সোমবার চতুর্থ দফার লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের আট কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৭৬.৬৮ শতাংশ। রাত ৯টা পর্যন্ত এমন তথ্যই পাওয়া গিয়েছে। বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনা ঘটেছে এদিনও। ছাপ্পা ভোট থেকে পোলিং এজেন্টকে বের করে দেওয়ার ঘটনার কিছু খবর মিলেছে প্রতিটি কেন্দ্র থেকেই। নির্বাচন কমিশনে সব মিলিয়ে ১৭০৫টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে এদিন। তবে শাসক দলের বাধা বিপত্তি ঠেলে সকাল থেকেই লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন মানুষ।
মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া ভোট মোটের ওপর শান্তিপূর্ণ ছিল। মন্তেশ্বরে ও কালনা এলাকায় অশান্তির কিছু খবর মিলেছে, গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে, একজন আহত হয়েছেন। এদিন সবমিলিয়ে ৬৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিভিন্ন ঘটনায়। এবার আট কেন্দ্রেই ভোটের হার ২০১৯ সালের তুলনায় কম পড়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে।
এদিন বীরভূমে ইলামবাজারে বুথ দখলের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, নানুরে ইভিএম-এ কালি ঢেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে শাসক দল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। এসব সত্ত্বেও মানুষ বাধা অতিক্রম করে ভোট দিয়েছেন এদিন। বীরভূমের পাইকরে ভোট চলাকালীন এক জওয়ানের মৃত্যু হয়, তাঁর নাম মহেন্দ্র সিং। বহরমপুর কেন্দ্রের অন্তর্গত সালারের বেশ কয়েকটা বুথে সকাল থেকে পুলিশের সামনেই তৃণমূলের সন্ত্রাস জারি ছিল, ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। তবে ভোটাররাও প্রতিরোধ করেছেন এদিন। এছাড়া বেশ কিছু বুথে ছাপ্পা ভোটের খবর মিলেছে। কংগ্রেসের দাবি, ভরতপুরের প্রায় ২৫টি বুথে দফায় দফায় ছাপ্পা ভোট হয়েছে। বড়ঞা, বহরমপুরের একাধিক বুথে ছাপ্পার অভিযোগ করেছে কংগ্রেস।
বর্ধমান পূর্ব এবং বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্র থেকেও কিছু বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর এসেছে। বর্ধমান-দুর্গাপুরে বিজেপি এবং তৃণমূল একসঙ্গে মিলে গন্ডগোল পাকানোর অভিযোগ ওঠে। বিজেপি’র দিলীপ ঘোষ ও তৃণমূলের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরি নির্বাচনিবিধি ভেঙে ভোটারদের প্ররোচনা দিলেও মানুষ সে পথে হাঁটেননি। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ভোট লুট করতে এলে তা সমবেতভাবে রুখেছেন মানুষ। মঙ্গলকোটে বোমা পাওয়া যায় ভোট চলাকালীনই। পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুরে ৯৯ নম্বর বুথে সিপিআই(এম)’র পোলিং এজেন্টকে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে ছাপ্পা ভোট দিতে শুরু করে তৃণমূলের দুষ্কৃতী বাহিনী। একই ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা হয় রূপনারায়ণপুরের ৭৮ নম্বর বুথে। রূপনারায়ণপুর পিটাকিয়ারি এলাকাতেও তৃণমূল দুষ্কৃতীরা সিপিআই(এম) কর্মীদের ওপর চড়াও হয় বলে জানা যায়।
দুর্গাপুরে বহিরাগতদের জড়ো করে এদিন বেলা ৪টা নাগাদ দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর তানসেন প্রইমারি বিদ্যালয়ের বুথে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার চেষ্টা করে তৃণমূলীরা। সিপিআই(এম)’র পোলিং এজেন্ট প্রতিবাদ করলে তাঁর ওপর চড়াও হয় তারা। সিপিআই (এম)’র বুথ ক্যাম্পে ভাঙচুর চালাতে দেখে মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। গলসী এলাকায় জাগুলিপাড়ায় তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে দু’জন আহত হন বলে জানা যায়। জামুড়িয়া, পাণ্ডবেশ্বর, রানিগঞ্জ, আসানসোল, কুলটি, বারাবনি জুড়ে চোখে পড়েছে বিজেপি’র প্রতি তৃণমূলের প্রশ্রয়ের ছবি। এদিন প্রতিরোধের ভোট হয়েছে আসানসোল কেন্দ্রে। নবগ্রাম, জামবাদ, বহুলা এলাকায় ভোটারদের আটকে দেওয়া সহ বেশ কিছু ফন্দি ফিকির ব্যর্থ হয়ে গেছে। দ্বিতীয়ার্ধে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার জন্য তৃণমূলীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে বহু জায়গায়। বুথ রক্ষার জন্য বাম ও কংগ্রেস কর্মীরা সচেষ্ট থাকায় বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি শাসক দল।
কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট কেন্দ্রেও একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। চাপড়া, তেহট্টের থানারপাড়া, পলাশীপাড়া বিধানসভার বিলকুমারী,কালিগঞ্জের পাটিকাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কিছু বুথে গন্ডগোল সৃষ্টি করেছে তৃণমূলীরা। ভয় ভীতি দেখিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টির যেমন চেষ্টা চালিয়েছে শাসক তৃণমূল, তেমনই মানুষের প্রতিরোধের মেজাজও দেখা গেছে এদিন। নাকাশিপাড়া, কালিগঞ্জে সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থকদের ওপর হামলা হয়েছে।
General Elections 2024
বিক্ষিপ্ত অশান্তি, বাধা ঠেলে ভোটও দিয়েছেন মানুষ
×
Comments :0