সরকারের তহবিল থেকে বিপুল টাকা খরচ করে আফ্রিকার জঙ্গল থেকে বিশেষ বিমানে চিতা উড়িয়ে এনে ছেড়েছিলেন মধ্য প্রদেশের জঙ্গলে। চা ওয়ালা ফকিরের ঘটা করে জন্মদিন পালনের এটাই এলাহি ব্যবস্থা। তাঁকে নায়ক বানিয়ে জঙ্গলে চিতা ছাড়ার গোটা পর্বটাই বড় বাজেটের বলিউডি সিনেমার ঢঙে শুটিং করে তাক লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল দুনিয়াকে। ২০ বছর ধরে বিজেপি শাসনে জর্জরিত ভোটমুখী মধ্য প্রদেশে শাসকের পালে হাওয়া জোগাবার জন্য এমন একটা ধামাকা জরুরি হয়ে পড়েছিল। এতে ডাবল ইঞ্জিনের প্রধান চালকের ভাবমূর্তিতে নতুন পালক যেমন লাগানো যাবে তেমনি ধামাকার চোখ ধাঁধানো চমকে সহযোগী চালকের অপদার্থতা আড়াল করা যাবে। কিন্তু বছর ঘুরে পরবর্তী জন্মদিন আসার আগেই আফ্রিকা থেকে আনা অধিকাংশ চিতার মৃত্যু হলো। ফকির অবশ্য দ্বিতীয়বার জঙ্গলে গিয়ে চিতাদের খোঁজ নেননি। তাঁর লক্ষ্য ছিল ইভেন্টের চমকে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা। সরকারি অর্থে আত্মপ্রচার। সে কাজ যখন হয়ে গেছে তখন চিতা মরল কি বাঁচল তাতে তার কিছু যায় আসে না। যেমন যায় আসে না দেশের বণ্যপ্রাণীদের দুরবস্থা নিয়েও।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে দেশের বিভিন্ন সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ১৪৬টি বাঘের মৃতু হয়েছে। গত ১১ বছরের মধ্যে এত বেশি সংখ্যক বাঘের মৃত্যু কখনো হয়নি। মোদী জমানায় প্রতি বছরই প্রায় লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে বাঘের মৃত্যু। ২০১৩ সালে যেখানে ৬৮ বাঘের মৃত্যু হয়েছে সেখানে ২০১৬ সালে ১২১টি, ২০২১ সালে ১২৭টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। আর গত বছর মারা গেছে ১২১টি। অর্থাৎ গত এক দশকের মধ্যে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে বাঘের মৃত্যু। লক্ষণীয় চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে যে ১৪৬ বাঘের মৃত্যু হয়েছে তার সবটাই প্রায় বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে। মধ্য প্রদেশে মারা গেছে ৩৪টি এবং মহারাষ্ট্রে ৩২টি। এছাড়া উত্তরাখণ্ডে ১৭টি, আসামে ৯টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। কখনো বাঘের সংখ্যা বাড়লে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কৃতিত্ব জাহির করা হয়। কিন্তু ক্রমাগত বাঘের মৃত্যু সংখ্যা বাড়তে থাকলেও সেটা নিয়ে কারও উচ্চবাচ্য নেই।
বণ্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের মতে মূলত দু’টি কারণে বাঘের মৃত্যু বাড়ছে। প্রথমত বাঘেদের বাসযোগ্য অরণ্যের পরিসর কমছে। দ্বিতীয়ত বণ্যপ্রাণ রক্ষায় সরকার যথেষ্ট সচেতন নয় এবং বরাদ্দও যথেষ্ট নয়। চি্তা প্রকল্পকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের মহিমা প্রচারেই কেন্দ্রীয় বরাদ্দের সিংহভাগ খরচ হয়ে যাচ্ছে। অন্য কাজে খরচ করার মতো অর্থ থাকছে না। দেশের মোট আয়তনের তুলনায় ভারতে বনাঞ্চল আন্তর্জাতিক মানের থেকে অনেক কম। ফলে বণ্যপ্রাণ শুধু নয় মানুষের পক্ষেও ভারতের পরিবেশ উপযুক্ত নয়। যখন প্রয়োজন বনাঞ্চলের পরিসর বাড়ানো, নিদেন পক্ষে যা আছে তা রক্ষা করা তখন সরকারই কর্পোরেট মুনাফার স্বার্থে বনাঞ্চল ধ্বংস করে যাচ্ছে। খনি ও শিল্পের জন্য, রাস্তা-রেল নির্মাণের জন্য, নগরায়নের জন্য যথেচ্ছভাবে বনাঞ্চল ধ্বংস করার ছাড়পত্র দিচ্ছে সরকারই। বিপরীতে মানুষকে ধোঁকা দিতে বনের সংজ্ঞা বদল করে গাছপালা এমন জায়গাকে বন বলে দেখানো হচ্ছে। সড়ক ও রেলের দু’পাশে গাছ থাকায় তাকে বন বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এই মোদী সরকার দেখাতে চাইছে তাদের জমানায় বনাঞ্চল অনেক বেড়ে গেছে। এও আর এক জুমলা।
EDITORIAL
আরও এক জুমলা
×
Comments :0