DELHI BENGALI AADHAR

বাংলাভাষীদের হেনস্তা দিল্লিতে, ‘বাংলা মঞ্চ’-র চাপে পিছালো পুলিশ

জাতীয়

‘বাংলা মঞ্চ’-র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিবেকানন্দ ক্যাম্পের বাসিন্দারা।

অরূপ সেন, নয়াদিল্লি


বাস কয়েক দশকের। দিল্লির চাণক্য পুরীর বিবেকানন্দ ক্যাম্পে সব মিলিয়ে পরিবারের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। তার মধ্যে বাঙালি ৩০-৪০ ঘর। মুসলিম এই বাংলাভাষীদেরই কাছে বেছে বেছে চাওয়া হচ্ছিল আধার কার্ড। 
আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তেই বাসিন্দারা যোগাযোগও করেছিলেন দিল্লির ‘বাংলা মঞ্চ’-র সঙ্গে। সোমবার ‘বাংলা মঞ্চ’-র প্রতিনিধিরা সরাসরি দেখা করলেন চাণক্যপুরী থানার পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে। পুলিশকে আশ্বাস দিতে হলো যে বেছে বেছে কারও আধার নথি পরীক্ষা হবে না। হলে সকলেরই হবে। 
‘বাংলা মঞ্চ’-র সভাপতি সুস্মিতা বসু জানাচ্ছেন, ‘‘স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে যে এই বাসিন্দাদের প্রত্যেকেরই ঘর রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জের মতো বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে পরিবার। এঁরা বাংলাভাষী কিন্তু বাংলাদেশ থেকে আসেননি।’’
চাণক্যপুরীর আমেরিকান স্কুল এবং ব্রিটিশ স্কুলের মাঝে বিবেকানন্দ ক্যাম্পে বস্তি দীর্ঘদিনের। কেউ কেউ ৩০-৩৫ বছর রয়েছেন। ফলে বেশিরভাগেরই আধার কার্ডে দিল্লির ঠিকানা। আড়াই হাজার ঘরের বেশিরভাগ অবাঙালি। ৩০-৪০ ঘর বাঙালি। 
এই বস্তি এলাকার কাছেই রয়েছে পুলিশের একটি আউটপোস্ট। সেখান থেকেই নথি নেওয়ার তদ্বির শুরু হয়। বেছে বেছে বাঙালিদের থেকে আধার কার্ডের জেরক্স চাওয়ায় বাসিন্দাদের সন্দেহ হয় এর সঙ্গে যোগ রয়েছে সিএএ-এনআরসি’র। 
সুস্মিতা বসু বলেছেন, ‘‘আমরা একের পর এক ফোন পেতে শুরু করি। বাঙালি মুসলিম পরিবার বেছে বেছে কেন এই তৎপরতা তার ব্যাখ্যা পুলিশের কাছেও ছিল না। আতঙ্কে থাকা পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে সরাসরি থানায় যাওয়া হয়।’’
থানায় দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক ‘বাংলা মঞ্চ’-র প্রতিনিধিদের অভিযোগ শুনে জানান যে এমন নির্দেশ তিনি দেননি। তিনি জানান যে বেছে বেছে নয়। সব পরিবারেরই আধার কার্ডের জেরক্স নেওয়ার কথা। সংশ্লিষ্ট আধিকারককে নির্দেশ দেন যাতে বাছাই করে নথি পরীক্ষা না হয় তা দেখার। 
কিছুদিন আগে দিল্লির অদূরে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদে একটি বস্তি জ্বালিয়ে দেয় বজরঙ দলের মতো উগ্র হিন্দুত্ববাদী শক্তির লোকজন। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর বদলার নামে চলে হামলা। প্রতিবাদে ঝাঁপিয়ে পড়ে সিপিআই(এম)। সে কারণে বজরঙ দল আশ্রিত দুই দুষ্কৃতী আপাতত জেলে।  
পুলিশের বক্তব্য, এমন ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন বস্তি-ঝুপড়ির মতো অস্থায়ী আবাস এলাকায় নথি পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে কাউকে বেছে নিয়ে করার বিষয়, সকলেরই জন্য এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। তাছাড়া চাণক্যপুরী অত্যন্ত সুরক্ষিত এলাকা। সে কারণেও এই তৎপরতা। 
বিবেকানন্দ ক্যাম্পের ঘটনায় ফোনে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য এবং রাজ্যসভার প্রাক্তন সদস্য নীলোৎপল বসুও। পুলিশ তখন তাঁকেও ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। ‘বাংলা মঞ্চ’ বিষয়টি নিথে কথা বলে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের সঙ্গেও। তিনি রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ। ফলে এমন বহু পরিবারের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। 
সুস্মিতা বসু জানান যে সেলিম তাঁকে আশ্বাস দেন পরিবারগুলিকে বিপদে ফেলা হলে সিপিআই(এম) প্রতিরোধে নামবে। এদিন থানা যদিও ইতিবাচক ভূমিকাই নিয়েছে। এসএইচও জানিয়েছে যে এবার আধারের জেরক্স নেওয়ার পর আর বারবার গিয়ে কাউকে বিরক্ত করা হবে না। বিবেকানন্দ বস্তির সকলের থেকেই নেওয়া হবে নথি। ভাষা, ধর্মের বাছবিচার হবে না।

প্রতিনিধিদলে ছিলেন সুবীর ব্যানার্জি এবং সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেত্রী কিরণ তন্বীও। 

 

Comments :0

Login to leave a comment