ন্যায়বিচারের দাবিতে কলকাতা ডার্বিতেও ফের প্রতিবাদী সুর। এবার দু’দলের সমর্থকরা হাতে হাত দিয়ে গড়ে তুললেন ‘মানববন্ধন’।
বড় ম্যাচের কিক অফ সাড়ে সাতটায়। ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই দখল যুবভারতী। মূল ফটকের সামনে এক দল, বিল্ডিং মোড় ও কাদাপাড়ার সামনে আরও দু’টি দল। সবাই প্রতিবাদ মুখর, বিচার চাইছেন আর জি করের ঘটনায়।
প্রতিবাদে রাস্তায় শুধু দু’দলের সমর্থকরাই নামেননি, ছিলেন চিকিৎসকরাও। তাঁদের সঙ্গে হাতে হাত ধরে মানববন্ধন গড়ে তোলেন অন্য পেশার মানুষেরা। প্রত্যেকের মুখে একটাই স্লোগান, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, উই ডিমান্ড জাস্টিস’। ‘তিলোত্তমার বিচার চাই, আমরা রাজপথ ছাড়ি নাই’।
এদিন নির্ধারিত সময়ের পরে শুরু হয় ‘মানববন্ধন’। আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে একাধিক কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছিল। উলটোডাঙা থেকে হাডকো মোড় পর্যন্ত ‘মানববন্ধন’ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। একই কর্মসূচি ছিল রুবি মোড় থেকে বেলেঘাটা বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত। যুবভারতীর সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন সিনিয়র চিকিৎসকেরাও।
সিনিয়র ডাক্তারদের ডাকা ‘মানববন্ধন’ কর্মসূচি প্রসঙ্গে চিকিৎসক উৎপল ব্যানার্জির বললেন, ‘‘ময়দানের মানুষ এই আন্দোলনে রয়েছেন। স্বাস্থ্য দপ্তরের দুর্নীতি, ভয়ের পরিবেশের বিরুদ্ধে সবাইকেই রুখে দাঁড়াতে হবে। সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষের সক্রিয় যোগদানে এই আন্দোলন আরও জোরদার হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন হয়েছে। আর কোনও মায়ের কোল যেন খালি না হয়। ডার্বির মাঠ নয়, আমরা সমস্ত জায়গাই আমাদের কাছে প্রতিবাদের মঞ্চ।’’ আরেক চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর কথায়, ‘‘এই বিরলতম অপরাধের বিরলতম বিচার চাই। তা যেন অযথা দেরি করা না হয়। আমরা মাঠের ভিতরে এবং বাইরে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানাতে চাই।’’
পেশায় শিক্ষক বিশ্বজিৎ রায় বলছেন, ‘‘বড় ম্যাচ বিশ্বব্যাপী মানুষ দেখেন। আমরা চাই শুধু খেলা নয়, আমাদের শক্তিও সারা বিশ্বের মানুষ দেখুক। এই ধরনের আন্দোলনকেই পুলিশ গুরুত্ব দিতে চায় না। ফলে অনেক মানুষই ন্যায়বিচার পায় না। আমাদের দাবি একটাই, দোষীদের দ্রুত শাস্তি চাই।’’ সোনারপুরের বাসিন্দা সৌমেন অধিকারী পেশায় কর্পোরেট চাকুরে। মাঠে খেলা দেখতে এসে ‘মানববন্ধন’-এ শামিল হন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার বোনের খুনের যাতে ন্যায়বিচার হয়, সেই জন্য নিজেকে আর দূরে সরিয়ে রাখতে পারিনি। যোগ দিয়েছি হাতে হাত রেখে মানববন্ধনে। মোহনবাগান সমর্থক ইন্দ্রজিৎ ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘আমরা প্রতিটি মঞ্চেই বিচারের কথা তুলতে চাই। ময়দানই শিখিয়েছিল, পুলিশের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সম্ভব। নির্যাতিতার পাশে দাঁড়িয়েই এই প্রতিবাদের ডাক দিয়েছিলাম। আমাদের লক্ষ্য, সমাজের সব স্তরের মানুষের কাছে এই আন্দোলন পৌঁছে দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সুষ্ঠু সমাজ গড়ে তোলা।’’
এই স্বতঃস্ফূর্ত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে বাধা দিতে এগিয়ে যান কয়েকজন ফুটবল সমর্থক। তাঁদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন চিকিৎসকরা। অপ্রাসঙ্গিক স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন, অবশ্য এতে কিছু লাভ হয়নি। তাঁদের দাবি ফুটবল মাঠে কেন এই ধরনের প্রতিবাদ হবে?
Comments :0