‘‘দোষ সরকার করেছে, টাকা নিয়ে চাকরি বিক্রি করেছে সরকার। আর শাস্তি পাচ্ছে যোগ্য চাকরিহারারা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে মারধর খেয়ে দাবি আদায় করতে হবে এটা ওদের প্রাপ্য?’’ ২০১৬ এসএসসি প্যানেল বাতিল সম্পর্কে শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বললেন ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি।
ডিওয়াইএফআই নেতৃত্ব বলেন, ‘গোটা দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ এমন একটা রাজ্য যা এখন দুর্নীতিতে রেকর্ড করেছে। সরকার নিজে দুর্নীতি করছে। এসএসসির আগে বিভিন্ন জোন ছিল এখন একটা কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। সরকার নিজে বিঞ্জপ্তি দিল চাকরির, তারপর যাতীয় যা করার সব করলো, যেই দুর্নীতি সামনে এলো তখন মুখ্যমন্ত্রী বলছে আমি কিছু জানিনা। চাকরি দেওয়ার সময় সরকার জানে কত পদ খালি, ক্যাবিনেটে সিদ্ধান্ত হবে কত নেওয়া হবে। তাহলে এখানেই প্রশ্ন দুর্নীতি কোথা থেকে এলো।’
মীনাক্ষী মুখার্জির কথায়, ‘‘যোগ্য অযোগ্য আজ এই দুটো শব্দ নিয়ে রাজ্য উত্তাল। শিক্ষা দপ্তর, স্বাস্থ্য দপ্তর, পিএসসি, ১০০ দিনের কাজের চাকরি তুমি দেবে, তারপর এখন বলবে যোগ্য অযোগ্য। ২২ লক্ষ ছেলে মেয়ে পরীক্ষা দিল। ২১ লক্ষ ৭৪ হাজার জনকে বাতিল করা হয়েছে। তারা কাজ পায়নি কেন তারা মাপকাঠি পুরণ করতে পারেনি। তাহলে কোন মাপকাঠি ছিল যার ভিত্তিতে ২৬ হাজার চাকরি হয়েছে। তাহলে কেন আদালতের কাছে সেই তথ্য দিতে পারছো না সরকার?’’
ডিওয়াইএফআই নেতৃত্বের কথায়, কয়েকটা টাকার লোভে গোটা পশ্চিমবঙ্গের ছেলে মেয়েকে সরকার দেখিয়ে দিল তোমরা রাস্তায় থাকো, আমি টাকা নিয়ে চাকরি দেবো। আজ যারা সরকার চালায় তারা তো বড় নেতা নেত্রী। তারা কেন বলছে অযোগ্য। তার মানে অযোগ্য ছিল। সরকার সেটা মেনে নিচ্ছে। যাদের অযোগ্য বলা হচ্ছে তারা কি করে অযোগ্য হলো? একজন সাদা খাতা দিল তাও পাশ করলো, সে অযোগ্য তাহলে কেন তাকে পাশ করালে? আমি টাকা নিয়ে চাকরি দেবো, তার মানে এটা স্পষ্ট টাকা নেওয়ার লোক ছিল। মীনাক্ষী মুখার্জির কথায়, ‘‘সরকার দেখিয়ে দিল মেধার কোন জায়গা নেই। যোগ্যরা বাধ্য হচ্ছে আন্দোলন করতে, আর সরকার বলছে ভরসা রাখুন। ওরা ঠিক করে দেবে কোথায় আন্দোলন হবে?’’
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারিকে কটাক্ষ করে মীনাক্ষী বলেন, ‘‘২০১৬ সালে দুর্নীতি হয়েছে। বিজেপি এই দুর্নীতি নিয়ে খুব কথা বলছে। এখন যিনি বিজেপির নেতা তিনি ২০১৬ সালে কোথায় ছিলেন? মালদহ, মূর্শিদাবাদের দায়িত্বে কে ছিলে? সেদিন একসাথে দুর্নীতির বিরিয়ানি খেয়েছো আজ দায় নিতে হবে। আজ বিধানসভায় যারা বিরোধী তাদের কি ভূমিকা? অনেকে তো আজ বিজেপিতে। টাকা লুঠ করে গোটা রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে শেষ করে দিয়েছে।’’
ডিওয়াইএফআই নেতৃত্বের কথায়, সরকারি স্কুলের সংখ্যা কমছে, ড্রপ আউট বাড়ছে, পরিযায়ী শ্রমিক হচ্ছেন অনেকে। বামফ্রন্ট সরকার সময় একের পর এক স্কুল তৈরি হয়েছে এখন দেখা যাচ্ছে স্কুল গুলো সব মার্জ করা হচ্ছে। ২০১১ সালের পর থেকে রাজ্যে আরএসএসের স্কুল বেড়েছে। সেখান থেকে উগ্র ধর্মান্ধতা, উগ্র জাতীয়তাবাদ বিষ ছড়াচ্ছে।
মীনাক্ষী বলেন, ‘‘স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগের দাবিতে এসএফআই ডিওয়াইএফআই রাস্তায় থেকেছে। মইদুল এই দাবিতে পুলিশের মার খেয়ে শহীদ হয়েছেন। শিক্ষক সংগঠনের সাথে আমরাও ছিলাম যাতে যোগ্যরা চাকরি পায়। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর যোগ্যদের নিয়োগের দাবিতে আমরা পথে নেমেছি।’’
আগামী ২০ এপ্রিম কৃষক সভা, খেত মজুর সংগঠন, সিআইটিইউ এবং বস্তি উন্নয়ন সমিতির ডাকে ব্রিগেড সমাবেশ। সেই সমাবেশে যুবদেরও অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাজ্য ডিওয়াইএফআই নেতৃত্ব।
মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, ‘‘রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। তাদের প্রতি রাজ্য সরকারের কোন দায়বদ্ধতা দেখা যাচ্ছে না। সরকারি দপ্তর গুলোয় নিয়োগ দুর্নীতি। কৃষক ফসলের দাম পাচ্ছে না, সাড়ের কালোবাজারি হচ্ছে, বস্তিবাসীদের জীবন ক্রমশ কঠিন হচ্ছে। ডিওয়াইএফআইয়ের ৭ জানুয়ারি ব্রিগেডে বলা হয়েছিল মূল এজেন্ডার লড়াই ভুল এজেন্ডার বিরুদ্ধে, এবারও তাই একই কথা। তাই যুবদের আহ্বান জানানো হচ্ছে ২০ এপ্রিলের সমাবেশে আসার জন্য।’’
Comments :0