PANCHAYAT ELECTION

কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা নেই, রাতে টহল বাইক বাহিনীর

রাজ্য জেলা পঞ্চায়েত ২০২৩

CPIM BJP RSS TMC WEST BENGAL POLITICS BENGALI NEWS 2023 PANCHAYAT ELECTION জল্পনাই সার। বাস্তবের মাটিতে দেখা মিলল না কেন্দ্রীয় বাহিনীর। ছবিঃ সংগৃহীত।

পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হওয়ার মুহূর্ত থেকে স্পষ্ট হয়েছে, এবারেও সরকার, শাসকদল এবং রাজ্য প্রশাসন নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করতে চায়। আদালতের হস্তক্ষেপে রাজ্য নির্বাচন কমিশন বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে পাঠাতে। কিন্তু তাতেও প্রতিপদে স্পষ্ট হয়েছে তীব্র অনীহার ছাপ।

এই অব্যবস্থার দায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকেরও। কেন্দ্রের তরফে গড়িমসি করা হয় বাহিনী পাঠাতে। কখনও শোনা যায়, বাহিনীর জওয়ানরা নাকি ‘একা একা’ বাংলার বুথ সামলাতে রাজি নয়। বুথ পিছু ৪জনের কম জওয়ান কিছুতেই মোতায়েন করতে রাজি নয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। শুক্রবার রাত ৮টার সময়ও নির্ধারিত ৮৫০ কোম্পানির মধ্যে ২০০ কোম্পানি বাহিনী এসে উপস্থিত হয়নি বাংলায়।

যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে তৎপরতার অভিনয়ে কোনও খামতি নেই। শুক্রবার সন্ধ্যাবেলায় জম্মু-কাশ্মীরের লেহ থেকে বিশেষ বিমানে পানাগড়ে বাহিনী পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু ১২ ঘন্টারও কম সময়ে সেই বাহিনী কখন এসে পৌঁছবে, কখন বুথে যাবে, আর কখনই বা রুট মার্চ কিংবা এরিয়া ডমিনেশন করবে তা স্পষ্ট নয়।

অপরদিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি অংশ জানাচ্ছে, রাজ্যের ৬১ হাজার গ্রাম পঞ্চায়েত বুথের মধ্যে মাত্র ১৫ হাজার বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। যদিও কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল, প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েই নির্বাচন করাতে হবে।

বাকি বুথে?

বাকি প্রায় ৪৫ হাজার বুথ পাহারা দেবেন রাজ্য পুলিশ এবং কলকাতা পুলিশের সশস্ত্র জওয়ানরা।

সেই পাহারার ফলশ্রুতি কি হতে পারে সে আশঙ্কায় গোটা রাজ্যের গ্রাম।

কলকাতা হাইকোর্ট নিজেদের রায়ের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিল, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্যে বিশৃঙ্খলার অঞ্চলে রুট মার্চ এবং এরিয়া ডমিনেশন করতে হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। যাতে ভোটারদের মনে আস্থা ফেরানো যায়।

নির্বাচনের ১০ ঘন্টা আগেও যেখানে বাহিনী এসে পৌঁছয়নি, সেখানে রুট মার্চ করে আস্থা ফেরানো চিন্তার বিলাসিতা মাত্র। আর তাই গ্রামের মানুষ মরিয়া হয়েই  বুথ রক্ষার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। প্রতিরোধের মেজাজে চলছে ভোট লুট রোখার প্রস্তুতি।

প্রশাসনিক এই টালবাহানার সুযোগে ইতিমধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান ইত্যাদি জেলা থেকে তৃণমূলী বাহিনীর টহলের খবর আসতে শুরু করেছে। শুক্রবার সূর্যাস্তের পর থেকেই ‘অ্যাকশন’ শুরু হয়ে গিয়েছে। মূল ‘টার্গেট’ বিরোধীদের সম্ভাব্য এজেন্ট এবং স্থানীয় স্তরের নেতৃত্বরা। সাধ্যমত প্রতিরোধের খবরও যদিও আসতে শুরু করেছে।

তৃণমূলের আক্রমণের মূল নিশানা সেই সমস্ত জায়গাগুলি, যেখানে মনোনয়ন পর্ব থেকে শুরু করে প্রচার পর্ব অবধি তৃণমূলের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিয়েছে সিপিআই(এম)-আইএসএফ-কংগ্রেস প্রার্থীরা। তারফলে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং, পিংলা, চন্দ্রকোণা রোডের বিস্তীর্ণ অংশ, গড়বেতার একটা অংশ থেকে ৩-৪ বার বাইক বাহিনীর টহলের খবর সামনে এসেছে।

ডায়মন্ড হারবারের লোকসভা কেন্দ্রের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলকে ভোট শূন্য রাখা হয়েছে। যেমন বজবজ। এই এলাকা থেকেই নদী পেরিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামের জেলিংহ্যাম প্রভৃতি অঞ্চলে দক্ষিণ ২৪ পরগণা এবং কলকাতার বাছাই সমাজবিরোধীদের ঢোকানো হচ্ছে। একইভাবে বাসন্তী হাইওয়েকে কাজে লাগিয়ে উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভোট লুটেরা বাহিনী ঢোকানো শুরু হয়ে গিয়েছে। তারফলে ভাঙড়, দেগঙ্গা প্রভৃতি বাসন্তী হাইওয়ে সংলগ্ন এলাকা থেকে সিপিআই(এম)-আইএসএফ প্রার্থী এবং কর্মীদের উপর হামলার খবর মিলেছে।

শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী মালদা জেলার এক মিটার এলাকাতেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর হদিস মেলেনি। তার সুযোগে কালিয়াচকের মতো সীমান্তবর্তী অঞ্চলে চোরাচালানকারী বাহিনীকে ময়দানে নামিয়েছে তৃণমূল।  

সবংয়ে মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার মদতে চলছে বুথে হামলা। সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ বলেছেন, পিংলার বিধায়ক জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি অজিত মাইতির মদতে একই ঘটনা। কোনও ভোট কেন্দ্রে সিসিটিভি লাগাতে দেওয়া হয়নি। কোনও পুলিশ বা কেন্দ্রীয় বাহিনী নেই।

কেশপুরের ১৫ নম্বর অঞ্চলে এনায়েতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে ২৫৯ নম্বর বুথে বাঘরুই গ্রামে তৃণমূলের জেলা পরিষদের প্রার্থী মোহাম্মদ রফিকের নেতৃত্বে দুষ্কৃতী বাহিনী তাণ্ডব চালায়। পাঁচ জন রক্তাক্ত হামলায়। আহত পনেরজনের বেশি। তাঁদের চিকিৎসা করতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে পুলিশ ক্যাম্পে ফেলে রাখা হয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment