YECHURY BJP TMC

বিজেপি’কে হটাতেই রাজ্যে লড়াই তৃণমূলের বিরুদ্ধেও: ইয়েচুরি

জাতীয় রাজ্য

হাওড়ায় অনিল বিশ্বাস ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে সীতারাম ইয়েচুরি এবং মহম্মদ সেলিম। ছবি: অমিত কর

বিজেপি’কে দেশের সরকার থেকে হটানোই লক্ষ্য সিপিআই(এম)’র। সারা দেশের মতো বাংলাতেও সেই লক্ষ্যেই লোকসভা ভোট লড়বে পার্টি। তার জন্যই এ রাজ্যে বিজেপি’র পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও লড়তে হবে সিপিআই(এম)’কে। 

শনিবার হাওড়ায় সাংবাদিক সম্মেলনে ফের এই ব্যাখ্যা দিয়েছেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। সাংবাদিক সম্মেলনে অংশ নেন সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং হাওড়া জেলা সম্পাদক দিলীপ ঘোষ। হাওড়ায় পার্টির জেলা দপ্তর অনিল বিশ্বাস ভবনেই চলছে রাজ্য কমিটির তিন দিনের বর্ধিত অধিবেশন। 

ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘ভারতের চরিত্রকে রক্ষা করার জন্যই কেন্দ্রের সরকার থেকে দূরে রাখতে হবে বিজেপি’কে। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, গণরাজ চরিত্রকে রক্ষার পক্ষে রয়েছে এমন শক্তির পাশে থাকবে সিপিআই(এম)। রাজনৈতিক দলগুলির মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’-তে সে কারণেই রয়েছে পার্টি। কিন্তু নির্বাচনী বোঝাপড়া রাজ্যে রাজ্যে নির্দিষ্ট পরিস্থিতি অনুযায়ী ঠিক হবে।’’

ইয়েচুরির ব্যাখ্যা, ‘‘একেক রাজ্যে একেকরকম পরিস্থিতি রয়েছে। যেমন কংগ্রেস ও বামপন্থীরা ‘ইন্ডিয়া’-তে থাকলেও কেরালায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এই লড়াই আছে বলে বিজেপি এখানে বিধানসভায় একটি আসনও পায়নি। আবার তামিলনাডুতে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি একজোট লড়বে। এডিএমকে-ও বিজেপি’র সঙ্গ ছেড়েছে। তেমন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকে নিয়ে সিপিআই(এম) লড়বে। জাতীয় স্তরে লক্ষ্য বিজেপি’কে হটানোর লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যই রাজ্যে এই লড়াই হবে। বর্ধিত অধিবেশনে তা নিয়েই আলোচনা হচ্ছে।’’

ইয়েচুরি মনে করিয়েছেন যে বিজেপি’র নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ’র সবচেয়ে পুরনো শরিক আকালি দল বা শিবসেনা এখন জোটের বাইরে। 

কেন্দ্রে বিজেপি সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী প্রচার করছেন বেকারি ৬ বছরে সবচেয়ে কম। আসলে শিক্ষিত স্নাতক বা তার বেশি পড়াশোনা করেছে এমন যুবদের ৪০ শতাংশ কর্মহীন। যেটুকু কাজ মিলছে সেখানে সুরক্ষা নেই, নিশ্চয়তা নেই। জিনিসের দাম সমানে বাড়ছে। আজ পেঁয়াজ তো কাল অন্য কিছু। মানুষকে বাঁচানোর লড়াই নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বর্ধিত অধিবেশনে।’’ 

ইয়েচুরি বলেন, ‘‘বিজেপি প্রচার করছে জি-২০ শীর্ষ বৈঠক দিল্লিতে করে বিশ্বগুরু হয়েছেন মোদী। বাস্তবে এই গোষ্ঠীর দেশগুলির মধ্যে মাথাপিছু জিডিপি সবচেয়ে কম ভারতে, কাজের বাজারে অংশগ্রহণের হার সবচেয়ে কম ভারতে, বেকারির হার সবচেয়ে বেশি, মানবোন্নয়ন সূচকে সবচেয়ে পিছিয়ে।’’ 

প্রচার আর বাস্তবতার ফারাক বোঝাতে তথ্য দেন ইয়েচুরি। তিনি বলেন, ‘‘ মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-তে কারখানা উৎপাদন ১৪ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল। দশ বছরে হয়েছে ৫.৯ শতাংশ। সরকারি বিনিয়োগ গত বছরের তুলনায় ৭২.৫ শতাংশ কম। বেসরকারি বিনিয়োগের প্রস্তাব ৭৯.২ শতাংশ কমেছে। যার অর্থ নতুন কর্মসংস্থান হবে না।’’

তিনি বলেন, মানুষের জীবনে আসল বিষয় এগুলিই। তার বদলে সকালে ‘বন্দে ভারত’ বিকেলে ‘নমো ভারত’- এমন নানা নামে প্রকল্পের উদ্বোধন করছেন মোদী। ধামাধরা মিডিয়া প্রচার করছে।’’ 

তিনি স্পষ্ট বলেন, দুর্নীতি বিরুদ্ধে তদন্তে আপত্তি নেই। কিন্তু ইডি-কে রাজনৈতিক দরকষাকষির সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহারের বিরোধী সিপিআই(এম)। বিজেপি’তে যোগ দিলেই তদন্ত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। 

সেলিম জানান যে এদিন দু’টি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে পরাস্ত করার আহ্বান জানিয়ে গ্রহণ করা হয়েছে একটি প্রস্তাব। দ্বিতীয় প্রস্তাব ৮ নভেম্বর প্যালেস্তাইনে ইজরায়েলের একতরফা হামলার প্রতিবাদ। সেলিম বলেন, ‘‘মানবতাবিরোধী এই গণহত্যায় মদত দিচ্ছে আমেরিকা। মহাজাতি সদন থেকে রামলীলা ময়দান পর্যন্ত মিছিলে বামফ্রন্টের বাইরের বামপন্থী দলগুলিও থাকবে।’’ 

বামফ্রন্টও এই মিছিলে যোগদানের আবেদন জানিয়েছে। 

Comments :0

Login to leave a comment