Editorial

রেগা বিড়ম্বনা

সম্পাদকীয় বিভাগ

গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় যে কেন্দ্রীয় প্রকল্পটি ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করতেন আজ‍‌কের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই প্রকল্পটিই করোনাকালে গ্রামীণ ভারতকে মৃত্যু ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রধান অবলম্বন হয়ে উঠেছিল। করোনা বিপর্যয় পর্ব শেষ হতেই আবার সেই প্রকল্পটি গুরুত্বহীন করে দেবার চেষ্টা শুরু হয়ে গেছে। আসলে মোদী সরকার আগের সরকারের কোনও চিহ্ন টিকিয়ে রাখতে রাজি নয়। পুরানোকে নতুন মোড়কে পুরে বা একটু অদল-বদল করে নতুন নামে চালু করে নিজ কীর্তির ধ্বজা ওড়াতেই বেশি ভালবাসেন মোদী। সমাজকল্যাণমূলক অতীতে সব প্রকল্পকে সরিয়ে নতুন নতুন নামে হাজির করা হয়েছে। কিন্তু চেষ্টা করলেও বদলাতে পারেনি রেগা অর্থাৎ গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্পকে। দুর্বল গ্রামীণ অর্থনীতিতে গরিব মানুষের বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে এই প্রকল্পটি এতটাই অপরিহার্য হয়ে উঠেছে যে এই প্রকল্প বাতিল হলে সরকারও বেকায়দায় পড়ে যাবে। আসলে অর্থনীতির উন্নতির যত গল্প মোদীরা শোনান না কেন গ্রামে যে কর্মসংস্থান নেই, মানুষের রুজির সঙ্কট যে ভয়াবহ রেগা প্রকল্পই তার জ্বলন্ত প্রমাণ।

প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে মূলত বামপন্থীদের চাপে এই প্রকল্প চালু হয়। অন্যান্য সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্প থেকে এটা সম্পূর্ণ আলাদা। এটি গরিব মানুষের জন্য সরকারের ‘দয়ার দান’ নয়। এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে গ্রাম ভারতে গরিব মানুষের কাজের অধিকার আইনিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অর্থাৎ গ্রামের মানুষের যদি কাজ না থাকে তবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার তাদের কাজ দিতে বাধ্য। বর্তমানে কৃষকরা যেমন লাগাতার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যকে আইনি গ্যারান্টি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে। সরকার এমএসপি ঘোষণা করেই দায়মুক্ত হচ্ছে। কৃষকরা সেই দামে ফসল বিক্রি করতে পারছে কিনা দেখার দায় নেই। তাই কৃষকরা চান আইন করে ফসলের ন্যূনতম ঘোষিত সহায়ক মূল্য পাওয়া নিশ্চিত করা হোক। কিন্তু মোদী সরকার সেটা কোনও অবস্থাতেই মানবে না। রেগার দাবিও কৃষকরা বহুকাল ধরে করে আসছিল। কিন্তু সেই সরকার বরাবর অস্বীকার করেছে। যখন বামপন্থীদের সমর্থনের উপর ভিত্তি করে প্রথম ইউপিএ সরকার তৈরি হয় একমাত্র তখনই বামপন্থীদের চাপে সরকার বাধ্য হয় সেটা মেনে নিতে। আজ যদি সংসদে বামপন্থীদের শক্তি বেশি থাকত তাহলে সরকারকে বাধ্য করা যেত এমএসপি’র আইনি গ্যারান্টির ব্যবস্থা করতে।

রেগা নগদ টাকা বা ডোল বিতরণের প্রকল্প নয়।  এটা কাজের বিনিময়ে মজুরি প্রকল্প। চাষের সময় বাদ দিয়ে গ্রামে যখন মানুষের কাজ থাকে না তখন এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ উন্নয়ন তথ্য স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টি হয় কর্মহীনদের কাজ দিয়ে। তাই এই প্রকল্প ভরতুকি প্রকল্প নয়, উন্নয়ন প্রকল্পেরই ভিন্ন রূপ। এই প্রকল্প তাই বাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া জরুরি। কিন্তু মোদী সরকার প্রতি বছরই বিশেষ করে করোনার পরে বরাদ্দ কমিয়ে ফেলছে। আইন অনুযায়ী কাজ চাইলেই কাজ দিতে হয়। অথচ কাজ করার পরও মজুরি বকেয়া থাকছে বরাদ্দ কম বলে। গ্রামীণ উন্নয়নের এক মাপকাঠি হিসাবে বিবেচনা করা যায় রেগাকে। গ্রামীণ অর্থনীতির যদি উন্নতি হয়, মানুষের পর্যাপ্ত কাজের সুযোগ যদি থাকে তাদের মজুরি যদি বাড়ে তাহলে কেউ রেগায় কাজ করবে না। কিন্তু বাস্তবে রেগার চাহিদা কিন্তু কমছে না। তার মানে মোদী জমানার এক দশকে গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নতি হয়নি। তাই মানুষ অতি কম মজুরির রেগা প্রকল্পে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই সত্য আড়াল করতেই সরকার কৌশলে বরাদ্দ কমিয়ে রেগার চাহিদা কমিয়ে দেখাতে চাইছে। পারলে পুরোপুরি বন্ধও করে দিতে চায়। 

Comments :0

Login to leave a comment