বইকথা
‘বাংলার ভূত ও ভূতনিদের সমালোচনা গান’ শিশুমনে একটি ভৌতিক চিত্রনাট্যের মায়াবী উপস্থাপনা।।
সৌরভ দত্ত
নতুনপাতা
ভূত নিয়ে বাঙালির কৌতূহলেরশেষ।শিশু মনের অবচেতনে ভূত সম্পর্কে ভয়ের শিহরন তৈরি করে দেয় বড়োরা। ভূত বলে আদৌও কিছু আছে কিনা সে সম্পর্কে অনেক সন্দিহান। অলৌকিক না লৌকিক এমন প্রশ্ন ও ওঠে ।ভয় পেলেই সেখানে ভূতের মায়াবী আস্তরণ তৈরি হয়।ভিড় করে নানা অলৌকিক কল্পনা।শিশুরা ভূতের গল্পের প্রতি আকর্ষিত হয় তুমুল ভাবে।ভয় পাবে জেনেও তারা কৌতূহল সহ সেইসব কথা কাহিনি মনযোগ দিয়ে শোনে। ভূত চতুর্দশী এর ভূতের আখ্যান সর্বজনবিদিত হলেও ভূতের আবিষ্কার মনশ্চক্ষে অলীক।দীপ্ত মুখোপাধ্যায় লিখেছেন–‘বাংলার ভূত ও ভূতনিদের সমালোচনার গান’ নামক সুন্দর একটি কবিতার বই।কবিতায় রয়েছে ভূত সম্পর্কিত নানা মিথ ও কথাবয়ন।প্রথম কবিতা ভূতের গান–‘আমাদের ভূতের মাথা কোথায়, কোন গাছের গর্তে’। যেখানে হারানো অতীত ও বিবিধ প্রশ্ন উঠে এসেছে।‘ভূতের ভয়’ কবিতার মধ্যে কবি বলেছেন–‘পশ্চিমের বাতাস, পূবের হয়তো/ বা আমাদের পালক ও পাতলা মাংস কাঁপায়’।‘ভূতের ভোজবাজি’ কবিতাতে ভৌতিক আবরণের কথা বলেছেন –‘বাকিরা উবে গেল যেন /ভৌতিক বাতাসে স্থান দুলতে থাকল।’ একটি অভিনব কবিতা সৃষ্ট হয়েছে‘ভূতের দ্বিতীয় কবিতা’ নামক কবিতাটি –‘ভূত চাইল, আজ রাতে কবিতা লিখবে/সে উত্তেজিত, অশান্ত সৃষ্টিভাবনায়।’‘ভূতের বন্ধুভাব–একটি ঘটনা’ কবিতায় শিশুর জাবানিতে ফুটে উঠেছে–‘এক সময় খেলতে গিয়ে আমরা নিজেদের ভুলে যাই।/আরে বাবা, ভূতেদেরও হাসি-মজা আছে/তোমাদের সঙ্গে বন্ধুভাব আছে!’ কবিতার মধ্যে ভূতেদের সাথে বন্ধুমিতালির ছবি ফুটে ওঠে। সমগ্র কবিতার বইয়ে ছড়িয়ে রয়েছে আশৈশব ভূতেদের প্রতি বাঙালির অদ্ভুত স্বীকারোক্তি। বইয়ের উঠে এসেছে ‘ভূতের কর্মসংস্কৃতি’-র কথা–‘কাজ আমাদের সমাজে এত ভালো জিনিস!’। ভূতেদের বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার মায়াবী উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে কবিতায়।ভয়কে সরিয়ে আলোর উন্মোচনে দূরীকরণ হয় ভৌতিক তত্ত্ব।
কবিতার বই–বাংলার ভূত ও ভূতনিদের সমালোচনার গান
কবি–দীপ্ত মুখোপাধ্যায়প
প্রচ্ছদ–রণজিৎ হীরা
মুদ্রক–শিলালিপি
প্রথম প্রকাশ–মে, ২০০৫
প্রকাশক–জনপদপ্রয়াস
Comments :0