পাচার হওয়ার আগে প্রায় এক কেজি সোনা উদ্ধার হল জলপাইগুড়ির জাতীয় সড়ক থেকে। কোতোয়ালি থানার পুলিশ ও সদর ট্র্যাাফিক পুলিশের তৎপরতায় সোনা সহ গ্রেফতার ভিন রাজ্যের দুই যুবক। জলপাইগুড়ি জাতীয় সড়কের গোশালা মোড়ে তল্লাশি করতে বের হয়ে আসে ১৪টি সোনার বিস্কুট। গাড়ির চালক বাপি রায়ের সাহায্যে সোনা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে দাবি পুলিশের। শনিবার সকালে ধুপগুড়ির গাড়ি চালক বাপি রায়ের গাড়ি ভাড়া করেছিল অপরিচিত দুই যুবক ধুপগুড়ি থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার জন্য৷ মাঝে বাপীকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেওয়া হয় বলে দাবি। বাপী জানায়, দুই যুবকের পকেটে কিছু একটা ছিল তাতেই সন্দেহ হয়। এরপর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে গোশালা মোড়ে গাড়িটি আটক করে পুলিশ৷ এদিন কোতোয়ালি থানার আইসি অর্ঘ্য সরকার, সদর ট্র্যাটফিক ওসি বাপ্পা সাহার উপস্থিতিতে তল্লাশি করে ১৪টি সোনার বিস্কুট উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে সোনার পরিমান এক কেজি ছয়শো গ্রাম।জলপাইগুড়ি সোনা পাচারের ধৃত দুই যুবকের নাম রাহুল কোডান, সৌরভ মিন্ডে দুজনেই মহারাষ্ট্রের সাংলি জেলার বাসিন্দা। পিছনের সিটে দুই যাত্রীর কথাবার্তায় সন্দেহ হয় চালকের, সুযোগ বুঝে ঠান্ডা মাথায় সোনা পাচারের ‘পর্দা ফাঁস’ করেন চালক।অভিযোগ, ওই সোনা নিয়ে কলকাতায় যাবার পরিকল্পনা ছিল দুই যুবকের।
গাড়ি চালালেও উপস্থিত বুদ্ধি ও ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার জোরেই বাপি রায় এক কোটি টাকার সোনা-সহ দুই পাচারকারীকে ধরিয়ে দেন পুলিশের হাতে। জানা গেছে শনিবার বেলার দিকে দুই যুবক ধূপগুড়ি বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়েছিলেন। এরপর তাঁরা শিলিগুড়ি যাওয়ার জন্য স্থানীয় বাসিন্দা বাপি রায়ের চার চাকার গাড়ি ভাড়া করেন। গাড়িতে ওঠার পর থেকেই দুই যুবকের কথোপকথন সন্দেহজনক মনে হচ্ছিল বাপির। তাঁর মনে হচ্ছিল, দুই যুবকের সঙ্গে এমন কিছু রয়েছে যা অস্বাভাবিক। এর জন্য বড় কোনও ঝামেলায় পড়ার আশঙ্কাও করেন বাপি।
এদিকে গাড়িতে যাত্রী তুলে তো আর সরাসরি সন্দেহ কিংবা আশঙ্কার কথা প্রকাশ করা যায় না। কিন্তু দুই যুবকের অস্বাভাবিক আচরণ এবং অসংলগ্ন কথাবার্তা শুনে চালকের সন্দেহ জোরাল হয়। এরপরই পেট্রোল ভরার অছিলায় স্থানীয় একটি পেট্রোল পাম্পে ঢোকেন গাড়ি নিয়ে। এরপরই পেট্রোল পাম্পের শৌচালয়ে গিয়ে বাপি তাঁর পরিচিত এক পুলিশ আধিকারিককে ফোন করেন। তিনি আবার জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার ওসি ট্রাফিকের দায়িত্বে রয়েছেন। সেই পুলিশ আধিকারিকই জানান ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের গোশালা মোড় এলাকায় গাড়ি আটক করবে পুলিশ।
গোশালা মোড় আসতেই অপেক্ষায় ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। পুলিশ দেখেই গাড়ি থামিয়ে দেন চালক। এরপর পুলিশ গিয়ে গাড়ি তল্লাশি করতেই বেরিয়ে আসে একের পর এক সোনার বিস্কুট। ১৪টি সোনার বিস্কুট-সহ দুই পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার আইসি অর্ঘ্য সরকার। পৌঁছন পুলিশের অন্যান্য আধিকারিকরা।
ডাকা হয় স্বর্ণকার। তিনি এসে কষ্টিপাথরে ঘষে সোনা যাচাই করেন। গাড়ির চালক বাপি রায় বলেন, “আমার প্রথমেই সন্দেহ হয়েছিল। ভরদুপুরে এই রোদের মধ্যে কেন দু’জন জ্যাকেট পরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। মাঝে রাস্তায় ধাবায় নেমেছিলেন চা খেতে। একজনকে দেখি বারবার জ্যাকেটটা টানছেন। ময়নাগুড়ি পেট্রোল পাম্পে দাঁড়াই। দাঁড়ানোর পর তেল ভরি। সেখান থেকেই পুলিশকে ফোনে জানাই। এরপরই হাইওয়েতে গোশালার মোড়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে চেকিং হয়। উদ্ধার হয় সোনা। পুলিশ এসে দেখে ১৪ পিস সোনার বিস্কুট রয়েছে এদের সঙ্গে।”
একইসঙ্গে বাপির অভিযোগ, “পেট্রোল ভরার জন্য পাম্পে দাঁড়ালে দু’জন আমাকে বলেন আড়াই হাজার টাকার পেট্রোল ভরতে। আমি জানতে চাই এত টাকার পেট্রোলে কী হবে? ওনারা বলেন, আমাকে ৩ হাজার টাকা দেবেন, শিলিগুড়ি নয় কলকাতা নিয়ে যেতে হবে। তখনই আমার সন্দেহ দৃঢ় হয়। তারপরই পুলিশ আধিকারিক বাপ্পা সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করি। উনি বলেন গোশালা মোড়ে গাড়ি আটক করবেন। এরপর আমি গাড়ি নিয়ে আসলে গোশালা মোড়ে পুলিশ দেখে গাড়ি থামিয়ে দিই। এই ৪০ মিনিট আমার বুকের ভিতর যেন উথাল পাথাল চলছিল।”
Comments :0