Dengue

কমে গেছে দাবি করেও ডেঙ্গু নিয়ে ঘন ঘন বৈঠক

রাজ্য

মুখে ডেঙ্গু কমে গেছে বলে প্রচার করে এখন ডেঙ্গু নিয়ে ঘন ঘন বৈঠক করছে রাজ্য প্রশাসন। এদিকে হাসপাতালগুলিতে উপচে পড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা, সঙ্গী এবার ম্যালেরিয়াও। দৈনিক ৮০০-৯০০ নতুন ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান মিলছে কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলাগুলি থেকে। রোজই মিলছে মৃত্যুর খবর। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে বিধান নগরে। এর একদিন আগেই কলকাতায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে ম্যালেরিয়ায়। কলকাতার প্রায় প্রতিটি এলাকা থেকেই মশা বাহিত রোগের খবর মিলছে, বেগতিক দেখে মেয়র, ডেপুটি মেয়র এখন প্রায়ই ছুটছেন এলাকা পরিদর্শনে। জেলাগুলিরও একই হাল। ডেঙ্গু মারাত্মক আকার নেওয়ার পরে এখন জেলা প্রশাসন এখন ক্ষতে প্রলেপ লাগাতে ব্যস্ত। বেসরকারি তথ্য বলছে, চলতি মরশুমে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮ হাজারের আশেপাশে। ডেঙ্গুতে এপর্যন্ত অন্তত ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। 
এদিকে এই মুহূর্তে রাজ্যের কোনও হাসপাতালে কত শয্যা খালি আছে তার কোনও নির্দিষ্ট তথ্যই নেই সরকারের হাতে। সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশিত হচ্ছে না ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর কোনও তথ্য। কলকাতার ক্ষেত্রেও সঠিকভাবে সেইসব কোনও তথ্য দিতে পারছে না কলকাতা পৌরসভাও। নবান্ন ও পৌরসভার মধ্যে তথ্যের ফারাক রয়েছে। ডেঙ্গু বাড়াবাড়ি হওয়ার পর সবে একটি হেল্প লাইন নম্বরের কথা ভেবেছে পৌরসভা, যেখানে ফোন করে জানা যাবে কোনও হাসপাতালে কত শয্যা খালি পাওয়া যেতে পারে। ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্তে উপায় না দেখে এবার ফিভার ক্লিনিকগুলিতে বেড বাড়ানোর কথা ভেবেছে কলকাতা পৌরসভা। অথচ নবান্ন ৩ দিন আগেই বলে দিয়েছে ডেঙ্গু কমছে, আগামী সপ্তাহে তা নাকি আরও কমে যাবে! চিকিৎসকরা বলছেন, আগে থেকে তো বারবারই সতর্ক করা হয়েছিল, তখন কেবলই সীমাহীন নীরবতা পালন করেছে প্রশাসন।
গত ২৪ ঘণ্টায় আরও এক জন মারা গিয়েছেন ডেঙ্গুতে। তাঁর নাম প্রতিমা মণ্ডল (৫২)। বিধাননগর পৌর এলাকার দত্তাবাদের বাসিন্দা তিনি। বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন তিনি, শরীরে দেখা দেয় ডেঙ্গু উপসর্গও। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু রিপোর্ট পজিটিভ আসে। বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেখানেই চিকিৎসা চলাকালীন মারা যান তিনি। অন্যদিকে মঙ্গলবার ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন কলকাতার পণ্ডিতিয়া রোডের এক বাসিন্দা। তাঁর নাম গৌর হালদার (৬৮)। জ্বর ও ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দেওয়ায় তাঁকে এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতা, নদীয়াতে ডেঙ্গু ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে বলে তথ্য মিলছে। বাদ নেই হাওড়া, হুগলী, বর্ধমান, মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি জেলাও। সর্বত্রই মশার কামড়ে বিপর্যস্ত মানুষ। বাড়ছে ক্ষোভ বিক্ষোভ।
একদিকে নবান্ন, স্বাস্থ্যভবনে ডেঙ্গু নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠক চলছে। অন্যদিকে একইভাবে কলকাতা পৌরসভাতেই চলছে বৈঠকের পর বৈঠক। অথচ সেই একইভাবে বছরের প্রথম থেকে নজরদারিহীন পরিত্যক্ত জমি, বাড়ি পড়ে আছে এলাকায় এলাকায়। একইভাবে প্রশাসনের উদাসীনতার সুযোগে হাসপাতাল চত্বর, আবাসন, বন্ধ কলকারখানার জমি বাড়ি, শহরের বাইরের খাটালগুলির আশেপাশে জন্ম নিচ্ছে মশা ও কীট পতঙ্গ। এখন টনক নড়তেই মেয়র, ডেপুটি মেয়র যাচ্ছেন কিছু কিছু এলাকায়। এলাকা পরিদর্শন করে তাঁরা এক সময়ে বিস্মিত হচ্ছেন, লজ্জিত হচ্ছেন, ক্ষুব্ধ হচ্ছেন তাঁদের নিজেদেরই প্রশাসনিক কাজকর্ম দেখে। এদিকে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ মানুষের বক্তব্য, পৌরসভা বারবারই বলছে নিয়মিত এলাকা পরিদর্শন ও সাফাইয়ের কাজ চলছে, ড্রোন ওড়ানো হচ্ছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। একেবারেই দিশাহারা হয়ে পড়েছে প্রশাসন।

Comments :0

Login to leave a comment