কলকাতা বন্দরের ইউনিয়নের মান্যতা নির্বাচনেও চললো অবাধে ভোট লুট। তৃণমূলের দুষ্কৃতীবাহিনী মারধর করে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থেকে বের করে দিল প্রগতিশীল জোটের পোলিং এজেন্টদের। মঙ্গলবার ছিল নির্বাচন। এই নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে তুললো তৃণমূলীরা। এমনই অভিযোগ সিআইটিইউ এবং আইএনটিইউসি প্রগতিশীল জোটের। ঘটনার পর পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে প্রগতিশীল জোট। এই প্রহসনের ভোটের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে পুলিশ ও তৃণমূলের দুষ্কৃতী বাহিনীর মিলিত হামলার একাধিক দৃশ্য দেখেছেন রাজ্যবাসী। মঙ্গলবার পোর্টের ইউনিয়নের মান্যতা নির্বাচনেও ওই একই ছবি ধরা পড়ল। পুলিশ ও তৃণমূলের দুষ্কৃতিবাহিনী একযোগে সামান্য ইউনিয়নের মান্যতা নির্বাচনে হামলা লুঠপাট চালালো। সিআইটিইউ ও কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি’র মিলিত প্রগতিশীল জোটের প্রার্থীদের ভোট লুট করে নির্বাচনকে কার্যত প্রহসনে পরিনত করা হলো এদিন। ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন সিআইটিইউ ও আইএনটিটিইউসির নেতৃবৃন্দ।
প্রগতিশীল জোটের যাঁরা প্রার্থী তাঁরাও এই প্রহসনের নির্বাচনকে মেনে নিচ্ছেন না। তাঁরা পুনঃনির্বাচনের দাবি তুলেছেন। এবিষয়ে আদালতের দারস্থ হওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার কলকাতা বন্দরের ইউনিয়নের মান্যতা নির্বাচনের ভোট ছিল। মোট ৩৮ আসনে ভোট হয়। বন্দরের চারটি দপ্তর যথা বন্দরের প্রধান কার্যালয়, নেতাজী সুভাষ ভবন, পান বাজার সংলগ্ন মেরিন অফিস ও সিএমই-এর অফিসে ভোট গ্রহন কেন্দ্র করা হয়। সকাল থেকেই বন্দরের শ্রমিক কর্মচারীরা ভোট দিতে এই চারটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রেই লম্বা লাইন দেন। উল্লেখ্য, অন্যান্যবারে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট হলেও এবার বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ভোট দেওয়ার সময়সীমা রাখা হয়।
ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হতেই ঝামেলা ও গন্ডগোল শুরু করে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। পুলিশকেও তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের সহযোগী ভূমিকায় দেখা যায় বলে অভিযোগ। এদিন সকালে ভোটকেন্দ্রগুলিতে প্রগতিশীল জোটের প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টরা ঢুকতেই বাধার মুখে পড়েন। পুলিশ ও তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা পোলিং এজেন্টদের মারধর করে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। এর পরেই পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শ্রমিকরা ভোট দেওয়ার জন্য নাছোড়বান্দা জেদ নিয়ে ভোটের লাইনে ঠাঁয় দাড়িয়ে থাকেন। রীতিমতো ক্ষোভ জানাতে থাকেন তাঁরা।
সেই ক্ষোভ বিক্ষেভের চাপে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে এগিয়ে চলে এবং অনেকেই ভোট দিয়ে প্রগতিশীল জোটের প্রার্থীদের জয়ের ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন। আর এতেই প্রমাদ গুনতে থাকে দুষ্কৃতীবাহিনী। তারা ফের আসরে নামে। গণনার সময় প্রগতিশীল জোটের প্রার্থীদের কাউন্টিং এজেন্টদেরও ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। শেষপর্যন্ত কার্যত লুটের ভোটে জয়ী হয় তৃণমূল সহ তাদের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের প্রার্থীরা।
এই অবাধে ভোট লুট নিয়ে নিয়ে এদিন ক্ষোভ ছড়ায় প্রগতিশীল জোটের প্রার্থীদের মধ্যে। তাঁরা পুনরায় নির্বাচনের দাবি তোলেন। এমন কি এবিষয়ে নির্বাচন আধিকারিক শঙ্কর সোমের কাছে অভিযোগও করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে নির্বাচনে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরাজ নিয়ে নিয়ে তিনিও মুখে কুলুপ এঁটে থেকেছেন। প্রহসনের এই ভোটের বিরুদ্ধে পুনঃনির্বাচনের দাবি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রগতিশীল জোটের প্রার্থীরা। তাঁদের বক্তব্য, প্রতিবারের মতো না হয়ে কেন বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হবে এই প্রশ্নেরও উত্তর চাই। এর ফলে ভোটদাতা শ্রমিকরা সমস্যায় পড়েছেন। এটা ভোটাধিকার হরণ ছাড়া আর কিছুই নয়।
Comments :0