মন্দির উদ্বোধন হবে দীঘায়। কলকাতা থেকে দমকলের ইঞ্জিন থেকে ফায়ার ফাইটারদের নিয়ে গিয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর!
মন্দির উদ্বোধনের জন্য অস্থায়ীভাবে তৈরি ‘পার্কিং লট’ এলাকায় মজুত রাখা ছিল দমকল দপ্তরের কলকাতা উত্তর ও কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রের দমকল কর্মী থেকে আগুন নেভানোর জন্য গাড়ি। শুধু দমকলের কর্মী নয়, আগুন মোকাবিলার জন্য অত্যাধুনিক ‘ফায়ার ফাইটিং রোবট’ পর্যন্ত কলকাতা থেকে তুলে রাখা হয়েছিল দীঘার মন্দির উদ্বোধনের কর্মসূচীতে। দমকল দপ্তর সূত্রের খবর, স্রেফ একটি উদ্বোধনের জন্য দীঘাতে চারদিন ধরে ডিউটি দেওয়া হয়েছিল এক জন ডেপুটি ডিরেক্টর, ৩ জন ডিএফও (ডিভিশনাল ফায়ার অফিসার), ৯ জন স্টেশন অফিসার, ১০ জন সাব-অফিসার, সামনে থেকে আগুন নেভানোর কাজে দক্ষ (লিডার) ২২ জন দমকলকর্মী, ১৭ জন দমকল ইঞ্জিন গাড়ির চালক সহ ৫০ জন ফায়ার অপারেটর (এফও) ও এএফও (অক্সিউলারি ফায়ার অপারেটর)।
কলকাতা ও শহরতলি এলাকায় ছোটো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুটি ইঞ্জিন গেলেও ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে যান দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু। আর কলকাতায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ১৪ জনের মৃত্যুর ঘটনার পরও দীঘা থেকে কলকাতায় ফিরতে দেখা যায়নি দমকলমন্ত্রীকে। বরং এদিন বিজেপি নেতা সস্ত্রীক দিলীপ ঘোষ মন্দির উদ্বোধনে এসে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, ‘‘আপনি কখন এসেছেন?’’ বিজেপি নেতাকে মমতা ব্যানার্জি জানান, ‘‘আরে, আমি তিনদিন ধরে বসে আছি। আমি কেন, পাঁচ-সাতটা মিনিস্টারকে এখানে বসিয়ে রেখেছি।’’
কলকাতার মেছুয়া বাজারে হোটেলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে যখন মানুষ মারা যাচ্ছেন তখন দীঘায় মন্দির উদ্বোধনের জন্য টানা চারদিন ধরে কলকাতা সহ গোটা রাজ্য থেকে দমকলের ইঞ্জিন থেকে ‘ফায়ার ফাইটার’দের তুলে নিয়ে রাখা ছিল। গোটা একটা হোটেল পুড়ে ছারখার হওয়ার সঙ্গে ২ শিশু, ২ মহিলা সহ ১৪ জনের মৃত্যুর পর দমকল দপ্তরের এক শীর্ষ আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘আধিকারিকদের একটা বড় অংশকে দীঘায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে ফোর্সও পাঠানো হয়েছে। একটা মন্দির উদ্বোধনকে ঘিরে দমকলের মতো জরুরী পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের কেন পাঠানো হলো, সেটাই আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।’’ দপ্তরের আধিকারিকরা এখন বলছেন, ‘‘দীঘায় পাঠানো কর্মীরা এখানে থাকলে মেছুয়ার এই বিপর্যয়ের সময় নিশ্চিতভাবেই কাজে আসতো। আগুন মোকাবিলার জন্য যত বেশি ‘ক্রু’ তত বেশি কাজের সুবিধা। অগ্নিকাণ্ডের কোনও বড় ঘটনা ঘটলে বেশি ‘ক্রু’কে কাজে লাগানো হলে বিশ্রাম দিয়ে সতেজ কর্মীদের ব্যবহার করার সুবিধা মিলতো। কিন্তু কর্মীসঙ্কটে তা করা যায়নি।’’ একথা দপ্তরের আধিকারিকদেরই।
গত ২৪ এপ্রিল দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের মন্ত্রী সুজিত বসুর উপস্থিতিতে এক বৈঠক আয়োজিত হয়েছিল। সেই বৈঠকে দমকলের শীর্ষ আধিকারিকদের উপস্থিতিতে দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন পর্বে কীভাবে দমকল দপ্তর কাজ করবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তার ভিত্তিতে রাজ্যের ৯টি জেলা থেকে দমকল ইঞ্জিন থেকে ফায়ার অপারটেরদের পাঠানোর হয়েছিল। গত রবিবার থেকে দমকলকর্মীদের পাঠানো হয়েছিল দীঘাতে। রবিবার থেকে এদিন উদ্বোধন পর্ব মিটিয়ে দমকল কর্মীদের কলকাতায় ফিরে আসার কথা।
কলকাতা সহ রাজ্যের প্রায় ৯টি জেলা থেকে দমকলের গাড়ি, বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিক থেকে আগুনের মোকাবিলায় সরাসরি কাজে নামা ফায়ার ফাইটারদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দীঘাতে। শুধু দমকলের ইঞ্জিন, আধিকারিক থেকে কর্মীদেত দীঘায় নিয়ে যাওয়া হয়নি। গোটা দীঘা এলাকায় তল্লাশি করার জন্য কলকাতা থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দমকল দপ্তরের ২৫টি মোটর বাইককে। প্রতিটি মোটর বাইকে চালক সহ একজন আরোহী তো ছিলই। সেই বাইকে হঠাৎ করে কোনও অগ্নিসংযোগের ঘটনা নজরে আসলে তা শুরুতেই মোকাবিলা করার জন্য ব্যবস্থা থাকে বাইকে। কলকাতার দুই দমকল কেন্দ্র থেকেও সেই গাড়ি এনে মজুত করে রাখা ছিল দীঘাতে। দমকলের এক আধিকারিকের কথায়, মুখ্যমন্ত্রী সহ রাজ্য মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, সমাজের বিশিষ্ট মানুষজন মন্দির উদ্বোধনে থাকবেন। তারজন্য পুলিশের তৎপরতা থাকবে। কিন্তু গোটা রাজ্য থেকে দমকল বাহিনীকে কেন নিয়ে যাওয়া হলো তার কোনো সদুত্তর নেই।’’
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তো আছেই। পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, নদীয়া, উত্তর ২৪ পরগণা, বীরভূমের মতো জেলা থেকে পাঠানো হয়েছে দীঘাতে। চারদিন ধরে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তাদের ডিউটি দিতে হয়েছে মমতা ব্যানার্জির আবাস এলাকায়, হেলিপ্যাডে, পার্কিং লট, মন্দির চত্বরে।
Mechhuya Fire
আগুনে পুড়ছেন মানুষ, দীঘায় ব্যস্ত দমকল বাহিনী!

×
Comments :0