মণ্ডা মিঠাই / নতুনপাতা
আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের তাৎপর্য ও ধর্মীয় যোগ সাধনার উন্মাদনা
সৌম্যদীপ জানা
আজ ২১শে জুন, সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস। মানব সভ্যতার প্রাচীনতম সাধনা ‘যোগ’ আজ বিশ্বমঞ্চে এক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দখল করেছে। এই দিবসটি শুধু শারীরিক ব্যায়ামের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য নয়, বরং মানসিক ও আত্মিক উন্নতির পথ হিসেবেও উদযাপিত হয়। বর্তমান যুগের ব্যস্ততা ও মানসিক চাপের মধ্যেও মানুষ আবার ফিরে আসছে প্রকৃতি ও প্রাচীন জ্ঞানের পথে — আর যোগসাধনা তারই একটি অঙ্গ।
যোগের জন্মভূমি ভারত। প্রাচীন বৈদিক যুগ থেকেই যোগের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। ঋগ্বেদ, উপনিষদ, যোগসূত্র ইত্যাদি গ্রন্থে যোগসাধনার নানা দিক আলোচিত হয়েছে।
বিশেষ করে পতঞ্জলি মুনি তাঁর “যোগসূত্র”-তে যোগকে একটি পূর্ণাঙ্গ দর্শন ও আত্মশুদ্ধির পথ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। প্রাচীন ভারতের গুরু-শিষ্য পরম্পরায় এই বিদ্যা ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে।
যোগ মানে শুধু শরীরচর্চা নয় — এটি এক ধরণের জীবনদর্শন। 'যোগ' শব্দের অর্থই হল 'যুক্ত হওয়া', অর্থাৎ আত্মা ও পরমাত্মার মধ্যে মিলন ঘটানো।
২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রস্তাবে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২১শে জুনকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১৫ সাল থেকে এই দিনটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে।
২১শে জুন উত্তর গোলার্ধের দীর্ঘতম দিন, যা প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে শক্তি, স্বাস্থ্য এবং সূর্যের সঙ্গে জীবনের সংযোগের। তাই এই দিনটি যোগ দিবস পালনের জন্য যথাযথ।
যোগসাধনা আমাদের জীবনে বহুমুখী উপকার আনে।
প্রথমত, শারীরিক উপকারিতা:
যোগাসন শরীরের নমনীয়তা বাড়ায়, হাড় ও পেশিকে মজবুত করে এবং বিভিন্ন অসুখ থেকে রক্ষা করে। রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
দ্বিতীয়ত, মানসিক স্বাস্থ্য:
বর্তমান সময়ে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, অবসাদ ইত্যাদি সমস্যা বেড়েই চলেছে। যোগনিদ্রা, ধ্যান ও প্রণায়াম মনকে শান্ত রাখে এবং আত্মবিশ্বাস ও মনঃসংযোগ বৃদ্ধি করে।
তৃতীয়ত, আত্মিক উন্নতি:
যোগের মাধ্যমে মানুষ নিজেকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে শেখে। আত্ম-অন্বেষণের পথ হিসেবে এটি চিরন্তন।
চতুর্থত, জীবনধারার ভারসাম্য:
যোগ আমাদের জীবনে একটি ভারসাম্য আনে — খাদ্যাভ্যাস, ঘুম, আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়ন করে।
এই দিনটি উদযাপন করার মাধ্যমে মানুষকে স্বাস্থ্যসচেতন করে তোলা যায়। স্কুল, কলেজ, অফিস, পাড়া-মহল্লায় যোগাভ্যাসের কর্মশালা, শিবির ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এর গুরুত্ব ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
বিশ্ব যখন যান্ত্রিকতা ও প্রযুক্তিনির্ভর জীবনে অভ্যস্ত, তখন এই ধরনের প্রাচীন ও পরীক্ষিত জীবনদর্শনের প্রয়োজনীয়তা নতুনভাবে অনুভূত হচ্ছে।
যোগসাধনা শুধুই শরীরচর্চা নয়, এটি এক পূর্ণাঙ্গ জীবনযাত্রার দর্শন। আন্তর্জাতিক যোগ দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় — স্বাস্থ্যই হল প্রকৃত সম্পদ। এই বিশ্বায়িত সমাজে শান্তি ও ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে যোগই হতে পারে শ্রেষ্ঠ পথ।
তাই আজকের দিনে শুধু যোগের আসনে নয়, আমাদের হৃদয়ে ও কর্মে এই দর্শনটিকে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করাই হোক আমাদের অঙ্গীকার। ধর্মীয় যোগ সাধনার উন্মাদনা যেন না হয়।
Comments :0