নোটিশ জারি করেই ক্ষান্ত হয়নি, এবার অমর্ত্য সেনের বাড়ি ‘প্রতিচী’র দেওয়ালে সেই নোটিশ সাঁটিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার বিশ্বভারতীর রেজিস্ট্রারের তরফ থেকে একটি নোটিস জারি করা হয়েছিল। বিশ্বভারতীর শুনানিতে উপস্থিত না থাকার জন্য অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে ‘কড়া পদক্ষেপ’ নিতে চলেছে বিশ্বভারতী বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। আগামী ১৯ তারিখ বেলা ১২টা নাগাদ ১৯৭১ সালের দখলদার উচ্ছেদ আইন অনুযায়ী ওই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই মর্মে অমর্ত্যের আইনজীবীকে ইমেলে নোটিস পাঠিয়েছিলেন বিশ্বভারতীর রেজিস্ট্রার।
কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ গত মাসের ২৯ তারিখ অমর্ত্যকে শুনানির জন্য ডেকেছিলেন। কিন্তু তিনি উকিল মারফত সময় চেয়েছিলেন। আইন অনুযায়ী ৭ দিনের বেশি সময় দেওয়া যায় না। যতটা সম্ভব সময় দেওয়া হয়েছে। তাই আগামী ১৯ এপ্রিল ‘কড়া সিদ্ধান্ত’ নেওয়া হবে বলে ঠিক করা হয়েছে। এমনটাই লেখা হয়েছে ওই নোটিসে। সেই নোটিশই শুক্রবার অমর্ত্য সেনের বাড়ির দেওয়ালে সাঁটানো হয়েছে বিশ্বভারতীর তরফে। যা ঘিরে ফের আরও এক প্রস্থ সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিশ্বভারতীতে।
নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের এ ‘প্রতিচী’ বাড়ির ১৩ ডেসিমেল জমি নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে তুলেছে বিশ্বভারতী। বিশ্বভারতীর দাবি, অমর্ত্য সেনের পরিবারের ইজারা পাওয়া ১.৩৮ একর জমির মধ্যে ১৩ ডেসিমেল জমি বেদখল করে রেখেছেন অর্থনীতিবিদ। এই অভিযোগ তুলে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ৪টি চিঠি দিয়ে জমি ফেরতও চেয়েছে। এমনকি, একাধিকবার ভারতরত্ন অমর্ত্য সেনকে বেনজির আক্রমণ করতে দেখা গিয়েছে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। পরবর্তীতে অমর্ত্য সেনের প্রয়াত পিতা আশুতোষ সেনের উইল অনুযায়ী আবেদনের ভিত্তিতে বোলপুর ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর ১.৩৮ একর জমিই অমর্ত্য সেনের নামে জমি রেকর্ড করে দেয়। এরপরেই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে চিঠি দেয়। সেই চিঠি মারফৎ সশরীরে নোবেল জয়ীকে হাজিরা দিতেও বলে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। অমর্ত্য সেনের আইনজীবি প্রথমে চার মাস, পরে তিন মাস সময় চেয়ে চিঠি দেয় বিশ্বভারতীকে। কিন্তু তাতে কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করে নি বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে অমর্ত্য সেনের আইনজীবি গোরাচাঁদ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘‘যেহেতু অমর্ত্য সেন দেশের বাইরে আছেন।জুন মাসে ফিরবেন। তাই তাঁর অবর্তমানে প্রয়োজনীয় নথিপত্র ও অমর্ত্য সেনের কি বক্তব্য তা সরাসরি পাওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা দু দফায় বিশ্বভারতীর কাছে দরখাস্ত করেছিলাম। প্রথমে চারমাস, পরে তিনমাস সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ দশদিনের সময় দেওয়ার তা আর বর্ধিত করেনি। ১৩ এপ্রিল শুনানীর দিন ধার্য করেছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় নথিপত্র না নিয়ে সেই শুনানিতে যাওয়ার কোনো অর্থ নেই। তাই আমরা যাই নি। অপরদিকে প্রতিচী বাড়ি দেখভালের দায়িত্বে থাকা গীতিকন্ঠ মজুমদারের কানে এসেছে যে অমর্ত্য সেনের জমি নিয়ে বিশ্বভারতী কোনও চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে পারে। সেই কারনে যেকোনও বিশৃঙখলার আশঙ্কা থেকে গীতিকন্ঠবাবু এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দরখাস্ত করেছেন এলাকায় শান্তি শৃঙখলা রক্ষার আবেদন জানিয়ে।’’ সিআরপিসি’র ১৪৫ নং ধারা অনুযায়ী বোলপুর মহকুমা শাসক অয়ন নাথের আদালতে সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অমর্ত্য সেনের বাড়ি চত্ত্বরে যাতে কোনরূপ শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত না হয় তারজন্য শান্তিনিকেতন থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন বোলপুর মহকুমা শাসক।
Comments :0