COMRADE SITARAM YECHURY

লড়াইয়ের শপথে বিদায় কমরেড সীতারাম ইয়েচুরিকে

জাতীয়

দিল্লির এইমস হাসপাতালে কমরেড সীতারাম ইয়েচুরির দেহদানের সময় সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ এবং পরিবার।

অনিন্দ্য হাজরা: নয়াদিল্লি

সকাল ১০:১৫ মিনিটে শেষ বারের মত একে গোপালন ভবনে তিনি এলেন। শায়িত রইলেন ঠিক বেলা ৩ টে অবধি। তারপর মিছিল, স্লোগান, কান্নাঘন বিদায়। বিকেল ৪:৪০ মিনিটে দিল্লির এইমস হাসপাতালে সীতারাম ইয়েচুরির দেহদান হয়েছে। 
সকাল এগারোটার কিছু আগে থেকেই এসেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা। সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর এ কে গোপাল ভবনে শায়িত ছিল দেহ। আগাগোড়া থেকেছেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। আর অসংখ্য পার্টিকর্মী। 
অনন্য জীবনবোধ আর সেইসঙ্গে রসবোধের পরিচয় দিয়ে গিয়েছেন কমরেড সীতারাম ইয়েচুরি। সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তরে বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সবসময় সহজ। এদিন কারও চোখের জল এদিন বাধ মানেনি। প্রিয় নেতার দেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর সময় ভেঙে পড়েছেন অনেকেই। 
দিল্লি সহ লাগোয়া অঞ্চলগুলি থেকে এসেছেন শ্রমিকরা। শ্রমজীবী বিভিন্ন অংশের মানুষ ভিড় করেছেন, সুশৃঙ্খল ভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদককে। 
এদিন সীতারাম ইয়েচুরির মরদেহ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তরে আনার কিছু পরেই উপস্থিত হন জয়রাম রমেশ, মনীশ শুক্লার মত কংগ্রেস নেতারা। একদিকে সিপিআই(এম) নেতা প্রকাশ কারাত, মহম্মদ সেলিম, বিমান বসু, হান্নান মোল্লা, মানিক সরকারের মতো দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। তখনই একে গোপালন ভবনে হাজির হচ্ছেন কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম, সোনিয়া গান্ধীর মতো নেতানেত্রীরা। লক্ষ্ণৌ থেকে উড়ে এসেছেন সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব। এসেছেন এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার। দিল্লির ‘আপ’ নেতৃবৃন্দ দফায় দফায় এসেছেন। 
সাম্প্রদায়িক বিজেপি-কে পরাজিত করতে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে গড়ে ওঠে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ। তার জন্য কঠিন পরিশ্রম করতে হয়েছে সীতারাম ইয়েচুরিকে। মঞ্চের লক্ষ্য, পরিকল্পনা জনসমক্ষে ব্যাখ্যা করতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন তিনি। সেই অবদান স্মরণ করতে দেখা গিয়েছে প্রায় সব অংশকে। 
একে গোপালন ভবনের সামনের দু’টি লনে এদিন ২টি-২টি করে মোট ৪টি সাদা রঙের তাবু খাটানো হয়। একদিকের লনে রাখা হয় দেহ। এদিন পার্টি দপ্তরে প্রায় পাঁচ ঘন্টা ছিল কমরেড সীতারাম ইয়েচুরির দেহ। এক মুহূর্তের জন্যও সেখানে স্লোগান দেওয়া থামাননি জেএনইউ সহ দিল্লির কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির এসএফআই কর্মীরা। এই সংগঠনের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতিও ছিলেন তিনি। বাংলা, হিন্দি, মালায়ালাম, ইংরেজি, তামিল, তেলুগু সহ একের পর এক ভাষায় শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয় প্রিয় নেতাকে। 
সীতারাম ইয়েচুরিকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ভিয়েতনাম, রাশিয়া, চীন, নেপালের মত দেশের প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। সীতারাম ইয়েচুরির মেমোয়ার বুকে লেখার জন্য পাশাপাশি বসে থাকতে দেখা গিয়েছে ভিয়েতনাম এবং প্যালেস্তাইনের পিএলও'র প্রতিনিধিকে। 
সীতারাম ইয়েচুরিকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সিপিআই(এম-এল) লিবারেশন, সিপিআই, ফরোয়ার্ড ব্লক সহ দেশের বামপন্থী দলগুলি। ট্রেড ইউনিয়ন, কৃষক সংগঠনগুলির তরফেও শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে তাঁকে। 
বেলা ৩ টের সময় যখন সীতারাম ইয়েচুরির দেহ পার্টি অফিস থেকে বের করা হচ্ছে, তখন তাঁর মাতৃভাষা তেলুগুতে স্লোগান দেওয়া শুরু করলেন ছাত্র কর্মীরা। শুরু হল মিছিল। রাজস্থান, পাঞ্জাব থেকে শুরু করে দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ হয়ে পূর্ব, মধ্য ও দক্ষিণ ভারত পা মেলায় মিছিলে। মিছিলের সামনে লাল ইউনিফর্ম পরা স্বেচ্ছাসেবকরা। পিছনে জনতার ঢল। মিছিল কয়েক কিলোমিটার পথ ঘুরে শেষ হয় তিন হাট্টি চৌকে পুরনো সিপিআই(এম) অফিসের সামনে। সেখান থেকে গাড়িতে করে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লি এইমসে।
দিল্লি এইমসে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লাগে প্রায় আধাঘন্টা। প্রিয় কমরেডের দেহ যখন হাসপাতালের এনাটমি বিভাগে ঢোকানো হচ্ছে, তখনও বাসে করে হাসপাতাল ভরিয়ে ফেলছেন দলীয় কর্মীরা। 
ইন্টারন্যাশনালের সুরে তখন পরিবেশ ভারাক্রান্ত। আরেকদিকে সীতারাম ইয়েচুরিকে প্রকৃত সম্মান জানাতে লড়াইয়ের শপথ।

Comments :0

Login to leave a comment