MD SALIM

তৃণমূল-বিজেপি’র বিভাজনের মতলব বানচাল করতে সর্বত্র সজাগ বামকর্মীরা, বললেন সেলিম

রাজ্য

আরএসএস’র ছকে রাজ্যের সর্বত্র বিভাজন তৈরি করতে নেমেছে তৃণমূল এবং বিজেপি। পরিপূরক অবস্থান দু’দলের। এই ছক বানচাল করতে
সচেতন ও সতর্কভাবে বামপন্থী কর্মীরা ভূমিকা পালন করছেন। বিভাজন রুখতে আগামী এক সপ্তাহ পাহারাদারের ভূমিকা পালন করবেন তাঁরা।
সোমবার কলকাতার মুজফ্‌ফর আহমদ ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, রাজ্যে কোনও দাঙ্গায় দোষীদের শাস্তি দিতে কোনও ভূমিকা নেয়নি তৃণমূল সরকার। একটি ঘটনাতেও কমিশন হয়নি। আর এই মুখ্যমন্ত্রী নির্লজ্জভাবে নমাজের মঞ্চে রাজনৈতিক প্রচার করছেন। বামপন্থীদের দায়ী করছেন।  
তিনি বলেন, দোলের সময়ে জুম্মার নমাজের দিনে কোনোরকম অশান্তি হতে দেওয়া হয়নি। 
দাঙ্গা আটকাতে পুলিশকে দেখা যায় না। আর যখন উত্তরকন্যা অভিযানে যুবরা নেমেছে, তখন জমায়েত ফেরত মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে পুলিশ। 
সেলিম বলেন, ধূলাগড় থেকে বসিরহাট বা আসানসোল রানিগঞ্জ, কোনও দাঙ্গায় কোনও কমিশন হয়নি প্রশাসনিক স্তরে। কে দায়ী কারা দায়ী, মানুষ খুন হয়ে গেলেও তার তদন্ত হয়নি।
সামনে ভোট আছে বলে এখন রিজওয়ানুরের কথা মনে পড়েছে। মানুষ এসব চালাকি ধরা পড়েছে। এজন্য যেখানে তিনি যাচ্ছেন প্রতিবাদ হচ্ছে। মানুষের সামনে সত্য সমানে প্রকাশিত হচ্ছে, বুজরুকি ধরা পড়ছে।  
তিনি বলেন, বামপন্থী কর্মীরা সারা রাজ্যে শিবির করবে, পথসভা করবে। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আবেদন জানাবে। তারা সামনে বুক আগলে থাকবে। এই বাংলাকে সাম্প্রদায়িক শক্তির লীলাক্ষেত্র হতে দেব না।  
তিনি বলেন, প্যালেস্তাইনের গাজায় আমেরিকার মদতে ইজরায়েল মুহূর্মুহূ হামলা চালাচ্ছে। গাজাকে নিশ্চিহ্ন করতে নেমেছে। সেই আবহেই পালিত হচ্ছে ঈদ। সারা বিশ্বে প্যালেস্তাইনের ওপর হামলার প্রতিবাদও হচ্ছে। 
বার্মা ও থাইল্যান্ডে ভূমিকম্পে বহু মানুষ মারা গিয়েছেন। বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তার জন্য শোক জানিয়েছেন তিনি। 
সেলিম বলেছেন, ঈদ মূলত মিলনোৎসব। দেশের বিভিন্ন অংশে, বিশেষত উত্তর ভারতে, আমাদের রাজ্যে মালদহ এবং মুর্শিদাবাদে পরিকল্পিতভাবে রাজ্য সরকারের পূর্ণ সম্মতিতে যেভাবে দাঙ্গা হাঙ্গামার পরিবেশ তৈরি হয়েছে এবং সাঙ্গা হাঙ্গামা সংগঠিত হয়েছে, মালদা মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ আশঙ্কার মধ্যে উৎসবের সম্মুখীন হয়েছেন। 
তিনি বলেন, এরাজ্যে এরকম পরিবেশ কখনও ছিল না। নবরাত্রি চলছে। এক সপ্তাহের মধ্যে রামনবমী হবে। আর রামনবমী এলেই আমরা দেখব বিজেপি-তৃণমূল কিভাবে এককাট্টা হয়ে যায় আরএসএস’র পতাকাতলে। মানুষের ধর্মবিশ্বাস, ধর্মীয় উৎসবকে কাজে লাগিয়ে এমএলএ, এমপি মন্ত্রী, কাউন্সিলর, মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী কোনও তফাত থাকে না। 
তিনি বলেন, আসলে তৃণমূল এবং বিজেপি একে অপরের পরিপূরক ভূমিকা পালন করে। ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করে হিংসা, ঘৃণা ছড়ায় দুই দলই। নির্লজ্জভাবে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী গতবারও যখন রিষড়ায় রামনবমীকে কেন্দ্র করে সমস্যা হয়েছে তাতে সাফাই দিয়েছেন। কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। কারা হিংসা ছড়ালো, কারা দাঙ্গা হাঙ্গামা করল। এখন ঈদের নমাজে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বামপন্থীদের দোষারোপ করছেন। কারণ তিনি আরএসএস’র খেয়ে পড়ে বড় হয়েছেন। আরএসএস’র মদতে রাজনীতি করছেন। আরএসএস‘র রাজনীতির পরিপূরক। প্রধানমন্ত্রী গিয়েছেন নাগপুরে। আর আরএসএস প্রধান এখানে এসেছেন। ২০২৬’র নির্বাচনের নীল নকশা তৈরি হয়েছে। ধর্মীয় আবেগে জড়িয়ে ভোট করার পরিকল্পনা। বাংলার রাজনীতি সংস্কৃতি শিল্প সাহিত্য শিক্ষা শান্তি-সম্প্রীতি সব নষ্ট করতে চায়। 
উৎসবের আঙিনায় রাজনীতির মতলবে দেওয়া বক্তৃতায় মানুষ প্রভাবিত হবেন না। ধর্মের অনুষ্ঠানকে সংকীর্ণ রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার করছেন। রেড রোডে উনি ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে হাইজ্যাক করেন। আবেদন জানাবো নিজেরর ধর্মকে হাইজ্যাক করতে দেবেন না।  
কঠিন পরীক্ষার সামনে বাংলার মানুষ। গুজরাট, রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশের সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি বিজেপিকে পেশি দেখানোর সুযোগ করে দিয়েছে। আর এই রাজ্যে তাদের সেই সুযোগ করে দিচ্ছেন মমতা ব্যানার্জি। তবে মানুষ এই ফাঁদে পা দেবেন না। ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। 
উল্লেখ্য, এদিন ঈদের নমাজের মঞ্চে মমতা রাম এবং বামকে এক করেছেন মমতা। এই ভাষণেই লন্ডনের প্রসঙ্গ টেনেছেন তিনি। 
এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নে সেলিম বলেন, ধর্মের মঞ্চে জোর জোচ্চোর আর জেল খাটা আসামি গলেই মহান হয়ে যায় না। বরং ধর্মের মঞ্চই কালিমালিপ্ত হয়।
সেলিম বলেন, মুখ্যমন্ত্রী দলবল নিয়ে গিয়েছিলেন মিথ্যাচার করতে, রাজ্যের মানুষের মাথা হেঁট করতে। সেখানে টিকিট কেটে জেল খাটা আসামি নিয়ে গিয়েছিলেন আবার হিন্দু হিন্দু করে এমন লোককেও নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে ছাত্র বিক্ষোভের সামনে এ সমস্ত চেহারা উলঙ্গ হয়ে গিয়েছে। এখন তিনি ফের মিথ্যাচার করছেন।
এখানে গিয়ে ইংরেজের দালালি করেছেন তিনি। আরএসএস’র ভাষায় সাম্রাজ্যবাদী শাসনকে যেভাবে দেখায় তিনিও তাই করেছেন। আর জ্যোতি বসু ছাত্রাবস্থায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ওখানকার ছাত্রছাত্রীদের সংগঠিত করছিলেন। সে ধারা আজও বজায় আছে। সাম্রাজ্যবাদের দালালি করলে আরএসএস হোক বা তৃণমূল, আমরা সোচ্চার থাকব।

Comments :0

Login to leave a comment