SSC Scam

মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে যাওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে শিক্ষকরা

রাজ্য

রঘুনাথগঞ্জে চাকরি দুর্নীতির প্রতিবাদে শনিবার ডিওয়াইএফআই’র মিছিলে বাধা পুলিশের। ছবি: অনির্বাণ দে

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২৫৭৫২জন বাতিল হয়েছে। রাজ্যজুড়এ শনিবার রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা, তৃণমূলের দুর্নীতির জন্য শিক্ষক, শিক্ষক কর্মী, তাঁদের পরিবারের এই মারাত্মক ক্ষতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। আলিপুরদুয়ার থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগণা, সর্বত্র নানা ভাবে প্রতিবাদ ধ্বণিত হয়েছে। প্রতিবাদে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশাপাশি ছিলেন অন্য অংশের মানুষও।
যেমন পশ্চিম মেদিনীপুের মেদিনীপুর শহরে হয়েছে বিক্ষোভ। সেখানে প্রতিবাদীরা জানিয়েছেন যে, মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা ৭এপ্রিলের সভায় তাঁরা যাবেন না। ‘‘ওই অযোগ্য মুখ্যমন্ত্রীর ও চাকরি চোরদের ডাকা সভায় তারাই যাবে যারা অযোগ্য। ওই অযোগ্য সরকারের অযোগ্যদের কারনে আমাদের চাকরি গেলো। ওদের ললিপপ খাওয়ার সভাকে আমরা ধিক্কার সহ বয়কটের ডাক দিলাম।’’ ক্ষোভ উগরে দিয়ে কথা গুলি বলেন নারায়নগড় ব্লকের 
ভদ্রকালী গান্ধী উচ্চ বিদ্যাপীঠে অঙ্কের শিক্ষক অভিজিত গিরি। তাঁঁর সঙ্গীরাও তাঁকে সমর্থন করেন। তাঁদের গলাতেও একই সুর।
ভর দুপুর, ৪৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা। কোলে শিশু নিয়ে রাজপথে সদ্য চাকরি হারানো শিক্ষিকারা সহ অনেক শিক্ষক। শ্লোগানে বিক্ষোভে মেদিনীপুর শহরের কালেক্টরেট গেটের সামনে ক্ষুদিরামের মুর্তির চত্বর তখন উত্তাল। ওই মূর্তির চারিদিকে ৬ টি লেন দখল প্রতিবাদী শিক্ষকদের। কোলে শিশু নিয়ে গড়বেতা থেকে আসা,মঞ্জুরী মান্না, দেবশ্রী দন্ডপাঠ সহ অনেকেই বলেন,‘‘শান্ত ভাবে যেমন কথা বলতে পারি তেমনি আগুন জ্বালাতেও জানি। এই সংসার বাচ্চা,  বৃদ্ধ বাবা মা, হাউস লোনের বোঝা নিয়ে আমরা বাঁচবো কি করে?’’ শিক্ষিকারা শ্লোগান তোলেন চাকরি চোরের সরকার আর নেই দরকার। আমাদের যোগ্যদের পুনর্বহালের দাবি জানাই। এর দ্বায় স্বীকার করে মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করুক। এই দূর্নীতিবাজ সরকার  আমরা চাই না। বাংলার মানুষকে আবেদন করবো এই জঞ্জাল সরান। 
শনিবার মেদিনীপুর কলেজ ও কলিজিয়েট স্কুল ময়দান থেকে বেলা ১১ টায় এমন শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের ধিক্কার মিছিল বের হয়ে জেলা শাষক দপ্তরের গেটে যায়। সেখানে বিক্ষোভ অবস্থান সহ প্রতিবাদ সভা হয়। এমন বিক্ষোভ হয়েছে রাজ্যের অনেক জায়গাতেই।
গত ৩এপ্রিল শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে বিজেপি’র সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় চাকরি হারিয়েছেন এমন যোগ্য প্রার্থীদের খুঁজে বের করার একটি কমিটি গঠনের কথা বলেছেন। চাকরি হারিয়েছেন এমন শিক্ষকদের অধিকার মঞ্চের পক্ষে বলা হয়েছে ওই বাতিল হওয়া অযোগ্য শিক্ষকরা মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে যোগ দিলে সেখানে যোগ্য শিক্ষকরা যাবেন কিনা তা নিয়ে ভাবতে হবে। জেলায় জেলায় এনিয়ে আলোচনা চলছে। যোগ্য শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, রাজ্য সরকার আগে থেকে উদ্যোগ নিলে এই বিরাট অসহয়তার মধ্যে পড়তে হতো না। রাজ্য সরকার এবং এসএসসি অনেক সময় পেয়েছেন যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করার। রাজ্য সরকার একাজ করেনি এবং আদালতকে বিভ্রান্ত করেছে। 
চাকরিহারা, ছাত্র-যুব, সমস্ত ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক মতবাদের মানুষকে নবান্ন অভিযানে আহ্বান জানালেন পশ্চিমব্ঙ্গ বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী, চাকরিজীবী ও চাকরিহারা ঐক্যমঞ্চ। কোনও ঠুনকো প্রতিশ্রুতি নয়, তাদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার সমাধান বের করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে পয়লা বৈশাখ পর্যন্ত সমসয় বেঁধে দিলেন তারা। উপযুক্ত সমাধান না দিলে ২১ এপ্রিল সরাসরি মু্খ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের দাবি নিয়ে নবান্ন অভিযান করবে ঐক্যমঞ্চ।
তৃণমূল সরকারের দুর্নীতির জন্য ২৬ হাজার চাকরি বাতিল হওয়ার পর চাকরিহারাদের নিয়ে ৭ এপ্রিল বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। এত দ্রুত মু্খ্যমন্ত্রী তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত নিলেন তাহলে দীর্ঘদিন ধরে চাকরিহারা বঞ্চিতদের সঙ্গে কেন দেখা করেননি তিনি? শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন করলেন পশ্চিমবঙ্গ বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী, চাকরিজীবী ও চাকরিহারা ঐক্যমঞ্চের নেতৃত্ব। বলেন,  ‘‘দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের বঞ্চনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু যতবার গিয়েছি হয় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছেন না হলে আামদের জায়গা হয়েছে লালবাজার থানা।’’ ইতিমধ্যেই ১১ থেকে ১২টি মঞ্চ সংগঠনে যুক্ত হয়ছে। এই মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডিএ নিয়ে আন্দোলনকারী সংগঠন ‘সংগ্রামী ঐক্যমঞ্চ’ ও।   
আইনজীবী ফিরদৌস সামিম বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে চেয়ারম্যান করে সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে কমিটির কথা বলেছেন, তা তাঁর ভাবনার মধ্যেই থাকা ভালো। শিক্ষামন্ত্রী এবং এসএসসি’র চেয়ারম্যানকে নিয়ে যে কমিটি তৈরি হবে যোগ্য শিক্ষকরা  সেখান থেকে কোনও উপকার পাবেন না। আমি ওই এসএসসি’র চোর চেয়ারম্যান এবং শিক্ষামন্ত্রীর কমিটিতে থাকার কথা ভাবতেই পারি না। সাংসদ গঙ্গোপাধ্যায় এই কমিটি গঠনের পরামর্শ নিছকই একটি অবাস্তব ভাবনা। প্রসঙ্গত প্রাক্তন বিচারপতি, বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়  যোগ্য এবং অযোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের যে কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন শুক্রবার তা কার্যত নস্যাৎ করে দিয়েছেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। এদিন আইনজীবী ভট্টাচার্য বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর এই কমিটি গঠনের প্রস্তাব অবাস্তব। শীর্ষ আদালতে শুনানির সময় এই যোগ্য এবং অযোগ্য প্রার্থী বাছাই করা নিয়েই সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার তার নির্দেশে ২০১৬ সালের এসএসসি গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বাতিল করতে গিয়ে বারে বারে বলেছে, নিয়োগের তথ্য প্রমাণ লোপাটের কথা। শীর্ষ আদালত বলেছে প্রার্থী বাছাই করতে যে নথির প্রয়োজন তা এসএসসি’র কাছে নেই। এই অবস্থায় যোগ্য এবং অযোগ্য প্রার্থীদের বাছাইয়ের জন্য কমিটি তৈরি করা শুধু অবাস্তব নয় এটা একটা বেআইনি পদক্ষেপ, যা আদালত অবমাননার শামিল। প্রসঙ্গত শুক্রবার প্রাক্তন বিচারপতি বিজেপি সাংসদ প্রস্তাব করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি একটি কমিটি তৈরি করে এই যোগ্য অযোগ্যদের বাছাইয়ের কাজ করতে পারেন। এই কমিটি পারবে যোগ্য প্রার্থীদের চিহ্নিত করতে।
৭ তারিখ ঐ নেতাজী  ইন্ডোরে ললিপপ খেতে আমরা যোগ্যরা কেউ যাবো না।
 

Comments :0

Login to leave a comment