Waqf Act

ফ্যাসাদে পড়ে পিছু হটা

সম্পাদকীয় বিভাগ

মুসলিম বিদ্বেষের আবহে হিন্দুত্বের পালে জোরালো হাওয়া তুলে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতিকে আরও তীক্ষ্ণ করতে সংসদে সংখ্যা গরিষ্ঠতার জোরে নরেন্দ্র মোদীরা তড়িঘড়ি সংসদে পাশ করিয়ে নিলেন ওয়াকফ সংশোধনী আ‍ইন। আর যথারীতি বিলটি পাশে সুবিধা করে দিতে তৃণমূলের কয়েকজন সংসদ সংস‍‌দে অনুপস্থিত থেকে গেলেন। তৃণমূল বিজেপি বিরোধী, ওয়াকফ আইন সংশোধন বিরোধী। যদি তাই হতো তাহলে তো বাধ্যতামূলকভাবে তৃণমূলের সব সাংসদ সংসদে হাজির থেকে বিল পাশ আটকাতে সর্বাত্মক প্রয়াস চালাতেন। কিন্তু তারা তা করেননি। অতীতেও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের লক্ষ্যে এবং সাধারণ মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে এমন একাধিক বিল পাশ হয়েছে যেগুলি পাশ করা সম্ভব হতো না যদি তৃণমূলের সক্রিয় বিরোধিতা থাকত এবং বিরুদ্ধে ভোট দিত। তা না করে তারা কৌশলে সংসদে গরহাজির থেকেছে অথবা ভোটদানে বিরত থেকেছে। এটা আসলে বিল পাশ করাতে বিজেপি’কে পরোক্ষে সাহায্য করা।
১৯৯৫ সালের তৈরি ওয়াকফ আইন সং‍শোধন করা এই মুহূর্তে জরুরি কোনও প্রয়োজন ছিল না। তবে ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় দুর্নীতি রোধের কিছু কড়া ব্যবস্থা নেওয়া যেতেই পারত। কিন্তু মোদী সরকারের কাছে সেটা অগ্রাধিকারে ছিল না। তারা চেয়েছিল দেশজুড়ে ওয়াকফের অধীনে থাকা বিপুল সম্পত্তির মুসলিমদের আধিপত্ত কেড়ে অমুসলিম কবজায় আনতে। পাশাপাশি বেশির ভাগ সম্পত্তিকে ওয়াকফের অধীন থেকে কেড়ে নিতে। এরজন্য সংবিধান অগ্রাহ্য করে এমন কিছু ধারা নতুন আইনে যুক্ত করা হয়েছে যেগুলি সরাসরি মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের শামিল। স্বাভাবিকভাবেই এই আইনের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অন্তত ৭৩টি মামলা হয়েছে সর্বোচ্চ আদালতে। মুসলিম সমাজের বিভিন্ন সংগঠন যেমন মামলা করেছে তেমনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিরোধী নেতা, সাংসদও আছেন। সিপিআই(এম) ও সিপিআই’র পক্ষ থেকেও মামলা হয়েছে।
এই মামলাগুলি একত্র শুনানিতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণে মহাবিপদে পড়েছে মোদী সরকার। প্রথম দিনের শুনানিতেই বিচারপতিরা গুরুতর তিনটি বিষয় সামনে এনে আইনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেন। যে তিন বিষয়কে সামনে রেখে স্থগিতাদেশ দেওয়া যায় বলে মন্তব্য করেন সেগুলির একটি হলো ওয়াকফ বাই ইউজার ধারা। অর্থাৎ কোনও নথি নেই এমন চিহ্নিত ওয়াকফ সম্পত্তি বাদ যাবে। ব্রিটিশরা আসার আগে ভারতে জমি নিবন্ধীকরণ ও জমি হস্তান্তর আইন ছিল না। কিন্তু তার বহু আগে থেকে ওয়াকফ ছিল। ধর্মীয় ও সেবার কাজে মুসলিমরা যে জমি দান করতেন সেগুলি ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবেই চিহ্নিত ছিল। এখন মোদীরা আইন বদলে সেই সব জমি ওয়াকফ থেকে কেড়ে নিতে চাইছেন। ওয়াকফ বোর্ড ও কেন্দ্রীয় ওয়াকফ পরিষদে অমুসলিম সদস্য ঢোকানোর ব্যবস্থা হয়েছে। অর্থাৎ মুসলিমদের ধর্মীয় পরিসরে  ঢুকে নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেবার পাকা বন্দোবস্ত।
সুপ্রিম কোর্টের মনোভাব বুঝে বেইজ্জতি থেকে বাঁচতে দ্বিতীয় শুনানিতে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বিতর্কিত ধারাগুলি কার্যকর না করার প্রতিশ্রুতি দেয় কেন্দ্র যাতে আদালত স্থগিতাদেশ দিয়ে তাদের মুখে চুনকালি মাখাতে না পারে। আপাতত রণে ভঙ্গ না দিলেও হম্বিতম্বি কমেছে। তুরন্ত গতিতে দৌড়ানোর বদলে দু’পা পিছিয়ে আত্মরক্ষায় মন দিয়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment