Lok Sabha Elections 2024

চাষের খরচ থেকে ফসলের দাম, যন্ত্রণার কথাই শুনলেন বাম প্রার্থী

রাজ্য লোকসভা ২০২৪

ক্যাপশন- পূর্বস্থলীতে বামফ্রন্টের সিপিআই(এম) প্রার্থী নীরব খাঁর নির্বাচনী প্রচারের ছবি।

আলেখ শেখ: পূর্বস্থলী 


সবজির দাম মিলছে না হাটে। শুধুই ফড়েদের পেট ভরছে। হাটে চাষি ফসলের যে দাম পাচ্ছেন, তার থেকে ঢের বেশি দামে ফড়ের হাত ঘুরে ক্রেতাকে কিনতে হচ্ছে। পেঁয়াজ চাষিদের অভিযোগ, উৎপাদন খরচ অনেক বাড়লেও পেঁয়াজের দাম মিলছে না। লোকসান হচ্ছে সবজি উৎপাদন করে। সোমবার সাতসকালে পারুলিয়ার সবজি বাজারে মৃত্যুঞ্জয় বৈদ্য, এসানুর শেখ, বাসুদেব মাহাতো’রা তাঁদের জীবনযন্ত্রণার কথাই জানালেন একান্ত নিজের লোক নীরব খাঁকে। তাঁকে শুনতে হলো গাঁয়ের কৃষক, কারবারিদের সুখ-দুঃখের কথা।
জমজমাট পারুলিয়ার সবজির বাজার। হাজার দশ-বারো খুচরো, পাইকারি সবজির  ব্যবসায় যুক্ত মানুষের কাছে এদিন সকাল থেকেই লাল ঝান্ডার প্রচার শুরু করেন বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে বামফ্রন্ট মনোনীত সিপিআই(এম) প্রার্থী নীরব খাঁ। হরেকরকম সবজি, পিঁয়াজ চাষির সাথে এখানে দেখা মিলল। চাষিরা বললন, গ্রামে শিক্ষিত বেকারদের কাজ নেই, রুজি-রোজগারের টানে অনেকে পরিযায়ী শ্রমিকের জীবন বেছে নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বাজারে কাঁচামাল বিক্রি করার ব্যবসায় নেমে পড়েছেন। দিন দিন বেকারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতে বাজারের ব্যবসায়ীদের রোজগারও কমে যাচ্ছে। তাই এই অবস্থার পরিবর্তন চান পূর্বস্থলীর পারুলিয়া বাজারের ব্যবসায়ীরা।
এদিন লাল ঝান্ডার প্রার্থীকে কাছে পেয়ে সবজি ব্যবসায়ীরা বললেন, আমরা কিভাবে বাঁচব বলুন? জিনিসের দাম আগুন, ওষুধের দাম লাগামছাড়া। কোনও সরকার আমাদের কথা ভাবছে না। বামফ্রন্ট সরকারের সময় পারুলিয়ায় কলেজ তৈরি হয়েছিল। সেখানে পড়াশোনা করে বহু ছেলে-মেয়ে শিক্ষিত হয়েছিলেন। কিন্তু এই চাকরি বেচাকেনার বাজারে তারা চাকরি পাননি। তাই এখন তারা কাঁচামাল বিক্রির ব্যবসাতেই বাধ্য হয়ে নেমে পড়েছেন।  
পারুলিয়া বাজার থেকে তাঁত শিল্পের জন্য পরিচিত তেলেনি বাজারে যখন প্রার্থী পোঁছালেন, রোদ তখন বেশ চড়া। সেখানে বাম প্রার্থীকে স্থানীয় মানুষ জানান, আমাদের অবস্থা মোটেও ভালো নয়। কারণ একসময় এই এলাকা তাঁত শিল্পপ্রবণ এলাকা বলে সুপরিচিত ছিল। কিন্তু রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের অবহেলায় আজ তাঁত শিল্প ধ্বংসপ্রায়। তাঁতিদের হাতে পয়সা না থাকায় তাঁরা বাজারে জিনিসপত্র কিনতে পারছেন না। এদিন বাগআঁচড়া থেকে বড়গাছি গ্রাম পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারে তাঁতি নারায়ণ দেবনাথ, বিজয় সাঁতরা’রা তাঁদের সুখ দুঃখের কথা জানান বাম প্রার্থী নীরব খাঁকে। 
ফলেয়া, বাবুইডাঙ্গা, কালেখাঁতলা বাজারে নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় বাম প্রার্থীকে শুনতে হয় পেঁয়াজের দাম না থাকা থেকে বিড়ি শ্রমিকদের দুরবস্থার কথা।  পেঁয়াজ চাষি বিপুল রায়, বিড়ি শ্রমিক মায়া বৈদ্য নানা অভিযোগ করেছেন ‘দুই ফুল’-র নীতির বিরুদ্ধে। উৎপাদিত পেঁয়াজের দাম না থাকায় কৃষকরা চরম লোকসানের  মুখে পড়েছেন। অন্যদিকে, বিড়ি মালিকরা পাতা ও তামাকের ইচ্ছামত ঘাটতি কেটে নেন। খারাপ বিড়ি পাতার দায় মালিকরা নেন না।  ছাঁট বিড়ির জন্য মালিকরা মজুরি থেকে পয়সা কেটে নেয়। মালিকরা সরকার নির্ধারিত মজুরি হাজার বিড়ি পিছু ২৬৯ টাকা শ্রমিকদের মজুরি দিচ্ছে না সবক্ষেত্রে শাসকের মদতে। 
নীরব খাঁ বলেন, গ্রামের মানুষদের লুট দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও রুটি রোজগারের প্রশ্নে জেগে উঠতে হবে সকলকে। সংগঠিত মানুষের এমন মেজাজ তৈরি করত হবে,  যাতে তৃণমূল ও বিজেপি মানুষের কাছে গিয়ে ভোট চাইতে ভয় পায়। ওরা ইতিমধ্যেই  বুঝতে পেরে মানুষের মধ্যে বিভাজনের রাজনীতি প্রবেশ করাতে চাইছে। কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র বিভাজনের রাজনীতি ডাহা ফেল করেছে। আমাদের বিশ্বাস, এরাজ্যেও বিভাজনের রাজনীতি নিশ্চিত ফেল করবে। কারণ, ২০২১’র বিধানসভা নির্বাচন থেকে ২০২৩’র পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাম ও গণতান্ত্রিক দলগুলির ভোট বৃদ্ধি হয়েছে। সাম্প্রদায়িক বিজেপি-র প্রাপ্ত ভোট ৩৮ শতাংশ থেকে নেমে ২৩ শতাংশে এসে ঠেকেছে। তাই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বাম গণতান্ত্রিক দলের শক্তি বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা আশাবাদী। 
এদিন দিনভর প্রচার চলে কালেখাঁতলা-১, কালেখাঁতলা-২, মুকসিমপাড়া, নিমদহ অঞ্চলের কিছু অংশে। এই কর্মসূচিতে বাম প্রার্থী ছাড়াও অংশগ্রহণ করেন দুই প্রাক্তন বাম বিধায়ক প্রদীপ কুমার সাহা ও সুব্রত ভাওয়াল, পার্টিনেতা বিন কাশিম শেখ, প্রমুখ।    

Comments :0

Login to leave a comment