Madan Ghosh

কমরেড মদন ঘোষের জীবনাবসান

রাজ্য

 সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির প্রাক্তন সদস্য ও কৃষক আন্দোলনের নেতা কমরেড মদন ঘোষের জীবনাবসান ঘটেছে। বৃহস্পতিবার রাতেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। শুক্রবার সকালে ৭টা ১০ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বর্ধমানে বাড়িতেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১। কমরেড মদন ঘোষের প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেছে সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো এবং সারা ভারত কৃষক সভার সর্বভারতীয় নেতৃবৃন্দ। শুক্রবার দুপুরে সিপিআই(এম)’র বর্ধমান জেলা কমিটির দপ্তরে তাঁর মরদেহে সিপিআই(এম) এবং বিভিন্ন গণসংগঠন ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়, মরদেহে মাল্যদান করেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সহ পার্টি নেতৃবৃন্দ। তারপরে তাঁর মরদেহ নিয়ে শোকমিছিল করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির জন্য মরণোত্তর দেহদান করা হয়। 
শুক্রবার সকালেই কমরেড মদন ঘোষের মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়ে বর্ধমান শহরে, জেলায় এবং রাজ্যে। সকাল থেকেই ভাতছালার প্রয়াত নেতার বাড়িতে দলে দলে মানুষ আসতে থাকেন শোকার্ত হৃদয়ে। সকাল ন’টা নাগাদ বাড়ির আশেপাশে রীতিমতো ভিড় হয়ে যায় প্রিয় নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য অমল হালদার, জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তাপস সরকার, অপূর্ব চ্যাটার্জি সহ বর্ধমান শহর ও সদরের পার্টি নেতৃত্ব কমরেড মদন ঘোষের বাড়িতে পৌঁছে যান মৃত্যুসংবাদ পেয়েই। প্রয়াত নেতার মরদেহে লাল পতাকা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পার্টির নেতৃত্ব। বহু সাধারণ মানুষ, শ্রমজীবী গরিব মহিলারাও ছুটে এসেছিলেন প্রিয় নেতার চলে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে। বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলেছেন অনেকে।
সকাল সাড়ে দশটায় কমরেড মদন ঘোষের মরদেহ নিয়ে আসা হয় সিপিআই(এম)’র পূর্ব বর্ধমান জেলা দপ্তরে। লাল পতাকা লাগানো মোটরসাইকেলে শোকমিছিলে মরদেহ সেখানে এসে পৌঁছয়। সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টে পর্যন্ত কমরেড মদন ঘোষের দেহ সেখানেই শায়িত থাকে সবার শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য। গরম উপেক্ষা করে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অগণিত শ্রমজীবী গরিব মানুষ যাঁরা মদন ঘোষকে তাঁদের প্রিয়জন ভাবতেন তাঁরা ছুটে আসেন শোকার্ত হয়ে। গোটা বর্ধমান জেলাকে কমরেড মদন ঘোষ হাতের তালুর মতো চিনতেন। ব্যাঙ্কে চাকরি পেয়েও কমরেড বিনয় চৌধুরির প্রভাবে তা ছেড়ে দিয়ে পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী হিসাবে বর্ধমান জেলার মানুষের জন্য সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন মদন ঘোষ। শ্রমজীবীদের সংগ্রামে, মানুষের উন্নয়নে তিনি দীর্ঘদিন ভূমিকা পালন করেছেন। পার্টির জেলা সম্পাদক হিসাবে, অবিভক্ত বর্ধমান জেলার সভাধিপতি হিসাবে কোথায় কোন পাড়াতে মহল্লায় বস্তিতে মানুষ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন, জানতে পারলেই নিজে ছুটে গেছেন, পার্টি নেতৃত্বকে সেখানে পাঠিয়েছেন, মানুষের পাশে থেকেছেন। এদিন সেইসব অভিজ্ঞতার কথাই শুনিয়েছেন দূরান্তের গ্রামগুলি থেকে আসা মানুষজন। এদিন পূর্ব বর্ধমান জেলার সর্বত্র পার্টির দপ্তরগুলিতে লাল পতাকা অর্ধনমিত করা হয়। 
সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরোর পক্ষ থেকে একটি শোকবার্তায় বলা হয়েছে, সর্বদা মাটির কাছাকাছি থাকা কমরেড মদন ঘোষ মার্কসবাদ লেনিনবাদে অবিচল ছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে ও সারা দেশে কৃষক আন্দোলনের প্রসারে ভূমিকা পালন করেছেন। কমরেড মদন ঘোষের প্রয়ানে শোকজ্ঞাপন করে বামফ্রন্ট সভাপতি বিমান বসু বলেছেন, নিষ্ঠাবান কমিউনিস্ট ছিলেন তিনি। মার্কসবাদের প্রতি দায়বদ্ধ কমরেড মদন ঘোষ নিয়মানুবর্তিতার উদাহরণ ছিলেন। সারা ভারত কৃষকসভার সাধারণ সম্পাদক বিজু কৃষ্ণন ও সভাপতি অশোক ধাওয়ালে শোকজ্ঞাপন করে বলেছেন, হরেকৃষ্ণ কোঙার, বিনয় চৌধুরি, রামনারায়ণ গোস্বামী, বিনয় কোঙার সহ অভিজ্ঞ কৃষক নেতাদের সান্নিধ্য ও মাটির অভিজ্ঞতায় কমরেড মদন ঘোষ শানিত হয়েছিলেন এবং পশ্চিমবঙ্গের কৃষি কমিশনে দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা পালন করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষকসভার সম্পাদক অমল হালদার ও সভাপতি বিপ্লব মজুমদারও শোকজ্ঞাপন করেছেন মদন ঘোষের প্রয়াণে। শোকজ্ঞাপন করেছেন সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভাপতি তুষার ঘোষ ও সম্পাদক নিরাপদ সর্দার। সিপিআই(এম)’র ঝাড়খণ্ড রাজ্য কমিটির সম্পাদক প্রকাশ বিপ্লব শোকবার্তা পাঠিয়েছেন। ত্রিপুরার কৃষকসভা তাঁর প্রয়াণে শোক জ্ঞাপন করেছে।  
এদিন কমরেড মদন ঘোষকে পার্টির জেলা দপ্তরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পার্টি নেতৃবৃন্দ। তাঁর মরদেহে রক্তপতাকা ও মালা দিয়েছেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক ও পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম, পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, রবীন দেব, আভাস রায়চৌধুরি, সুমিত দে সহ নেতৃবৃন্দ। প্রয়াত নেতার মরদেহে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পার্টি নেতা দেবব্রত ঘোষ, অমল হালদার, অচিন্ত্য মল্লিক, সৈয়দ হোসেন, গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি, প্রদীপ রায়, গৌতম ঘোষ, শ্যামলী প্রধান, জামির মোল্লা, পার্থ মুখার্জি, মীনাক্ষী মুখার্জি, ধ্রুবজ্যোতি সাহা, শতরূপ ঘোষ, সুদীপ সেনগুপ্ত, মনোদীপ ঘোষ, পরেশ পাল। এছাড়াও প্রবীণ পার্টি নেতা নৃপেন চৌধুরি, বিপ্লব মজুমদার, তুষার ঘোষ, নিরাপদ সর্দার, অরিন্দম কোঙার, কার্তিক ঘোষ ও ডাঃ ফুয়াদ হালিম কমরেড মদন ঘোষের মরদেহে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তাঁর পরিবারের পক্ষে মালা দিয়েছেন প্রয়াত ঘোষের দুই ভাই তড়িৎ ঘোষ ও কল্লোল ঘোষ, কন্যা মৈত্রী ঘোষ, নাতনি কাজরী মজুমদার সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। 
এদিন পূর্ব বর্ধমান জেলা বামফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ ফজলুল হক, শওকত আলি, স্বপন মালিক, বিজেপি’র জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা, তৃণমূলের পক্ষে অরূপ দাস মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কমরেড মদন ঘোষের প্রতি। বিকাল ৪টের পর মরদেহ নিয়ে বিশাল জনপ্লাবনে শোকমিছিল এগিয়ে চলে। সামনে ছিল ৮১টি অর্ধনমিত লাল পতাকা নিয়ে স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ, আন্তর্জাতিক সংগীতের মধ্য দিয়ে মিছিল পার্কাস রোড ধরে জেলখানার পাশ দিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দিকে এগিয়ে যায়। দু’পাশে তখন অগনিত মানুষ বর্ধমান শহর ও জেলার উন্নয়নের অন্যতম রূপকার মদন ঘোষকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

Comments :0

Login to leave a comment