Idul fiter

বাঙালির ঈদ…

ফিচার পাতা

মেহফুজ আলম
 

সচরাচর কোনও প্রবন্ধের প্রথম লাইন প্রশ্নসূচক বাক্য দিয়ে শুরু হয় না, কিন্তু প্রবন্ধের  শিরোনাম লেখার পরে সংশয় তৈরি হয়েছিল যে আদৌ ঈদ বাঙালির উৎসব এটা এই রাজ্যে কি সংখ্যাগুরু স্বীকৃত ধারণা? 
উত্তরটা হচ্ছে না। আমাদের ছোটবেলাতে ঈদ নিয়ে বলা হতো, মুসলমানেদের পরব আছে, তাই ছুটি পড়েছে। সংখ্যাগুরু সবসময় তার ধর্মাশ্রিত সংস্কৃতিকেই প্রামাণ্য এবং প্রধান মনে করে। এটা দেশ কাল ভেদে সত্য। তাই, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরস্বতী আরাধনা খুব স্বাভাবিকভাবেই গৃহীত হয়। বাংলা ভাষা একটি মিশ্র ভাষা জানার পরেও প্রথিতযশা শাসক ঘনিষ্ঠ চিত্রশিল্পী ভাষার ভিত্তিতে বিভাজনে নামেন। ধর্মদ্বেষে বিশ্বাসীরা অনায়াসে একদল সহনাগরিককে ‘কাটা মোল্লা’র দল বলে দাগিয়ে দিয়ে যান। প্রগতিশীল যাদবপুরে নামের জন্য ঘরভাড়া পান না মফঃস্বল থেকে উঠে আসা তরুণ সংখ্যালঘু গবেষক। এবং সবই, খুব স্বাভাবিকভাবে স্বাভাবিক বিষয় হিসাবে মেনে নিয়েছি আমরা। 
বছর কয়েক আগের কথা, ঈদের আগের দিন। যেহেতু, মাননীয় সরকার বাহাদুর কোনোকালেই ঈদের জন্য দু’দিন ছুটির বরাদ্দ রাখেননি, আর গণপরিবহণ বিষয়টা আমাদের দেশে কোনোদিনই পর্যাপ্ত নয়, তাই ট্রেনে বাসে বাদুড় ঝোলা ভিড়। লালগোলা মেইন লাইনের এককালের সবেধন নীলমণি ট্রেন ভাগীরথী এক্সপ্রেসের এসি চেয়ারকারে উঠেছি। ট্রেন ছাড়ার কিছু আগে এক ভদ্রলোক এলেন। পরনে পুরানো রং লাগা শার্ট আর লুঙ্গি, হাতে একটা বেঢপ ব্যাগ। আমার সামনের দিকের এক ধোপদুরস্ত জামাকাপড় পরা মানুষ বেশ বিরক্তির স্বরে জিজ্ঞেস করলেন,
‘এই যে, এটা এসি রিজার্ভেশন কামরা। জানো তো?’
যাকে নিয়ে সংশয়, তিনি সামান্য হেসে জানালেন যে তার কাছে রিজার্ভেশনের টিকিট আছে। এখানেই বিষয়টি শেষ হলো না। এলিট এক্সপ্রেসের যে আর কোনও কৌলীন্য থাকছে না এবং যে কেউ এসে উঠে পড়ছে, এটা নিয়ে নিচু গলায় কয়েকজনের ভিতরে আলোচনা শুরু হলো। এবং সেই আলোচনাতে নতুন আগন্তুকের ধর্মও বিবেচ্য ছিল। 
আমার মতো যারা ট্রেনে বাসে হরদম যাতায়াত করেন, তাদের কাছে এটা বিরল ঘটনা নয়। আরবি নাম, ফেজ টুপি, দাড়ি, পাঞ্জাবির সমাহার দেখলেই এক শ্রেণির সংখ্যাগুরুর বিরক্তির উদ্রেক হয়। ঈদের সময় মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদীয়ার অসংখ্য মানুষ , যারা মূলত শ্রমিকের কাজে ভিন রাজ্যে কাজ করেন, এবং ঈদের আগে ট্রেন বাসে গাদাগাদি করে বাড়ি ফেরেন, তারা ধর্ম পরিচয়, পোশাক ইত্যাদি নিয়ে তথাকথিত ভদ্রলোকেদের একাংশের বক্রোক্তির শিকার হোন। 
পাশাপাশি দুই ধর্মের মানুষ কয়েকশো বছর ধরে পাশাপাশি থেকে, একই ভাষায় কথা বলেও বিন্দুমাত্র কাছাকাছি আসতে পারেনি, অথচ, দুই ধর্মের লোকই বড়দিনে পার্ক স্ট্রিটে যান।  আরেকটা লাখ টাকার প্রশ্ন হলো, সংখ্যাগুরু বাঙালি কি আদৌ বাঙালি মুসলিমদের বাঙালি বলে স্বীকার করে? পেশাগত সূত্রে কলকাতায় পা রেখে মনে হয়েছিল যে মহানগরের একটা বড় অংশের মানুষ মূলত মুসলিম বলতে হিন্দিভাষী মানুষদের বোঝেন। বাঙালি মুসলমান মাত্রেই যে রোজপাতে বিরিয়ানি খান না, কাওয়ালি শোনেন না, মাছ-ডাল-ভাত-শুক্তো যে তারাও খেয়ে থাকেন, জর্জ বিশ্বাসের গান শোনেন, এই ধারণাটাই উল্লেখযোগ্য অংশের নেই। সংখ্যাগুরুদের একটা বড় অংশেরই মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবগুলি নিয়ে কিছু জানা নেই। ঈদ-উল-ফিতর আর ঈদ-উল-আজহা, এই দুই ঈদের তাৎপর্য কী বা কীভাবে পালিত হয় তা নিয়ে সংখ্যাগুরুদের বড় অংশই উদাসীন। তারা ঈদ এলে কানেক্ট করেন জাকারিয়া স্ট্রিটের সাথে। জাকারিয়া স্ট্রিট সম্ভবত কলকাতার একমাত্র ফুড স্ট্রিটের মর্যাদা পেতে পারে। ঈদের খাবারের সাথে পরিচিতি ঘটে, তা কলকাতা কেন্দ্রিক নস্টালজিয়াতে ঠাঁই পায়, কিন্তু সাধারণ বাঙালি মুসলমানের জীবনযাত্রার সাথে সংখ্যাগুরুর ব্যবধান একই রকম থেকে যায়।  
বাঙালি মুসলমান মানেই আদতে একটা টাইপো ক্যারেক্টার। মাথায় ফেজ টুপি, দাড়ি, পাজামা-পাঞ্জাবি পরা। চারটে করে বিয়ে করে। বৌকে বোরখায় ঢেকে রাখে। গোরুর মাংস খায়। কথায় কথায় মারতে কাটতে আসে। ঠিক এই টাইপো ক্যারেক্টারকে সামনে রেখেই উগ্র দক্ষিণপন্থী দলগুলি রাজাবাজার, মেটিয়াবুরুজ নিয়ে একের পর এক প্রোপাগান্ডা নামিয়েছিল। সেখানে নাকি অলিতে গলিতে অস্ত্রের ভাণ্ডার। যে কোনোদিন তারা হিন্দুদের আক্রমণে নামবে। এবং, এই ন্যারেটিভে বিশ্বাসী লোকের সংখ্যা খোদ কলকাতা শহরেই কিছু কম নয়। 
প্রসঙ্গত, গুজরাটে একটি আইন আছে। ডিস্টার্বড এরিয়া অ্যাক্ট। ১৯৮৫-৮৬ তে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার আইনটি প্রবর্তন করেছিলেন। বিজেপি সরকার মোটামুটিভাবে আইনের প্রয়োগটা এমনভাবে করেছে যাতে কোনও সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরুদের এলাকায় থাকার জমি বা বাড়ি কিনতে না পারে। আমেদাবাদের মতো শহরে একের পর এক সংখ্যালঘুদের ঘেটো তৈরি হয়েছে। অবশ্য, তথাকথিত বিকাশ পুরুষ, যিনি পোশাক দেখে সন্ত্রাসবাদী চেনেন, তার অ্যাজেন্ডায় সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন কোনোকালেই ছিল না, সুতরাং সেটা নিয়ে আর কথা বাড়াচ্ছি না। কিন্তু, রাজাবাজার বা মেটিয়াবুরুজে অনেক জায়গায় পা রাখলে আপনার মনে হতে বাধ্য যে কলকাতা কর্পোরেশন তাদের মানচিত্র থেকে এই জায়গাগুলো তুলে দিয়েছে। সংখ্যাগুরুর কর্পোরেশন না হয় ভুলে গেল, সংখ্যালঘুদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এতদিন কী করলেন, সেই প্রশ্নটাও স্ক্যানারে আসা উচিত।  
গত দুই দশকে বাঙালি মুসলমানের আর্থ-সামাজিক অবস্থান অনেকখানি পালটেছে। যদিও সংখ্যাগুরুর কাছে তাদের রেপ্রেজেন্টেশন কিছু পালটায়নি। সেন্টার অব স্টাডিজ ইন সোশাল সায়েন্সের ড. মইদুল ইসলাম তার রিসার্চ পেপারে দেখিয়েছেন যে দেশভাগ পরবর্তী বাংলা সিনেমাতে উল্লেখ্য চরিত্রে বাঙালি মুসলিম চরিত্র নেই। তপন সিংহের কোনও সিনেমাতেই বাঙালি  মুসলিম চরিত্র নেই। ঋত্বিক ঘটকের সিনেমাতেও নেই। সত্যজিৎ রায় একমাত্র তার সিনেমা ‘হীরক রাজার দেশে’ তে এক কৃষকের ভূমিকায় আবুল ফজল নামের এক বাঙালি মুসলিম চরিত্রকে দেখিয়েছেন। পরবর্তীকালে যেটুকু মুসলিম চরিত্রদের বাংলা সিনেমাতে দেখানো হয়েছে, তা প্রায় সবই টাইপো ক্যারেক্টার, অর্থাৎ, গলায় রুমাল ঝোলানো মাফিয়া ডন অথবা বিশ্বস্ত চাচাজান। একইভাবে সমকালীন বাংলা সাহিত্যেও মুখ্য চরিত্রে কোনও বাঙালি মুসলিমকে এপার বাংলাতে কিন্তু কেউ চরিত্রায়িত করেননি। 
স্কুল সার্ভিস কমিশন চালু হবার পর স্কুলের চাকরিতে বাঙালি মুসলিমের সংখ্যা বেড়েছে। আল-আমীন মিশনের মতো কিছু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে মুসলিমদের মধ্যে থেকে বড় সংখ্যাতে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার উঠে এসেছে। প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে এখনও মুসলিম রেপ্রেজেন্টেশন ওই ৬%-এর মত। সাচার কমিটির রিপোর্ট না বেরোলে কেউ এই সম্প্রদায় নিয়ে খুব একটা ভাবিত হতেন বলে মনে হয় না। 
অর্থাৎ, একটা দীর্ঘ সময় ধরে সংখ্যাগুরু বাঙালির মেইন স্ট্রিম সংস্কৃতি চর্চায় সংখ্যালঘু বাঙালি মুসলমান ডাইনোসরের মতই অবলুপ্ত ছিল। সুতরাং, যাদের অস্তিত্বই সংখ্যাগুরু বাঙালির কাছে স্বীকৃত ছিল না, তাদের উৎসব কখনই বাঙালির সার্বিক উৎসবের কৌলীন্য পাবে না, এটা বোঝার জন্য নস্ত্রাদামুস হবার দরকার পড়ে না। 
সংখ্যাগুরু বাঙালি না হয় সর্বার্থে এগবার চেষ্টা করেনি, সংখ্যালঘু বাঙালি মুসলমানও কি তাদের দরজা খুলেছে সবার জন্যে? সংখ্যাগুরুর কাছে সংখ্যালঘুর ঈদ মানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সিমাই খাওয়ার নিমন্ত্রণ মাত্র। বাঙালির মুসলমানের ঈদ যে এখনো সবার উৎসব হয়ে উঠতে পারেনি, তার অনেকটা দায় কিন্তু বাঙালি মুসলমানের নিজের। তারা অন্যের জন্য দরজা খুলতে দ্বিধা বোধ করেছেন। অবশ্য, তাদের এই ধর্মীয় পরিচিতিকে আঁকড়ে ধরার ক্ষেত্রে সংখ্যাগুরুর ক্রমাগত অবহেলাও সমান দায়ী। ‘তুই মুসলমান, তবে যে বললি বাঙালি?’ বা ‘তোকে দেখে একদমই মুসলমান’ মনে হয় না গোছের শব্দবন্ধ আদতে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়কে ছোট করে, তা হয়ত আমরা অনেকেই বুঝি না। নার্গিস সাত্তার তাঁর একটা লেখাতে এরকম একটা ঘটনা উল্লেখ করেছিলেন। 
সাচার কমিটির রিপোর্ট চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিল যে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাঙালি মুসলমান কতটা পিছিয়ে আছে। এরাজ্যের বাঙালি মুসলমান, যারা গ্রামে থাকেন, তাদের একটা বিশাল অংশ বাইরের রাজ্যে আর মধ্যপ্রাচ্যে কায়িক শ্রমের কাজে যান। সেই সুবাদে তাদের কিছুটা হলেও আর্থিক সুবৃদ্ধি ঘটেছে। মুশকিল হচ্ছে, এই আর্থিক সুবৃদ্ধি বাঙালি মুসলমানের চেতনার স্তরে কতটা প্রভাব ফেলতে পেরেছে, তা নিয়ে সংশয় আছে। তারা অনেক বেশি করে ধর্মকে আইডেন্টিটি হিসাবে আঁকড়ে ধরছেন। অবশ্য, শিক্ষিত বাঙালি মুসলমান, যারা আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গ্রামের পিছিয়ে থাকা মুসলমানেদের সাথে নিজেদের যোগাযোগ রাখেননি। তারা উদ্যোগী হয়েছেন শহরের সংখ্যাগুরুদের মেইন স্ট্রিম কালচারের অংশ হয়ে উঠতে। ফলে, গ্রামের প্রথাগত শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে থাকা মুসলমান তার পরিচয় হিসাবে আরও বেশি করে ধর্মীয় আইডেন্টিটিকে সামনে নিয়ে আসছে। 
এবং এক্ষেত্রে, এপার বাংলার সমাজচিত্রে সাম্প্রদায়িকতার উত্থানটাও উল্লেখ্য। বাংলার মুসলিমদের উন্নতিতে বিগত বাম সরকারের ভূমিকা নিশ্চয়ই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। কিন্তু, তারা অন্তত সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের চাষে উসকানিদাতার ভূমিকা পালন করেনি। তারা সরাসরি দাঙ্গার বিরোধিতা করেছেন। এবং আমরা , যারা  নব্বইয়ের দশকে বড় হয়েছি, তারা এই পরিবর্তনটা চোখের সামনে দেখছি। ধর্ম এবং ধর্মাচরণ একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। একটি গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ দেশে রাষ্ট্রের ভূমিকা তাতে থাকতে পারে না। পূর্বতন বাম সরকার ধর্মকে কখনই রাষ্ট্রের বিষয় করে তোলেনি। কিন্তু, বর্তমান রাজ্য সরকার আর কেন্দ্রীয় সরকার ধর্ম রাজনীতির খেলায় নেমেছে।
বর্তমান রাজ্য সরকারের নেতা নেত্রীরা ইফতারে টুপি পরে বসেন। আবার তাদের আমলেই সঙ্ঘের শাখা সবচেয়ে বেশি এরাজ্যে বৃদ্ধি পায়। আসানসোল দাঙ্গায় উসকানির দায়ে অভিযুক্তকে সটান বিজেপি থেকে এনে মন্ত্রীসভায় স্থান দেন। তাদের আমলেই বগটুইতে সংখ্যালঘুদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়, মাঝরাতে বাড়ি গিয়ে ছাত্রনেতা আনিস খানকে ছাদ থেকে ফেলে খুন করা হয়, সংখ্যালঘু দরদ দেখানো পুলিশ মন্ত্রীর পুলিশ চাকরির দাবিতে আন্দোলনে নামা তরুণ মইদুল মিদ্যাকে পিটিয়ে মারে। এবং ইমাম ভাতা দিয়ে সংখ্যালঘু প্রীতি দেখানো শুরু করার পর তা দীঘাতে জগন্নাথ মন্দিরের প্রতিষ্ঠায় এসে ঠেকেছে। গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোতে নির্বাচিত সরকারের কাজ মন্দির মসজিদ বানানো নয়, এই ধারণাটাই পালটে দেওয়া হচ্ছে। 
যে কোনও দেশে , সমাজে সংখ্যালঘুদের আস্থা অর্জনে সংখ্যাগুরুদের বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হয়। নইলে, দেশ হিসাবে তা ব্যর্থতার নিদর্শন হয়ে দাঁড়ায়। ঠিক যে কারণে, আমাদের প্রতিবেশী দেশ তাদের সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় চরম ব্যর্থ হওয়াতে, তাদের আমরা ‘ফেইলড স্টেট’ বলে থাকি। এবং, তাদের এই ব্যর্থতা থেকে আমাদের কিছু শেখার ছিল। আমাদের দেশে, এই মুহুর্তে, আমরা এক সন্ধিক্ষণে বাস করছি যেখানে ফ্রিজে গোরুর মাংস রাখার মিথ্যা অভিযোগে কাউকে অনায়াসে পিটিয়ে মারা যায়, বিলকিস বানোর দলবদ্ধ ধর্ষণকারীরা সরকারি আপিলে ছাড়া পেয়ে মানুষের কাছে বীরের সম্মান পায় আর কেন্দ্রের শাসক দলের প্রতিনিধিরা প্রকাশ্যে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ান। 
তাহলে আমাদের এই বিদ্বেষের ধারাপাতের কোনও শেষ নেই? আমাদের হাল কি ১৯৩০-এর জার্মানির মতো হতে চলেছে যেখানে সাম্প্রদায়িক ঘৃণাই দেশপ্রেমের একমাত্র শর্ত হয়ে দাঁড়াচ্ছে? 
এই সময়, বামপন্থীদের সামনের সারিতে এসে দাঁড়াতে হবে। সম্প্রতি হাওড়াতে শাসক পুষ্ট দাঙ্গাবিধ্বস্ত এলাকায় এক বৃদ্ধ দোকানদার বলছিলেন যে লাল পতাকাটা সামনে থাকলে অন্তত সাহস জাগে, কারণ এরা আমার হয়ে রুখে দাঁড়াবে। রাজ্যের বর্তমান  শাসকের বিভাজনের রাজনীতি যা এরাজ্যে বিজেপি-কে ক্রমাগত মেরুকরণে সাহায্য করে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। 
এই রমজান মাসে, ধর্মভীরু বাঙালি মুসলমান প্রবল দাবদাহের মধ্যে রোজা রাখছেন। আমি এক বৃদ্ধা সংখ্যাগুরু শিক্ষিকাকে চিনতাম যিনি তার পাশের বাড়ির একতলায় থাকা বাঙালি মুসলমান ছাত্রদের ইফতারের সময় রোজ দু’বোতল ঠান্ডা জল তাঁর ফ্রিজ থেকে এনে দিতেন। আমরা এই সম্প্রীতি আর সৌহার্দের বাংলাকেই চিনি। এই বাংলাকে কোনও বিভেদকামী অপশক্তির হাতে তুলে দেওয়া যাবে না।
ঈদ উল ফিতর সবার জীবনে শান্তি বয়ে আনুক। শুভ হোক সবকিছু।  

 

Comments :0

Login to leave a comment