AIKS CONFERENCE ENDS

লড়াইয়ের ঢেউ তুলে মোদী সরকার হঠাও; কৃষক সম্মেলন থেকে আহ্বান

জাতীয়

Aiks

মোদী সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য আসন্ন ২০২৩ সালকে সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ বছর বলে চিহ্নিত করেছেন সারা ভারত কৃষকসভার নেতৃবৃন্দ। 

শুক্রবার বিকালে সারা ভারত কৃষকসভার সর্বভারতীয় সম্মেলনের শেষে কেরালার ত্রিচূড় শহরে বিরাট জনসমাবেশে তাঁরা দেশবাসীর উদ্দেশে আহবান জানিয়েছেন, মোদী সরকারকে সরাতে না পারলে কৃষকদের বিপদ কাটবে না। আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালের গোড়া থেকেই তাই কৃষক আন্দোলনের ঢেউ তুলতে হবে। রাজ্যে রাজ্যে স্থানীয় আন্দোলনের পাশাপাশি দিল্লিতে সংসদ অভিযানে বিষধর সরকারকে নাড়িয়ে দিতে হবে।


এদিন ত্রিচূড় শহরের টেকেনগার্ড ময়দানে কৃষকসভার ডাকা জনসভায় কৃষক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ভাষণ দিয়েছেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও। কেরালায় এলডিএফ সরকার কীভাবে শ্রমিক-কৃষক-গরিব মানুষের স্বার্থবাহী পদক্ষেপ নিচ্ছে তার উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, আরএসএস শুধু সাম্প্রদায়িকই নয়, বিজেপি সরকারের মাধ্যমে তারা কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষা করছে। কৃষকদের ঋণ মকুব করতে রাজি নয়, কিন্তু কর্পোরেটদের ঋণ ছাড় দিচ্ছে। আমরা কেরালার কৃষকদের রক্ষা করার জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের ওপরে অতিরিক্ত টাকা দিচ্ছি, রাবারের মতো অর্থকরী ফসলের বিক্রিতে কৃষকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার জন্য ৫০০ কোটি টাকার প্রাইস স্টেবিলাইজেশন ফান্ড করেছি। কিন্তু আমাদের ক্ষমতা তো সীমিত। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিকে প্রাপ্য টাকা না দেওয়ায় সাধ্য আরও কমে যাচ্ছে।


তিনি এই বিকল্প নীতির আরও উদাহরণ দিয়ে বিজয়ন বলেছেন, মোদী সরকার সব রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ বেসরকারি কোম্পানিগুলির হাতে তুলে দিচ্ছে। কেরালার পেপার ফ্যাক্টরি লিমিটেডকে কেন্দ্র বেসরকারি হাতে বিক্রি করতে উদ্যোগ নিলে আমরা কেরালার মানুষের স্বার্থে সেটা কেন্দ্রের কাছ থেকে কিনে নিয়েছি এবং সরকারি হাতে রেখেছি। রাজ্য সরকারের জমি হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার বাজার দরে আমাদের কাছ থেকে দাম আদায় করেছে। মোদী সরকার এরকমই জনবিরোধী। 


কেরালার এই বিকল্পকে সারা দেশের কৃষকদের প্রাপ্য বলে দাবি করে দেশজুড়ে আন্দোলনের বার্তা দিয়েছেন কৃষকসভার নেতারা। সারা ভারত কৃষকসভার সভাপতি অশোক ধাওয়ালে বলেছেন, কেরালার বিকল্পকে সারা দেশে পেতে হলে সবার আগে মোদী সরকারকে সরাতে হবে। ওরাই সবচেয়ে বড় বাধা। 

সংগঠনের সহ সভাপতি হান্নান মোল্লা বলেছেন, কালা কৃষি কানুন প্রত্যাহারের দাবিতে দিল্লিতে কৃষকরা যখন আন্দোলন করছিলেন তখন মোদী সরকার তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা পুলিশি কেস দায়ের করেছে, অন্যদিকে মন্ত্রী অজয় টেনির ছেলে লখিমপুরে গাড়ি চাপা দিয়ে কৃষক খুন করেছে। কৃষক আন্দোলনের চাপে মোদী সরকার কালা কানুন প্রত্যাহারের সময় সরকার লিখিত আশ্বাস দিয়েছিল এসবের সঠিক বিচার হবে। এক বছর পার হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত ন্যায়বিচার পায়নি কৃষকরা। কেন্দ্রের গদি থেকে এই মিথ্যাবাদী বিশ্বাসঘাতকদের হটাতে না পারলে কৃষকদের কোনও স্বার্থ রক্ষা করা যাবে না। 


কৃষকসভার নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক বিজু কৃষ্ণণ বলেছেন, আমাদের সম্মেলনের সংকল্পই হলো বিজেপি সরকারকে হটানো। স্বাধীনতার পরে এত বিপজ্জনক সরকার দেশে কখনো আসেনি। এই সরকার শুধু নয়া উদারনীতির রূপায়ণের মাধ্যমেই কৃষকদের সর্বনাশ করছে না, সাম্প্রদায়িক ভেদ সৃষ্টির বিষ ছড়াচ্ছে, সংবিধানের গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করছে। ২০২৪ সাল খুব দূরে নয়, মোদীকে হটাতে হলে তার আগে ২০২৩ সালেই আবার ২৬ জানুয়ারি এবং ১ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত কিষান মোর্চার দিল্লি অভিযান সফল করতে হবে। তারপর ৫ এপ্রিল সংসদ অভিযানকে ভারতের ইতিহাসের বৃহত্তম করে তুলতে হবে।
লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ সালে হলেও ২০২৩ সালেই রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মধ্য প্রদেশ, কর্ণাটকে বিধানসভার নির্বাচন আছে। 

অশোক ধাওয়ালে বলেছেন, লোকসভার আগে এই রাজ্যগুলির বিধানসভা নির্বাচনেই বিজেপি’কে ধাক্কা মারতে হবে। হান্নান মোল্লা বলেছেন, আগামী ২৬ জানুয়ারি এবং ১ ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করতে ২৪ ডিসেম্বরেই দিল্লিতে সংযুক্ত কিষান মোর্চার বৈঠক হবে। 


এদিন ত্রিচূড়ে কৃষকসভার প্রকাশ্য সমাবেশে এছাড়াও ভাষণ দিয়েছেন সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের নেতা এ বিজয়রাঘবন। দিল্লির ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের সময় দেশের সুদূরতম প্রান্ত কেরালা থেকে এক হাজার কৃষক সংহতি জানাতে দিল্লির সীমান্তে গিয়েছিলেন, রাস্তায় থেকে ছিলেন উত্তর ভারতের কৃষকদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে। 

এদিন কৃষকসভার নেতৃবৃন্দ কেরালার মানুষের কাছে সেই উজ্জ্বল ভূমিকার জন্য অভিনন্দন জানিয়ে আবারও দিল্লি অভিযানে কেরালার মানুষের অংশগ্রহণের আবেদন করেছেন। ত্রিচূড় শহরের রাস্তা এদিন লাল পতাকায় ছেয়ে গিয়েছিল। বড় বড় মিছিল এসে সমাবেশস্থলকে পরিপূর্ণ করে দেয়। সমাবেশস্থলের চারপাশ ঘিরেও উঠে এসেছিল লালকেল্লার পাশে কৃষক আন্দোলনের ছবি। কেরালা আর দিল্লির দূরত্ব ঘুচিয়ে গোটা দেশের কৃষকদের দাবিতে গলা মিলিয়েছেন ত্রিচূড়ের মানুষ। 

Comments :0

Login to leave a comment