Argentina quarter final

অধরা মাধুরীর স্বপ্ন বেঁচে রইল

খেলা

আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস ম্যাচ নিয়ে লেখাটা এভাবে শুরু করতে চাই— লিওনেল মেসি খেললেন। খেলালেন। জেতালেন। কোয়ার্টার ফাইনাল জেতার পর মেসির অধরা মাধুরী ছোঁয়ার স্বপ্নটা বেঁচে রইল। মেসির ঝুলিতে নেই শুধু বিশ্বকাপটাই। সেই বিশ্বকাপ পাওয়ার দিকে মেসি একধাপ এগিয়ে গেল। 
টাইব্রেকারে ব্রাজিল হেরে যাওয়ায় ভীষণ খারাপ লেগেছিল। একইভাবে টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনা নেদারল্যান্ডসকে (৪-৩) হারানোয় অনেকটাই স্বস্তি পেয়েছি। আর্জেন্টিনা সহজে জেতা ম্যাচটা নিজেরাই কঠিন করে ফেলেছিল। দু’গোলে এগিয়ে থেকে দু’গোল খেয়ে ম্যাচটা টাইব্রেকারে চলে যায়। টাইব্রেকারে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমালিয়ানো মার্টিনেজ। যে দক্ষতায় তিনি প্রথম দু’টি শট বাঁচিয়েছেন। স্রেফ অনবদ্য। কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। মেসি যেমন একটি গোল করলেন। আর একটি করালেন। নেদারল্যান্ডসকে হারানোর পিছনে মেসির যতটা অবদান, ততটাই মার্টিনেজের। মেসি নিজে সেটা বুঝেছে বলেই, বাকি সতীর্থরা যখন লাউতারোর দিকে ছুটে গেল, লিও কিন্তু দিক পরিবর্তন করে প্রথমে অভিবাদন জানাতে ছুটলেন মার্টিনেজকে। আলিঙ্গন করলেনও। সত্যিকারের নেতার মতো একটা কাজ করলেন।
মেসি এই আর্জেন্টিনার দলটার সঙ্গে খুব একাত্ম হয়ে উঠেছে। সেটা এ ম্যাচটা দেখেও বোঝা গিয়েছে। বড্ড চার্জড আপ লাগছিল তাঁকে। রেফারির সঙ্গে তর্ক করতে দেখা গিয়েছিল। ম্যাচের পর পালটা বলতে ছুটে গিয়েছেন ডাচ কোচ লুইস ফান গালের দিকে। সতীর্থদের সঙ্গে লাফাচ্ছেন। গান গাইছেন। জাতীয় দলের হয়ে এর আগে মেসিকে খুব একটা দেখা যায়নি। মেসি উজ্জীবিত হয়ে নামছেন বলেই, বাকিরা শেষবিন্দু অবধি লড়ার তাগিদটা পাচ্ছে। আমার মনে হয়, এই বোঝাপড়াটা সাফল্য এনে দেবে আর্জেন্টিনাকে। আর একটা জিনিস আমি খেয়াল করেছি, মেসি নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে রোটেশনাল ফুটবলারের ভূমিকা পালন করেছে। মানে, এই ম্যাচে মেসির কোনও নির্দিষ্ট পজিশন ছিল না। লুসাইল স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচায় এলএম টেন অবাধ বিচরণ করেছেন। অতীতে রোটেশনাল ফুটবলারের ভূমিকা পালন করতে আমরা দেখতাম নেদারল্যান্ডসের রুড গুলিতকে। সারা মাঠ জুড়ে খেলতেন তিনি। মেসিও তাই করলেন। সর্বোপরি, জেতালেন দলকে। 
যে পাসটা দিয়ে মোলিনাকে গোল করালেন, ওরকম নিখুঁত পাস দেওয়াটা মেসির পক্ষে সম্ভব। অন্য যে কোনও ফুটবলারই কি করতেন, বলটা বাঁদিকে ফাঁকায় দাঁড়ানো ফুটবলারটিকে খেলাতেন। কিন্তু মেসির পেরিফেরাল ভিশন দুর্ধর্ষ! ঠিক দেখে নিয়েছিলেন অফ দ্য বল দৌড়ে বক্সে ঢুকছেন মোলিনা, তাঁর গায়ে এক ডিফেন্ডার লেগে থাকলেও সামনের জমিটা ফাঁকা ছিল। তাই মেসি থ্রু’টা মোলিনার উদ্দেশে বাড়িয়েছেন। মোলিনা মেসির পাসটা বুঝে গোল করেছেন, তাঁর জন্য প্রশংসা প্রাপ্য। মোলিনার প্রথম টাচটা ভালো ছিল বলেই গোলটা হয়েছে। আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গোলটা আসে পেনাল্টি থেকে। আকুনা যখন বক্সের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছেন, তখনই বাধা দেন নেদারল্যান্ডসের ডিফেন্ডারটি, রেফারির চোখ এড়ায়নি ফাউলটা। সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টি দিয়ে দেন। পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে মেসি পেনাল্টি মিস করেছিলেন। এবার আর করেননি। নোপার্টকে দাঁড় করিয়ে রেখে গোল করে যান। ৭৩ মিনিটে ২-০ এগিয়ে যায়। সবাই ধরে নিয়েছিল, ২-০ জিতে যাবে আর্জেন্টিনা। সেটা কিন্তু হতে দিলেন না ডাচ কোচ ফান গাল। তিনি কতটা সুদক্ষ কোচ বুঝিয়ে দিলেন। 
নেদারল্যান্ডস শুরু থেকে লং বল ফুটবল খেলার চেষ্টা করছিল, প্রথমার্ধে সেটা খুব একটা করতে পারেনি। কারণ, আর্জেন্টিনা দু’উইং সচল থাকায়। দ্বিতীয়ার্ধে পারল। বিরতির পর চারটি পরিবর্তন করেছিলেন দলে। মাঝমাঠে টিউন কোপমেইনার্স ও আক্রমণভাগে দু’জন লম্বা ফুটবলার লিউক ডি ইয়ং ও ওয়েগহোর্স্টকে খেলাটা বদলে দিলেন। আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনির বদলটা কাজে লাগেনি। আকুনা কিন্তু বাঁ প্রান্ত সচল রাখছিলেন। তাঁকে তুলে নেন। সেন্ট্রাল ডিফেন্সে ভালো খেলা ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোকেও তুলে নেন। ডি মারিয়াকে যদি নামিয়ে দিতেন দ্রুত, খেলাটা অতিরিক্ত সময় অবধি গড়ায় না। দু’টি বদলের পরই মাঝমাঠের দখল হারায় মেসিরা। নেদারল্যান্ডস লং বলে বাজিমাত করে। ৮৩ মিনিটে ফ্রিকিক থেকে হেডে ব্যবধান কমান ওয়েগহোর্স্ট। ১০১ মিনিটে ফ্রিকিক থেকে অবিশ্বাস্য গোল করলেন সেই ওয়েগহোর্স্ট। কোপমেইনার্স যে গড়িয়ে ফ্রিকিক মারবেন আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডাররা আন্দাজই করতে পারেননি। ২-২ সমতা ফেরায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। শেষ ১৫ মিনিট দি মারিয়া নামার পর আর্জেন্টিনা চাপ বাড়ালেও জয়সূচক গোলের দেখা মেলেনি। টাইব্রেকারে শেষ অবধি জেতে আর্জেন্টিনা। প্রসঙ্গত, ম্যাচের রেফারিং খুব বাজে হয়েছে। খেলার পর মেসিও এটা নিয়ে মুখ খুলেছেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment