Editorial

দায় নিতে হবে মোদী-শাহকেই

সম্পাদকীয় বিভাগ

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ সহ বিজেপি’র নেতা মন্ত্রীদের ঘোষিত শান্ত, স্বাভাবিক ও সন্ত্রাসমুক্ত কাশ্মীরে সশস্ত্র জঙ্গিরা এক লহমায় সরাসরি গুলি করে মেরে ফেলল ২৮জন নিরপরাধ পর্যটককে। ভূস্বর্গের পহেলগামের অদূরে বৈসরণ ভ্যালিতে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য প্রাণ ভরে আহরণের সময় আচমকাই গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে প্রাণ দিতে হলো তাদের। নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনিতে মুড়ে রাখা কাশ্মীরে এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা নিঃসন্দেহে অনেক গুরুতর প্রশ্ন ও সন্দেহকে নতুন করে সামনে এনে দিয়েছে। কাশ্মীর নিয়ে মোদী-শাহ-রা এতদিন ধরে খোদ সংসদের ভেতরে, প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে এবং দলীয় সভায় যেসব কথা বলেছেন সেসব কি তবে মনগড়া মিথ্যার বেসাতি? যদি কাশ্মীর সন্ত্রাসবাদীদের কবল থেকে বেরিয়ে মোদী-শাহ-র দৌলতে শান্ত ও স্বাভাবিকই হয়ে থাকে তবে পহেলগামে এমন নজিরবিহীন বীভৎস ঘটনা ঘটল কি করে? তাহলে ধরে নিতে হবে মোদী-শাহ-রা এতদিন ধরে রাজনৈতিক স্বার্থে মিথ্যে কথা বলে এসেছেন অথবা নিরাপত্তার নামে এলাহি আয়োজন করে দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দেওয়া হলেও কার্যকরী নিরাপত্তা বলতে কিছুই নেই। নেতা-মন্ত্রী-আমলাদের জন্য ভূরি ভূরি নিরাপত্তা বলয় থাকলেও সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা পুরোপুরি নিরাপত্তাহীন। আর সেইজন্যই ২৮ জন নিরীহ পর্যটককে এভাবে জীবন দিতে হলো। এর দায় তো মোদী-শাহকে নিতে হবে। নিহতের পরিবার তো বটেই জবাবদিহি করতে হবে গোটা দেশের কাছে।
কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের ইতিহাস বহুদিনের। সন্ত্রাসবাদীদের প্রধান লক্ষ্য নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ, সরকারি কর্তারা। জঙ্গি কার্যকলাপের বিরোধী হলে স্থানীয় মানুষও তাদের লক্ষ্য হয়ে যায়। কখনও বহিরাগত বলে পরিযায়ী শ্রমিকদের খুন করতে দেখা গেছে। কিন্তু পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনা নেই বললেই চলে। মোদী জমানায় সেটাও ঘটে গেল বিশালাকারে। জম্মু-কাশ্মীরে প্রতিনিয়তই ছোট, বড়, মাঝারি জঙ্গি হামলা হয়ে থাকে। পহেলগামের মতো হামলা বিরল। এর আগে ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে পুলওয়ামায় সিআরপিএফ জওয়ানদের কনভয়ে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে ৪০ জওয়ানকে খুন করেছিল জঙ্গিরা।
পুলওয়ামার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চরম নিরাপত্তা বিপর্যয় ও গোয়েন্দা ব্যর্থতার গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল। হামলার আগাম খবর থাকলেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ছাড়া হামলার আশঙ্কায় জওয়ানদের জম্মু থেকে বিমানে শ্রীনগর পাঠানোর কথা হলেও সরকার তাদের সড়ক পথে পাঠিয়েছে। বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ি কয়েকদিন নানা জায়গায় ঘুরে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনি পেরিয়ে পুলওয়ামার বিস্ফোরণ কীভাবে ঘটালো সেই রহস্য আজও দেশবাসী জানতে পা‍‌রেনি। শুধু শুনে গেছে নেতা-মন্ত্রীদের গরম গরম ভাষণ আর হুঙ্কার।
আরএসএস-বিজেপি বরাবর বলে এসেছে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের মূলে সংবিধানের ৩৭০ ধারা। ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েই মোদী একতরফাভাবে সেই ধারা বাতিল করলেন। বললেন এরপর সন্ত্রাসবাদ শুকিয়ে মরে যাবে। পুলওয়ামার ঘটনার বদলায় পাকিস্তানের বালাকোটে বোমাবর্ষণ করে মোদীরা দম্ভ করে বলেছিলেন সন্ত্রাসবাদের মাজা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। তার আগে ২০১৬ সালে নোট বাতিলের সময় মোদী বড়গলা করে বলেছিলেন সন্ত্রাসবাদীদের তহবিলে টাকা ঢোকার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। বাস্তবে মোদী-শাহ সব ভাষণই অন্তঃসারশূন্য মিথ্যায় পর্যবসিত হয়েছে। ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর নতুন নতুন এলাকায় বিশেষ জম্মু সেক্টরের বিভিন্ন জেলায় সন্ত্রাসবাদীদের দৌরাত্ম্য ছড়িয়েছে। কাশ্মীরের মানুষের বিপন্নতা আরও বেড়েছে। বস্তুত কাশ্মীরকে বলির পাঁঠা বানিয়ে হিন্দুত্ব সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জমি শক্ত ও প্রসারিত করেছে, ক্ষমতার রাজনীতিকে শক্তিশালী করেছে। কিন্তু সন্ত্রাসবাদের মূল সমস্যা সমাধানে কোনও ব্যবস্থা নেই। উলটে তাদের পদক্ষেপ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদকেই ইন্ধন জুগিয়েছে। আসলে অবশিষ্ট ভারতে সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদের রাজনীতির পালে জোরালো হাওয়া বজায় রাখতে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ জরুরি। মোদী-শাহরা সেই পথেই হাঁটছেন।

Comments :0

Login to leave a comment