শঙ্কর ঘোষাল: ভাতাড়
লাল ঝান্ডা জমি দিয়েছিল, সেই জমি তৃণমূল কেড়ে নেওয়ার পর লাল ঝান্ডাই আবার সেই জমি লড়াই করেই ফিরিয়ে দিলো উচ্ছেদ হওয়া কৃষকদের।
চার বছর আগে ভাতাড়ের কাশীপুর মৌজার গরিবের লুট হয়ে যাওয়া ৬৫ একর জমি ফের দখলে নেওয়ার পর বুদিন হেমব্রম, গোবিন্দ ক্ষেত্রপালরা বলেছেন, ২৫ বছর ধরে চাষ করে আসছিলাম যে জমি, সেই জমি থেকে তৃণমূলের গুন্ডারা আমাদের উচ্ছেদ করেছিল। লাল ঝান্ডা লড়াই করে জোতদারের হাত থেকে ছিনিয়ে জমি দিয়েছিল আমাদের, সেই জমি কেড়ে নিয়েছিল তৃণমূল। আবার সেই হারানো জমি লাল ঝান্ডাই লড়াই করেই ফিরিয়ে দিলো। লাল ঝান্ডাই আমাদের গরিবের বন্ধু।
সারা ভারত কৃষক সভা এবং সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের লড়াইয়ে হুগলী, মেদিনীপুর, বর্ধমান, দার্জিলিঙ সহ রাজ্যের একাধিক জায়গায় চলছে জমির লড়াই। বামফ্রন্ট সরকার ঊর্ধ্বসীমার বাইরের জমি ভূমিহীনদের হাতে দিয়েছিল। ছিল পাট্টা, বর্গাদার বা ভাগচাষীর চাষের অধিকারও স্বীকৃত হয়েছিল। তৃণমূল সরকারের মদতে গ্রামের প্রভাবশালীরা সেই জমিই কাড়তে নেমেছে। হচ্ছে লড়াই।
রবিবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই সাতসকালে কাশীপুর গ্রামের সিপিআই(এম)’র কার্যালয়ের সামনে থেকে বিশাল মিছিল করে জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া মানুষ দলে দলে জমিতে নেমে লাল ঝান্ডা পুঁতে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করলেন। এই জমির অধিকার প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের সামনের সারিতে ছিলেন মহিলারা। শুধু জমি থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন এমন প্রায় ১০০ জনের পাশে দাঁড়ালেন আরো অনেক মানুষ। গ্রামের মানুষের এমন লড়াকু মেজাজ দেখে পুলিশ ও শাসকদল সামনে আসেনি।
মুখ্যমন্ত্রীর দলের লোকরা রাতারাতি সরকারী জমি রায়ত সম্পত্তি বলে জমির চরিত্র বদল করে বিক্রি করে দিয়েছে কোটি টাকায়। এমন ঘটনা ঘটেছে ভাতার থানার কাশীপুর মৌজার কাশীপুর গ্রামে ২০২২সালে। ৬৫ একরের বেশি খাস জমির চরিত্র বদল করে তৃণমূলের নেতারা সেই জমি বিক্রি করে দিয়েছে। এই জমিতে প্রায় ১০০জন চাষ করতেন, তাঁদের মধ্যে ৫২জনের সরকারী পাট্টা ছিল। বাকিরা প্রায় ৩০ বছর দখলে রেখে চাষ করছিলেন। পাট্টা পাওয়া গরিব চাষীদের উচ্ছেদ করার পর সারা ভারত কৃষকসভার নেতারা প্রতিবাদ জানান। তাঁদের উপর আক্রমণ করে তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। আহত হন একাধিক কৃষক নেতা, তাঁদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। এর পরেও লড়াই থেকে লাল ঝান্ডা এক ইঞ্চিও সরে আসেনি।
২০২২ সালে তৃণমূলের নেতাদের মদতে এই জমি রাতারাতি গরিব পাট্টাদারদের নাম বাদ দিয়ে প্রাক্তন জোতদারদের নামে পরিবর্তন হয়। জমির চরিত্র ও সরকারি খাস থেকে রায়ত জমিতে পরিণত হয়। এরপর তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী মাঠে নেমে গরিব পাট্টাদারদের উৎখাত করে সেই জমি প্রাক্তন জমিদারদের হাতে তুলে দেয়। ১০০ জনের বেশি গরিব মানুষ জমি থেকে উচ্ছেদ হয়। পাট্টাদাররা দলবদ্ধভাবে পুলিশও বিডিও’র কাছে যান। পুলিশের ও সি বলেন ‘ওই পাট্টা পুড়িয়ে দিন, ওগুলো বামফ্রন্টের সময়ের, এখন অচল’। কিন্তু লড়াই দমে যায়নি।
Comments :0