কেন্দ্রীয় সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী পহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলাকারী জঙ্গিরা সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তান থেকে এসেছে। পর্যটকদের অনেকের ধর্মপরিচয় জেনে নিয়ে গুলি করে মেরেছে। অর্থাৎ ধর্মপরিচয়ে ইসলামি মৌলবাদী জঙ্গিরা খুন করেছে হিন্দু পর্যটকদের। দেশজুড়ে সংবাদ মাধ্যমে এই কথাই তুমুল প্রচার করছে সঙ্ঘ পরিবারের গেরুয়া বাহিনী, বিজেপি’র আইটি সেল এবং বিজেপি’র নেতা-মন্ত্রী-কর্মী-সমর্থকরা। একই সুরে সুর মেলাচ্ছে গোদী মিডিয়াও। কিন্তু মুসলিম জঙ্গিদের হাত থেকে হিন্দু পর্যটকদের রক্ষা করতে যে ঘোড়াওয়ালা মুসলিম যুবক সৈয়দ আদিল হুসেন শাহ ছুটে গিয়ে জঙ্গির হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নেবার চেষ্টা করেছিল এবং তার জন্য জঙ্গির গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল তার কথা তার আত্মবলিদানের কথা এই ধর্মপরিচয় ভিত্তিক প্রচারে নেই বললেই চলে। ধর্মীয় মৌলবাদী তা সে হিন্দুই হোক বা মুসলিম ধর্মীয় বিভাজনই তাদের লক্ষ্য। তাই পহেলগামে বিদেশি ইসলামিক জঙ্গিরা খুনের সময় ধর্মপরিচয় খোঁজার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আদিল হুসেন শাহ বিদেশিও নয় মৌলবাদী জঙ্গিও নয় তাই তার কাছে ধর্মপরিচয় অনাবশ্যক, মূল্যহীন। সে মানবতায় বিশ্বাস করে। চোখের সামনে নিরীহ মানুষের মৃত্যু সে মেনে নিতে পারেনি। জঙ্গিরা মুসলিম হলেও হিন্দু পর্যটকদের খুন করা সেই আটকাতে গিয়েছিল নিজের জীবনকে বাজি রেখে। মানবিক বিশ্বের কাছে আদিলই একটি অবিস্মরণীয় নাম। শুধু আদিল নয়, নাজাকত আহমেদ শাহ নামে আর এক মুসলিম যুবক গোলাগুলির মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছত্তিশগড়ের এক পর্যটকের স্ত্রী, কন্যাকে তুলে এনে নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বাঁচিয়েছিল। ঘটনাচক্রে এই পর্যটক বিজেপি’র কর্মী। নাজকত মুসলিম হয়েও তাদের ধর্মপরিচয় খোঁজেনি। মানুষ হিসাবেই দেখেছে। একজন মানুষ হিসাবেই বিপন্ন অন্য মানুষকে রক্ষা করতে নিজের জীবন বিপন্ন করে ঝাঁপিয়ে পড়তে দু’বার ভাবেনি। আদিল নাজাকতরা মুসলিম এবং কাশ্মীরি। তারা মৌলবাদী নয়, সন্ত্রাসবাদীও নয়। তারা মহান হৃদয়ের মানুষ। ধর্মপরিচয়ের বহু ঊর্ধ্বে তারা মহত্বের অধিকারী। হিন্দুর প্রাণ বাঁচাতে তারা মুসলিম মৌলবাদী জঙ্গির বন্দুকের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ায়।
পহেলগামের ঘটনার পর গোটা কাশ্মীরজুড়ে সর্বত্র হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে। মৌলবাদী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানিয়েছে। শান্তির-ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে মোমবাতি হাতে মিছিল করেছে। এদের প্রায় একশো ভাগ কাশ্মীরের মুসলিম। এরা প্রগতির পক্ষে, ঐক্যের পক্ষে, ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে। কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য অনুযায়ী কাশ্মীরে ৬০-৭০ জন জঙ্গি আছে। এদের বেশিটাই বিদেশি। কাশ্মীরের লক্ষ লক্ষ মুসলিম অধিবাসী জঙ্গি নয়। তাই বিদেশি জঙ্গিদের হামলার জন্য সমগ্র কাশ্মীরের মুসলিমদের কাঠগড়ায় তোলা বিপক্ষ মৌলবাদীদের কাজ। নানা অছিলায়ও নানা কৌশলে দেশে এই মৌলবাদীরাই ক্রমাগত অতি সক্রিয় হয়ে উঠছে। সঙ্ঘ পরিবারের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা এমন ঘৃণ্য মানসিকতাই বিজেপি’র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রধান পুঁজি। এই রাজনীতিই কয়েকজন জঙ্গির দায় গোটা মুসলিম সমাজের ওপর চাপিয়ে ঘৃণা ও বিদ্বেষের আগুন জ্বালাতে চায়। বিভাজনের রাজনীতির জন্য এটা তাদের কাছে অপরিহার্য। এর বিরুদ্ধতাই ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র
Editorial
আদিল-নাজাকতরাই ধর্মনিরপেক্ষতার মুখ

×
Comments :0