এই যুক্তির পাল্টা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথন বলেন, ‘‘সংবিধানের ২৬ নম্বর ধারায় যা লেখা, তার সঙ্গে ধর্মীয় আচারকে মিলিয়ে দেওয়া যাবে না।’’
উল্লেখ্য ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনে সীমাবদ্ধতা ছিল না। কিন্তু নতুন ওয়াকফ সংশোধনী আইনে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘‘সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আমরা বলতে পারি না যে, নিয়ন্ত্রণ করলেই তা অসাংবিধানিক।’’
সরকারের পক্ষ থেকে আইনজীবী এসজি মেহতা বলেন, যৌথ সংসদীয় কমিটিতে বৈঠকের পাশাপাশি বিভিন্ন মতামত নেওয়ার পর লোকসভায় আলোচনার পর এই বিল পাশ করানো হয়েছে। 
তবে এদিন প্রধান বিচারপতি এই বিলে জেলা শাসকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষন ‘‘জেলাশাসক যদি সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেন যে, কোনটা ওয়াকফ, কোনটা নয়, তা কি ঠিক হবে?’’
১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনের যে সংশোধনী মোদী সংসদে পাস করিয়েছে তাকে ভারতের সংবিধান প্রদত্ত ধর্মীয় অধিকারের ওপরে আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন সেলিম। গতকাল সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেছেন, প্রতিটি ধর্মের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অধিকার দেওয়া হয়েছে সংবিধানে। আজকে মুসলিমদের ধর্মীয় অধিকারে আঘাত হানা সফল হলে কাল শিখদের অধিকারে, তারপরে আদিবাসীদের অধিকারে আক্রমণ হবে। সরকার সব জমি সম্পদ কেড়ে নিয়ে বেসরকারি হাতে দিয়ে মানিটাইজেশন করতে চাইছে। কেন্দ্রীয় সরকারের রেল বিমানবন্দর চালাতে পারছে না, বেসরকারি কোম্পানির হাতে তুলে দিচ্ছে। রাজ্য সরকার ট্রাম চালাতে পারছে না, ট্রামের জমি প্রোমোটারদের দিচ্ছে। যেগুলো সরকারের চালানোর কথা সেগুলো বেসরকারি হাতে দিচ্ছে, আর ধর্মীয় যে বিষয়গুলি অসরকারি পরিচালনায় থাকার কথা সেগুলি চালাতে চাইছে? উলটো কাজ? ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনার বদলে সরকার হাসপাতাল আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পরিচালনায় নজর দিক। সংবিধান নাগরিকদের ধর্মবিশ্বাস অনুসারে যা পরিচালনার অধিকার দিয়েছে তাতে হস্তক্ষেপ চলবে না।
সেলিম বলেন, ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে দুর্নীতি বন্ধের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু বিজেপি এবং এরাজ্যের তৃণমূল কেউই তাতে উৎসাহী নয়। ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনের পরে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারই প্রথম ওয়াকফ ট্রাইবুনাল করে ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে দুর্নীতি বন্ধে উদ্যোগ নিয়েছিল। অন্য রাজ্যে বিজেপি এবং এরাজ্যে তৃণমূল নেতারা সরকারে এসে একের পর এক ওয়াকফ সম্পত্তি দখল করেছে, নাম পালটেছে। এখন ওয়াকফ আইনের সংশোধনীর নামে বিভাজনের রাজনীতির জন্য সাম্প্রদায়িক উসকানিতে নেমেছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এখন মুখে বিরোধিতার কথা বললেও ওয়াকফ সংশোধনী বিল সংসদে পাস হওয়ার সময়ে দলের সব সাংসদকে বিরুদ্ধে ভোটদানের জন্য হাজির করাতে পারেননি কেন সেটার জবাব দিন।

Comments :0

Login to leave a comment