শ্রেণি সংগ্রামের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে খেটে খাওয়া মানুষের ব্রিগেড। অতীতে দশকের পর দশক ধরে গণআন্দোলনের অনেক ইতিহাস রচনা হয়েছে ব্রিগেডে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্রিগেডেও মহা সমাবেশ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তার সিংহভাগই হয়েছে সিপিআই(এম) তথা বামপন্থী দলগুলির উদ্যোগে। দক্ষিণপন্থী বুর্জোয়া দলগুলি ব্রিগেডে কখনো সকনো সমাবেশ করলেও ব্রিগেড ভরানোর সামর্থ্য তাদের প্রায় কারোরই ছিল না। বাংলার বুকে সংগঠিত গণআন্দোলনের সঙ্গে ব্রিগেডের সংযোগ প্রধানত সিপিআই(এম) তথা বামপন্থীদেরই হাত ধরে। বস্তুত ব্রিগেড ভরিয়ে জনপ্লাবনের রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়তে পারে সিপিআই(এম)-ই। সিপিআই(এম) দলগতভাবে ব্রিগেডে সমাবেশ যেমন করেছে তেমনি ছাত্র সংগঠন এসএফআই, যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই, মহিলা সংগঠন গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি, শ্রমিক সংগঠন সিআইটিইউ, কৃষক সংগঠন সারাভারত কৃষকসভাও নিজ নিজ উদ্যোগে ব্রিগেডে সমাবেশ করেছে। এই ব্রিগেডেই এক ঐতিহাসিক শ্রমিক সমাবেশে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর হাতে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য এরাজ্যের শ্রমিকরা এক কোটি টাকা দান করেছিলেন। গত বছরই নব যৌবনের ডাকে এই ব্রিগেড ভরিয়ে দিয়েছিল ডিওয়াইএফআই। এবার বাংলা দেখেছে নতুন এক ব্রিগেড। শ্রেণি সংগ্রামের খরস্রোত বাংলার প্রতিটি প্রান্ত থেকে ধেয়ে এসে ব্রিগেডকে প্লাবিত করেছে, উত্তাল করেছে।
এই ব্রিগেড একেবারেই প্রান্তিক মানুষের। প্রতিদিন বেঁচে থাকাটাই যাদের কাছে অনিশ্চিত, বেকারিত্বের জ্বালা, নিম্ন মজুরি আর অন্তহীন শোষণের যন্ত্রণা যাদের কুরে কুরে খায়, যাদের মাথার উপর ছাদ, প্রতিদিনের কাজ, দু’বেলা পেট ভরে খাবার অনিশ্চিত তারাই কুল ছাপিয়ে দিয়েছেন ব্রিগেডের। সিআইটিইউ’র ডাকে এসেছেন কলে-কারখানায় কাজ করা সংগঠিত-অসংগঠিত শ্রমিকরা, কৃষক সভা ও খেতমজুর ইউনিয়নের ডাকে এসেছেন খেতে খামারে কাজ করা প্রান্তিক কৃষক ও খেতমজুররা। আর বস্তি উন্নয়ন সমিতির ডাকে শহর-শহরতলির বস্তি, রেল লাইন-নদী-খাল-রাস্তার পাশে ঝুপড়িতে বসবাসকারী সবহারা প্রান্তিক খেটে খাওয়া মানুষরা। এরাই এযুগের সর্বহারা। এই সর্বহারারাই ব্রিগেডের মহামিলন ক্ষেত্রে একে অন্যের সাথে বেঁধে বেঁধে থেকে সকলে মিলে লড়াই করে বাঁচার রসদ আদায়ে শপথ নিয়েছেন।
কৃষক ফসলের দাম চান, চাষের উপকরণের সস্তায় সরবরাহ চান, খেত মজুর চান সারা বছর কাজ এবং বেঁচে থাকার মতো মজুরি। গ্রাম-শহরে সারা বছরের মধ্যে যখন কাজ থাকে না তখন চান রেগার মাধ্যমে কাজ। অর্থাৎ চান কাজ। শ্রমের বিনিময়ে উপযুক্ত মজুরি। চান জমিতে কৃষকের অধিকার। ভূমিহীনদের জন্য জমি। আদিবাসী জনজাতি চান বনাঞ্চলের অধিকার, যে বন তাদের বেঁচে থাকার রসদ জোগায়। শ্রমিকরা চান কাজ, ন্যূনতম মজুরি। চান ৮ ঘণ্টা কাজ, স্থায়ী কাজ। উচ্ছেদের মুখে বিপন্ন বস্তিবাসীরা চান বসবাসের স্থায়ী অধিকার। ঝুপড়িবাসীরা চান মাথা গোঁজার নিজস্ব ঠাঁই যেখান থেকে কেউ তাদের জোর করে উচ্ছেদ করতে পারবে না। বিপন্ন এই সময়ে জীবন-জীবিকার ন্যূনতম চাওয়াকে সামনে রেখে বৃহত্তর সংগ্রামের মালা গাঁথার শপথ নিয়েছেন শ্রমজীবী প্রান্তিক মানুষরা। রাজ্যে এরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই সংখ্যাগরিষ্ঠ মেহনতী মানুষের ঐক্য ভাঙতেই কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক সাম্প্রদায়িক বিভাজনের চেষ্টা করছে। মেহনতী মানুষের শ্রেণি সংগ্রাম বানচাল করতে ধর্মের নামে দাঙ্গার আগুন জ্বালাতে চাইছে। ব্রিগেড সেই ষড়যন্ত্রকে ছত্রখান করে শ্রেণি সংগ্রাম প্রসারের বার্তা দিয়েছে। এই শোষিত নিপীড়িত শ্রেণিই পারে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের ও শ্রেণি শোষণ ও নিপীড়নের রাজনীতিকে বদলে দিয়ে বামমুখী করতে। ব্রিগেড সেই বার্তাই দিয়েছে।
Brigade 20 April
শ্রেণি সংগ্রামের নতুন অধ্যায়ের সূচনা

×
Comments :0