দেশজুড়ে বিরোধী স্বর তথা প্রতিবাদী কণ্ঠকে স্তব্ধ করার যে পরিকল্পিত গভীর ষড়যন্ত্র আরএসএস-বিজেপি জমানায় গত এক দশক ধরে প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে এরাজ্যে তাকেই নিখুঁতভাবে অনুসরণ করছে তৃণমূল সরকার। গণতন্ত্রের শত্রু ফ্যাসিস্ত রাজনীতি তথা স্বৈরতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্রী রাজনীতি চরিত্রগতভাবেই গণতন্ত্রকে ভয় পায়। সমালোচনা, বিরোধিতা, প্রতিবাদ দেখলেই আতঙ্কিত হয়। ভাবে এই বুঝি ক্ষমতা হারাতে হয়। তাই একদিকে এরা যেমন নিজেদের যাবতীয় অপকর্ম, অনাচার, দুর্নীতি আড়াল করতে ব্যস্ত থাকে অন্যদিকে তাদের বিরুদ্ধ শক্তি বিশেষ করে সাধারণ মানুষ যখন প্রতিবাদের সুর চড়াতে থাকে তখন তাকে দমন করার জন্য যে কোনও ধরনের ঘৃণ্য ও কুৎসিত ষড়যন্ত্র করতেও দ্বিধাবোধ করে না। ক্ষমতার লোভে এরা এতটাই অন্ধ যে বিরোধীদের দমন করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করে।
মোদী জমানায় দেখা গেছে কবি, সাহিত্যিক, সমাজকর্মী, অধ্যাপক, আইনজীবী, শিল্পী সহ যারা গণতন্ত্রের পক্ষে, বাক্ স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেন, মানুষের মৌলিক অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হন তাদের মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ হ্যাক করে সেখানে গোপনে নানা তথ্য ঢুকিয়ে তাদের ফাঁসানোর ঘটনা অহরহ ঘটেছে। ভীমা কোরেগাঁওকে সামনে রেখে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করে বছরের পর বছর কারান্তরালে আটকে রেখে তাদের কণ্ঠ রুদ্ধ করা হয়েছে। একইভাবে বার বার জেলে পোরা হয়েছে জেএনইউ’র প্রতিবাদী ছাত্র নেতাদের। নানা অভিযোগ সাজিয়ে আটক করা হয়েছে দেশে সৎ ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার বহু ছাত্র-যুবকেও গ্রেপ্তার করা হয় মোদী জমানায়।
তারই প্রতিচ্ছবি দেখা গেছে এরাজ্যেও। মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে শাসক তৃণমূলের বামপন্থীদের এতটাই ভয় যে তাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা চলছে বহু বছর ধরে। জেলে আটকে রাখা হয়েছে হাজার হাজার কর্মীকে। সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেই, মানুষকে সংগঠিত করে আন্দোলন শুরু করলেই সংগঠকদের কোনও না কোনও সাজানো কেস দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। মুখে সিপিআই(এম)-কে শূন্য বলে বিদ্রুপ করে আর দূরবিন দিয়ে দেখার কথা বলে আসলে কিন্তু সিপিআই(এম)-কেই সবচেয়ে বেশি ভয় তৃণমূলের। এরাজ্যে লুটের রাজত্বের অবসান হবে সিপিআই(এম)’র হাতে এটা তৃণমূল মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। তাই তৃণমূলের একমাত্র লক্ষ্য যেভাবেই হোক বামপন্থীদের আটকাতে হবে। তাদের কোনও অবস্থাতেই সক্রিয় হবার, বেড়ে ওঠার সুযোগ দেওয়া হবে না।
আর জি করকাণ্ডের পর ক্রমবর্ধমান প্রতিবাদ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকার কেবল অতি সতর্ক নয়, একেবারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আর জি কর নিছক এক ডাক্তারের ধর্ষণ-খুন নয়। এর পেছনে রয়েছে সরকার পোষিত এক অতিকায় অপরাধচক্র। যেটা জালের মতো ছড়িয়ে গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়। আন্দোলনের চাপে সেই হিমালয় প্রমাণ দুর্নীতি, হুমকি সংস্কৃতি, লুটের রাজত্ব একটু একটু করে সামনে আসছে। যত সেটা ফাঁস হচ্ছে শাসকের আতঙ্ক তত বাড়ছে। রাজ্যে এখন প্রতিবাদের যে ঝড় তার অন্যতম সংগঠক ছাত্র-যুব-মহিলারা। এদেরই ভয়ানক ভয়ানক ভয় পাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদের যদি ঠেকানো না যায়, কোনোভাবে ফাঁসিয়ে যদি জেলে পোরা না যায়, মিথ্যা বদনাম দিয়ে যদি কোণঠাসা করা না যায় তাহলে শাসক দলের সমূহ বিপদ। ন্যায় বিচারের দাবিতে আন্দোলন, দুর্নীতি-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন যা শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর গদি টলিয়ে দিতে পারে তাকে ভাঙার জন্য, দুর্বল করার জন্য যে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র চলছে কলতান দাশগুপ্তের গ্রেপ্তার তারই অংশ।
Conspiracy against Protestors
প্রতিবাদীদের দমানোর ষড়যন্ত্র
×
Comments :0