মনীষ দেব
এক পয়সার তালপাতার ভেঁপু—দুই পয়সার তালপাতার সেপাই—তিন পয়সার রঙিন ঘূর্ণি নিয়ে চড়কের মেলা থেকে আর ফেরে
না শৈশব; কালের নিয়মে, কিন্তু জানবে না সে তার অতীত? তা যতই কুলমানহীন মলিন ঐতিহ্যই হোক? তবুও নববর্ষ; ছোটোলোকের নববর্ষ।
চণ্ডী চাড়াল চড়ক গাছের খুঁটিতে আর চক্কর খায় না গাজন বেলায়। চড়ায় আটকে পড়া ভাঙা ডিঙি নৌকায় বসে কষে জীবনেরে ধারাপাত
লাভ যা লোকসান শত গুণ! তবুও চৈত্র আসে—চড়ক আসে, শুধু আসেন না চাড়ালদের কালী-নাচের দল।
রমা কৈবর্ত-দিনু কৈবর্ত-যতন কৈবর্তদের জেলেপাড়ার সং আর আসে না—শামলা পড়ে নববর্ষের শহর মাতিয়ে দিতে
জীর্ণ চিলেকোঠার বারান্দায় বসে মিত্র বাবুমশাই আনমন বলে যায়—সে ছিল একদিন আমাদের যৌবনে কলকাতা।
নববর্ষ এখন চৈত্র সেলের শপিং মলে বন্দি। সেকেলে বটতলা এবং তার গোলাপি হলদে-মলাটের বই এখন অতীত। কলেজ স্ট্রিট বইপাড়া
এখন বইমেলার হুজুগে মত্ত। নববর্ষ আসে, নববর্ষ যায়—দেয়ালের দিনলিপি এখন আর বদলায় না, কারণ বাঙালির আজ আর বাংলা
দিনলিপির কোনও প্রয়োজনই পড়ে না। এখন চৈত্র-বৈশাখ, আশ্বিন-কার্তিক, শ্রাবণ-ভাদ্র'র কেউ তোয়াক্কাই করে না। উৎসব এখন বড়োলোকের
খেয়াল খুশি—পুঁজি আর মুনাফার বাজার দখল। আইসবারে আজকের শৈশবের কাছে পণ্য হয়ে যাওয়া পয়লা বৈশাখ তাই—BENGALI
NEW YEAR—BURGAR - PIZZA'র পৃথিবীতে, বাঙালির—উড়কি ধানের মুড়কি—শালি ধানের চিড়া—নানা রঙের রঙিন
মঠ মিষ্টি — পোড়া কাঁচা আমের শরবত—বরফকুচির রঙিন কাঠি আইসক্রিমেরা হয়তো ফিরবে না আর কোনোদিনই। তবুও সবুজ মাঠ,
আকাশ নীল, ঘন কালো কালবৈশাখী, সাদা বকের পাখা অপরাজেয়।
যে নতুন পাতারা পল্লবিত-কুসুমিত হবে আগামীর শাখায় শাখায়, তারা বাংলা জানুক, দেশ জানুক, খিদের পৃথিবী জানুক—এবং—
এবং—এবং—যে নতুন পাতারা শীর্ণ- জীর্ণ- মলিন- ধূসর; তাদের একটু উষ্ণতা দিক, চাই আনন্দ, চাই মুক্তি, চাই—
কচি কলাপাতায়—গরমভাত।
নববর্ষের -গরমভাত।
Comments :0