Adenovirus Child Died

আরও ৫ শিশুর মৃত্যু পরিকাঠামোর অভাবে হাহাকার হাসপাতালে

রাজ্য

Adenovirus Child Died

 

 ‘আমি আর বাড়ি গিয়ে কী করবো, কাকে নিয়ে থাকব, এখানে আমার সন্তানটাকে মেরে ফেলল’-  ক্রমাগত কেঁদে কেঁদে এই একটি কথাই বলছিলেন এক অসহায় মা। বুক ফাটা আর্তনাদ করে বারে বারে আছড়ে পড়ছিলেন মাটিতে। কলকাতার বিসি রায় হাসপাতাল চত্ত্বরে ওই পরিবারের অন্যান্যরা তখন স্তব্ধ বসে, পাথরের মতো। 
সোমবার সকালের এই বিয়োগান্ত দৃশ্যও যেন ম্লান হয়ে গেল এই হাসপাতালেরই আরেকটি ছবিতে। অসুস্থ শিশুকে বুকে আগলে নিয়ে চলেছেন মা, শিশুটির স্যালাইন চলছে। স্যালাইনের বোতল ধরে আছেন পরিবারের আরেকজন। পাশে আরেকজনের কাঁধে একটি অক্সিজেনের সিলিন্ডার। সেই সিলিন্ডারের নলের একপ্রান্ত লাগানো রয়েছে শিশুটির মুখে। বিসি রায় হাসপাতাল চত্ত্বরের ভেতর এক বিভাগ থেকে ছুটে আর এক বিভাগে যাচ্ছিলেন তাঁরা। কিন্তু কেন? তাহলে কি এত গালভরা প্রচারের পরেও অক্সিজেন সরবরাহ বা উপযুক্ত চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব রয়েছে বিসি রায় হাসপাতালের মত বড় শিশু হাসপাতালেও? উঠছে প্রশ্ন। 
এই বিসি রায় শিশু হাসপাতালে দাঁড়িয়েই চিকিৎসাধীন এক শিশুর পিতাকে বলতে শোনা গেল, প্রতিদিনই ৩-৪টি করে মৃত শিশুকে বাইরে বের করা হচ্ছে, ক্রিটিক্যাল বেড মিলছে না অনেক শিশুরই, আর কত মৃত্যু দেখতে হবে? অথচ রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের বক্তব্য অ্যাডিনো সংক্রমণ কমেছে! শুধু তাই নয়, বলা হচ্ছে পর্যাপ্ত বেড ও  চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে হাসপাতালগুলিতে, টাস্ক ফোর্স নজরদারি রেখেছে। এদিকে রবিবার সন্ধ্যা থেকে সোমবারের মধ্যে বিসি রায় শিশু হাসপাতালে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ৪টি শিশুর মৃত্যুর খবর মিলেছে।  অন্যদিকে কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে আরও ১ শিশুর মৃত্যুর খবর এসেছে। অর্থাৎ গত ২৪ ঘন্টায় রাজ্যে ৫ টি শিশু মারা গেছে বলে জানা গেছে।
ওদিকে উত্তরবঙ্গেও থাবা বসিয়েছে অ্যাডিনো ভাইরাস, মিলছে শিশু মৃত্যুর খবর। রবিবার সকালে কলকাতার বিসি রায় শিশু হাসপাতালে দেগঙ্গার বাসিন্দা এক ১০ মাসের শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রবিবার সন্ধ্যায় এবং রাতে বনগাঁ এবং বাদুরিয়ার বাসিন্দা ২টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বিসি রায় শিশু হাসপাতালে। ওই দিন গভীর রাতেও এই হাসপাতালে একটি শিশু মারা গেছে, তার পরিচয় জানা যায়নি। 
অন্যদিকে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগে কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক ৪ মাসের শিশু মারা গেছে। রবিবার সন্ধ্যায় ভর্তি করা হয় শিশুটিকে। চরসরাটি মুরাতিপুরের বাসিন্দা রঞ্জিত সরকার নামে এই শিশুটি জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে  হাসপাতালে ভর্তি হয়। সোমবার শিশুটির শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হয়, পরে মারা যায় শিশুটি। এই ঘটনায় চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে পরিবার। মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে হাসপাতালের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া উত্তরবঙ্গেও থাবা বসিয়েছে অ্যাডিনো ভাইরাস, বাড়ছে ফুসফুস সংক্রমণের ঘটনা। কয়েকটি নমুনায় অ্যাডিনো মিলেছে। তবে উত্তরবঙ্গে অ্যাডিনো শনাক্তকরণের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তেমন না থাকায় বহুক্ষেত্রেই অ্যাডিনো রিপোর্ট অধরা থেকে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে এআরআই, নিউমোনিয়া। অথচ নাইসেডের মতে এ রাজ্য অ্যাডিনো সংক্রমণে গোটা দেশে প্রথম স্থানে। শনিবার রাতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে জলপাইগুড়ির বাসিন্দা ৪ বছরের সোনিয়া পারভিন। জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিল সে, বেশ কিছুদিন ধরে চিকিৎসা চলছিল। তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়েছে নিউমোনিয়া। 
বিভিন্ন বেসরকারি সূত্রে গত আড়াই মাসে গোটা রাজ্যে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা অন্ততপক্ষে ১৪০। তারমধ্যে বহু শিশুর নমুনাতেই মিলেছে অ্যাডিনো ভাইরাসের উপস্থিতি। অথচ তা স্বীকার করতে নারাজ রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। ডেথ সার্টিফিকেটে হামেশা নিউমোনিয়া লিখে দেওয়া হচ্ছে হাসপাতাল থেকে। যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সেহেতু রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর সরকারিভাবে এখনও মৃত্যু সংখ্যা সেই ১৯-এই আটকে রেখে রেখেছে। হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জাম ও পরিকাঠামো নিয়ে নানা গালভরা কথা প্রচার করতে ছাড়েনি সরকারের গড়ে দেওয়া টাস্ক ফোর্স। কিন্তু বাস্তব চিত্র বোঝা যাচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতালে পা রাখলেই। নিত্যদিন হাহাকারে ভরছে বিসি রায় শিশু হাসপাতাল চত্ত্বর। স্বাস্থ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে পরিবারগুলির পক্ষ থেকে উঠছে ভূরি ভূরি অভিযোগ। একটি পরিসংখ্যান দিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, এপর্যন্ত গত আড়াই মাসে  ১২৩৪৩টি শিশু এআরআই কেস বা অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশনের শিকার হয়েছে। স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, অ্যাডিনো ভাইরাসে ১৯টি মৃত্যু হলেও তারমধ্যে ১৩টি মৃত্যুর ক্ষেত্রে কোমর্বিডিটিজ অর্থাৎ কম ওজন, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের সমস্যাকে দায়ী করেছে স্বাস্থ্য দপ্তর। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, হাসপাতাল পরিকাঠামোর উন্নয়নে যথা সময়ে জোর না দিয়ে পরে তথ্য গোপন করাই রাজ্য সরকারের রুটিন মাফিক কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment