Pahalgam

চোর পালালে বুদ্ধি খোলে

সম্পাদকীয় বিভাগ

পহেলগামে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর খবর পেয়ে সৌদি আরব সফর কাটছাঁট করে তড়িঘড়ি দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সৌদি আরব থেকেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহকে বলেছিলেন দেরি না করে শ্রীনগর গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে। দেশে ফিরেই মন্ত্রীসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী। তার আগেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পহেলগাম সফর সেরে দিল্লি ফিরে এসেছেন। পাশাপাশি প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান ও তিন বাহিনীর প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করে সেনাবাহিনীকে যেকোনও পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে বলেছেন। একই সঙ্গে জঙ্গি নিধনের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেছেন। এমন দম ফেলার ফুরসতহীন সর্বোচ্চ তৎপরতার মধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের কথা। হামলার জন্য কালবিলম্ব না করে সরাসরি আঙুল তোলা হয়েছে পাকিস্তানের দিকে এবং যথাযথ জোরালো ও স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে বলে বার্তা দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানও যথারীতি দায় অস্বীকার করেছে এবং ভারতকে দায়িত্বশীল আচরণের পরামর্শ দিয়েছে।
সর্বোচ্চ স্তরে দফায় দফায় বৈঠকের পর বিদেশ মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কথা বললেও যথারীতি নীরব রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অতীতের মতো বিস্ফোরক কিছু বাল বা ঘোষণার জন্য হয়ত অপেক্ষা করছেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ১৯৬০ সালের সিন্ধু নদ জলচুক্তি স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী সিন্ধু নদের ৮০ শতাংশ জল পায় পাকিস্তান। এই জলই পাকিস্তানের খাদ্য উৎপাদনের প্রধান উপাদান। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ওয়াঘা-আট্টারি সীমান্ত। পাক নাগরিকদের জন্য সব‍‌ ভিসা বাতিল করা হয়েছে। দু’দেশের দূতাবাসের কর্মী সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হয়েছে। দূতাবাসে থাকা স্থল সেনা, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর উপদেষ্টাদের সরানোর কথা বলা হয়েছে। এরপর বড় মাপের কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে সেটা নিয়ে জোরদার জল্পনা চলছে। অনেকে মনে করছেন সার্জিকাল স্ট্রাইকের মতো কিছু একটা করার কথা ভাবা হচ্ছে।
যুদ্ধকালীন তৎপরতার মতো এমন রণংদেহী মনোভাবের ছি‍‌টেফোঁটাও আগে দেখা যেত তাহলে আর যাই হোক ২৬ জন নিরীহ নিরাপরাধ মানুষকে জীবন দিতে হতো না। ভাবা যায় কাশ্মীরের মতো সন্ত্রাসকবলিত রাজ্যের পহেলগামের বৈসরণ ভ্যালির মতো জনপ্রিয় পর্যটক আকর্ষক কেন্দ্রে যেখানে প্রতিদিন দেড় থেকে দু’হাজার পর্যটক ঘুরতে যান সেখানে একজন নিরাপত্তা রক্ষীও ছিল না। শুধু সেদিনের জন্য নয় কোনোদিনই কোনও নিরাপত্তা কর্মী সেখানে যায় না। দিনের পর দিন বছরের পর বছর পুরো অরক্ষিত থাকে বৈসরণ ভ্যালি। এমনকি হামলার ঘটনার এক ঘণ্টার মাথায় সেখানে পৌঁছায় নিরাপত্তা কর্মীরা। তার ‌আগে জঙ্গিদের বাধা দিয়ে পর্যটকদের বাঁচাতে গিয়ে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়েছে ঘোড়াওয়ালা সৈয়দ আদিল হুসেইন শাহ। আহত বিপন্ন পর্যটকদের ঘোড়ার পিঠে চাপিয়ে পহেলগামে আনা শুরু করে ঘোড়াওয়ালা স্থানীয় মানুষরাই।
এই মুহূর্তে কাশ্মীরে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ নিরাপত্তা কর্মী থাকলেও বৈসরণ ভ্যালির জন্য একজনও ছিল না। জঙ্গিরা নাকি সীমান্ত পেরিয়ে ৮ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে পহেলগামে এসেছিল। আবার কাজ সেরে ৮ ঘণ্টা পথ পেরিয়ে পালিয়েও গেছে। বোঝাই যাচ্ছে মোদী-শাহরা কেমন আঁটসাঁট নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছেন কাশ্মীরে। নেতা-মন্ত্রী-আধিকারিকদের জন্য নিরাপত্তা রক্ষীর অভাব নেই। সাধারণ মানুষের জন্য ভোঁ ভাঁ। চূড়ান্ত গোয়েন্দা ব্যর্থতা ও কল্পনাতীত নিরাপত্তা বিপর্যয়ের শিকার ২৬ জন পর্যটক। স্পষ্ট হয়ে গেল জঙ্গিরা সন্ত্রাসের কাজে যতটা সফল ততটাই ব্যর্থ মোদী-শাহ’র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তাই কাশ্মীর পরিস্থিতি মোকাবিলায় মোদী-শাহ’র যোগ্যতা নিয়েই গুরুতর প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment