অজয় দাশগুপ্ত: কালনা
খেটে মানুষের একটা বড় অংশ তাঁদের রুটি-রুজি, অধিকার, গণতন্ত্র আদায়ের জন্য আন্দোলনে প্রস্তুত। আমরা, নিজেরা, এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে সংগঠনকে কতটা প্রস্তুত করতে পারছি, তার উপর এর সাফল্য নির্ভর করছে।
শনিবার সকালে কালনা শহরের ‘পুরশ্রী’ হলে সিপিআই(এম) পূর্ব বর্ধমান জেলা ২৬তম সম্মেলনের প্রতিনিধি অধিবেশনের উদ্বোধন করতে গিয়ে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরী একথা বলেন। তিনি সম্প্রতি চলমান আর জি কর আন্দোলনের উদাহরণ দিয়ে বলেন, এই আন্দোলনের মধ্যদিয়ে রাজ্যের মানুষের গত ১৩বছর ধরে অবদমিত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। গণতন্ত্রের জন্য মানুষের আকাঙ্ক্ষা, দুর্নীতিতন্ত্র ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে এই চলমান আন্দোলনে। এটা ছিল পুরোদস্তুর রাজনৈতিক। ঘটনাক্রমে, রাজ্যের তৃণমূল সরকার এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকার, দুটো সরকারকেই এই আন্দোলনের শামিল সাধারণ মানুষের প্রতিপক্ষ হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। আমাদের দায়িত্ব, শ্রেণিচেতনা যুক্ত করে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নতুন তরঙ্গের শ্রেণি আন্দোলন গড়ে তোলা। সম্মেলন থেকে তারই দিশা আমাদের নিতে হবে।
এদিন খসড়া রাজনৈতিক-সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করতে গিয়েও বিদায়ী জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন গত তিন বছরে সংগঠিত আন্দোলনে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়ার উদাহরণ দিয়ে বলেন, ২০২২ সালের ৩১আগস্ট আইন অমান্য আন্দোলন করতে গিয়ে তৃণমূল সরকারের ব্যাপক দমন-পীড়নের শিকার হতে হয়েছে পার্টিকে। পুলিশ মিছিল আক্রমণ করে কাঁদানে গ্যাস, লাঠি চালালে রাজ্যবাসী অংশগ্রহণকারী নিরস্ত্র মানুষের প্রবল প্রতিরোধ প্রত্যক্ষ করে। ক্ষিপ্ত তৃণমূল প্রশাসন পার্টির রাজ্য সম্পাদক সহ ১২১জনের বিরুদ্ধে দুটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। ৫২জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ হেফাজত বা জেল হেফাজতে রাখা হয়। জেলা সম্পাদক বলেন, যাঁরা গ্রেপ্তার হয়ে জেলে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে পার্টির সমর্থক গরিব সাধারণ মানুষ, খেতমজুরও ছিলেন। আমরা যখন তাঁদের পরিবারের কাছে সহানুভূতি জানাতে গিয়েছি, তখন তাঁদের পরিবারের মহিলারা উলটে আমাদের বলেছেন, ‘‘মানুষের দাবিতে জেল খাটতে হচ্ছে, এটা তো গর্বের বিষয়।’’ এই বিকশিত চেতনার পরিচয় পেয়ে আমরা সমৃদ্ধ হয়েছি। মানুষের মেজাজ টের পেয়েছি।
রক্তপতাকা উত্তোলন প্রবীণ পার্টিনেতা জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য। তিনি ছাড়াও শহীদ বেদীতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অঞ্জু কর, আভাস রায়চৌধুরী, রাজ্য কমিটির সদস্য অমল হালদার, অচিন্ত্য মল্লিক, তুষার ঘোষ, মীনাক্ষী মুখার্জি, জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন। কমরেড মদন ঘোষ নগরে কমরেড মহারানী কোঙার ও কমরেড তরুণ রায় মঞ্চে কমরেড রামকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় কক্ষে প্রতিনিধি অধিবেশনের কাজ শুরু হয়। সম্মেলন পরিচালনা করছে অমল হালদার, সাইদুল হক, তমাল মাঝি, অসীমা রায় ও সুরেন হেমব্রমকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমন্ডলী। সভাপতিমন্ডলীর পক্ষে শোক প্রস্তাব ও শহীদ কমরেড রাজিবুল হক এবং শহীদ কমরেড পুলক সরকার স্মরণে প্রস্তাব উত্থাপন করেন অমল হালদার। নীরবতা পালন করে শ্রদ্ধা জানান প্রতিনিধিরা।
এদিনই খসড়া রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রতিবেদনের উপর প্রতিনিধিরা আলোচনা শুরু করেছেন। রবিবার বিকালে সম্মেলন শেষ হবে। মহম্মদ সেলিম, আভাস রায়চৌধুরী, অঞ্জু কর সহ রাজ্য নেতৃত্ব সম্মেলনে উপস্থিত রয়েছেন। পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্যও সম্মেলনে এদিন দুপুর থেকে রয়েছেন।
Comments :0