Bengal Global Business Summit

এক রাতে ১লক্ষ কোটি বেড়ে গেল বিনিয়োগ বাস্তবায়ন!

রাজ্য কলকাতা

এক রাতের ফারাকে সাত বছরের বিনিয়োগ বাস্তবায়নকে ১ লক্ষ কোটি টাকা বাড়িয়ে নিলেন মমতা ব্যানার্জি!
২৪ ঘণ্টা আগে অষ্টম বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী গত সাত বছরে বাণিজ্য সম্মেলন থেকে ১২ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব রূপায়িত হয়েছে বলে জানিয়ে ছিলেন। মাঝে শুধু ২৪ ঘণ্টা পার হয়েছে। 
অষ্টম বাণিজ্য সম্মেলনের সমাপ্তি দিনে মমতা ব্যানার্জি কী বললেন? 
‘‘ এর আগে সাতটি বিজিবিএস থেকে ১৯ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাবের মধ্যে ১৩ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ ইতিমধ্যেই কাজ হয়ে গেছে। বাকি ৬ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিভিন্ন স্তরে আছে। খুব দ্রুতই কাজ শেষ হবে।’’ বৃহস্পতিবার বলেছেন মমতা ব্যানার্জি।
এক রাতে জলভাতের মতো ১ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রস্তাব নতুন করে রূপায়িত হয়ে যায়। সেখানে এবারের অষ্টম পর্যায়ের বিজিবিএস থেকে রাজ্যের বিনিয়োগ প্রস্তাবও লাফিয়ে বাড়বে সেটাই স্বাভাবিক। অষ্টম পর্যায়ে কত বিনিয়োগ প্রস্তাব এল?
গত ২০২৩ সালের বিনিয়োগ প্রস্তাবকে ছাপিয়ে গেছে এবারের টাকার অঙ্ক। শুধু গতবারই কেন? গত সাত বছরে সব বিনিয়োগ প্রস্তাবে পার করে দিয়েছে এবারের বিনিয়োগ প্রস্তাব থেকে সমঝোতা চুক্তি। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায়,‘‘ সবাই অপেক্ষা করছেন এবারে কত বিনিয়োগ এল। এবার বিটুবি(বিজনেস টু বিজেনস), বিটুজি(বিজেনেস টু  গভর্নমেন্ট) সব মিলিয়ে ২১২টি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। এবার ৪ লক্ষ ৪০ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে রাজ্যে।’’ বিপুল এই বিনিয়োগ প্রস্তাব অবশ্য সম্পূর্ণ নয়। কারণ মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, গত বুধবার মুকেশজী, সজ্জন জিন্দালরা যা বলেছেন সেটা আলাদা। মুকেশজী তো ৫০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ১লক্ষ কোটি বিনিয়োগ করবেন বলে ঘোষণা করেছেন। পরে আমার সঙ্গে একান্তে কথা হয়েছে। তাতে আরও বেশ কিছু ক্ষেত্রে উনি বিনিয়োগ করবেন বলে জানিয়েছেন।’’ বিনিয়োগ বন্যায় ভেসে গেছে বাণিজ্য সম্মেলন।
এই প্রস্তাব থেকে কর্মসংস্থান কত হবে তা অবশ্য জানা যায়নি। তবে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন,‘‘ এবার ৫ হাজার বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিল। আমাদের কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। আমরাই এই কাজ করব।’’
ঘটনাচক্রে এদিনই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিসন বেঞ্চে শুনানির জন্য উঠেছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের জাল স্যালাইনের জন্য প্রসূতি মৃত্যুর মামলা। আর সেই মামলাতেই প্রধান বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন,‘‘রাজ্য কী স্যালাইন তৈরির কোনও কারখানা তৈরি করতে পারে না? একটা স্যালাইন তৈরির কারখানা করতে কত টাকা খরচ হয়!’’ তারপরই রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘ রাজ্যের কী কোনও ওষুধ তৈরির কারখানা আদৌ আছে?’’ এজি প্রধান বিচারপতিকে খোঁজ নিয়ে জানাবেন বলেছেন। আর সেই রাজ্যেই রাতারাতি ১ লক্ষ কোটি টাকা বাড়তি বিনিয়োগ চলে আসে!
রাত পার হতেই কীভাবে বাড়তি ১ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ এরাজ্যে বাস্তবায়িত হয়ে গেল? তার জবাব অবশ্য মমতা ব্যানার্জি দেননি। তাঁর কথা একটাই, ‘ইনভেস্টমেন্ট ইজ ইনভেস্টমেন্ট। ইফ ইউ শেয়ার ইয়োর জয়, ইউ উইল এনজয়!’’ তাই মুখ্যমন্ত্রী হিসাব দিয়েছেন। ফলে সবাই তা মেনে নিয়ে এদিন তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর বিনিয়োগ তথ্য।
আর এদিনই নিজেদের যোগ্য বলে ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির দিকে যেতে চেয়েছিলেন একদল শিক্ষক। কলকাতা হাইকোর্টের রায় ২৭ হাজার চাকরি বাতিলের পর যাঁদের চাকরির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার মুখে। সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলা এখন বিচারাধীন। দেশের শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চেও বেশ কয়েকবার শুনানির পরও রাজ্যের তরফ থেকে যোগ্য-অযোগ্য বিভাজনের কোনও স্পষ্ট বক্তব্য রাখা হয়নি। অথচ ২৭ ডিসেম্বর থেকে ধর্মতলার খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন শিক্ষক, শিক্ষিকরা। আর বাণিজ্য সম্মেলেনের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী উপভোগ করতে বলছেন।
২৪ ঘণ্টা আগে বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারের মূল মঞ্চে ঠাঁই হয়নি রাজ্যের একজন মন্ত্রীরও। মঞ্চে ঘোরাফেরা করেছেন শিল্প দপ্তরের প্রধান সচিব। কিন্তু শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজাকে আশেপাশে দেখা যায়নি। এদিন অবশ্য বিদেশি রাষ্ট্রদূত থেকে দেশ ও রাজ্যের প্রথম সারির শিল্পপতিদের একজনও ছিলেন না। মুখ্যমন্ত্রী যখন মঞ্চে আসেন তখন খাঁ, খাঁ করছে বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারের বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ। মঞ্চের ফাঁকা আসন পূর্ণ করতে এবার ডাক পড়ে রাজ্য মন্ত্রীসভার সদস্যদের। তারপরই দেখা যায় একে একে অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজা, পর্যটন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, কলকাতার মেয়র এসে ভর্তি করেন বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ। 
শিল্পপতিদের অনুপস্থিতিতে এদিন কার্যত বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে দর্শকাসন সবই ছিল ফাঁকা, ফাঁকা। মঞ্চ থেকে একের পর উদ্যোগপতিদের নাম ধরে ডাকছিলেন শিল্প দপ্তরের প্রধান সচিব। তাঁরা কেউ বলছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরে ডিম পাড়া মুরগির খামারে বিনিয়োগ করার ঘোষণা, কেউ আবার জানাচ্ছিলেন মাছের খাবার তৈরির কথা। তবে তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘোষণা ছিল এরাজ্যে স্মার্ট মিটার তৈরির নয়া কারখানা গড়ার কথা। দেশের দুই শহর মহীশূর, হায়দরাবাদের পর স্মার্ট মিটার তৈরির তৃতীয় কারখানা গড়ে উঠবে এ রাজ্যেই। আগামী ১৮মাসের মধ্যেই স্মার্ট এনার্জি মিটার তৈরি করার কথা ঘোষণা করেছেন উদ্যোগপতি।

Comments :0

Login to leave a comment