ED ABHISHEK NUSRAT

নুসরতের পর অভিষেক, তদন্ত এগবে নাকি শুধু যাওয়া আসা?

রাজ্য

বসিরহাটের সাংসদের জিজ্ঞাসাবাদ সেরেছে ইডি। বরিষ্ঠ নাগরিকদের আবাসনের জন্য নেওয়া অর্থ তছরুপের তদন্তে মঙ্গলবার চলেছে এই জিজ্ঞাসাবাদ। নুসরত জাহানের পর বুধবার ইডি’র দপ্তরে হাজিরা দেওয়া কথা তৃণমূলেরই আরেক সাংসদ, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জির। 

শিক্ষক নিয়োগ থেকে পৌর নিয়োগে বিপুল অঙ্কের দুর্নীতির তদন্তে অভিষেককে তলব করেছে ইডি। দুই কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি এবং সিবিআই’কে নিয়মিত আদালতে তিরস্কারের মুখ পড়তে হচ্ছে তদন্তে ঢিলেমির জন্য। ১৪ সেপ্টেম্বর একটি তদন্তে অগ্রগতি রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা। তার আগের দিন ডাকা হয়েছে অভিষেককে। 

তদন্তে অগ্রগতি আদৌ কতটা তা নিয়ে সংশয়ে দুর্নীতির সবচেয়ে বড় শিকার যোগ্য শিক্ষক পদপ্রার্থীরা। নিয়োগের পরীক্ষায় সফল হয়েও চাকরি পাননি। রাস্তায় বসে রয়েছেন টানা লড়াইয়ে। এদিনই কলকাতায় তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা। নিয়মমাফিক তিনিও রাজনৈতিক চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি এবং কেন্দ্রে তাদের সরকারের বিরুদ্ধে। বিজেপি’তে গেলেই দুর্নীতিগ্রস্তরা ছাড় পায় কেন, নারদ প্রসঙ্গ টেনে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর টাকা নেওয়ার ক্যামেরাবন্দি দৃশ্য মনে করিয়ে দিয়েছেন।

নারদ কান্ডে ম্যাথু স্যামুয়েলকে দীর্ঘদিন বাদে ডেকেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই। ২০১৬’র নির্বাচনের আগে বেরিয়েছিল গোপন ক্যামেরায় তোলা তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের ঘুষ নেওয়ার ছবি। শুভেন্দু তারপর দল পালটেছেন। আরও একটটি বিধানসভা ঘুরে গিয়েছে, তবে তদন্ত হয়নি। 

এই প্রসঙ্গেই সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘নারদ কান্ডে সিবিআই তদন্তে সাত বছর পর এবার আবার ডাক পড়লো ম্যাথু স্যামুয়েলের! তৃণমূলের ফিরহাদ হাকিম, সৌগত রায়, কাকলী ঘোষ দস্তিদারদের হাতে হাতে টাকা নেবার ভিডিও সবাই দেখেছেন। দেখেছেন শুভেন্দুকেও। প্রশ্ন হলো তদন্ত গোটাতে আর কত সময় লাগবে?’’

সম্প্রতি জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়ে দিল্লিতে গিয়েছিলেন তৃণমূল প্রধান এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। রাষ্ট্রপতির নৈশভোজে ছিলেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে। 

সেই প্রসঙ্গ মনে করিয়েছেন চক্রবর্তী। বলেছেন, ‘‘দিল্লির নৈশভোজের নয়া নিদানে তদন্ত ঘুরিয়ে দেওয়ার নয়া পরিকল্পনা নয় তো!’’
তদন্তের হাল কী আরেকবার বেরিয়ে পড়েছিল গত ২৯ আগস্ট। নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থায় ইডি’র তল্লাশির পরিপ্রেক্ষিতেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন ওই সংস্থার এক কর্ণধার সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে গ্রেপ্তার করা হলে অভিষেক ব্যানার্জিকে সমন পাঠানো হবে না, কেন তাঁকে তলব করা হচ্ছে না

ইডি’র আইনজীবীর যুক্তি ছিল, জেরা থেকে নিষ্কৃতির জন্য অভিষেকের একটি মামলা বিচারাধীন। বিচারপতি সিনহা পালটা প্রশ্ন তোলেন যে মামলা বিচারাধীন থাকলে সমন পাঠানো যাবে না কোথায় ঠিক হয়েছে! এই শুনানির সপ্তাহখানেক বাদে অভিষেককে তলবের চিঠি পাঠায় ইডি।

১৩ সেপ্টেম্বর বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’-র সমন্বয় কমিটির বৈঠক। অভিষেকও একই দিনে তলবের বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন। এদিন শশী পাঁজা এবং আরেক মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের অভিযোগ, ধূপগুড়িতে বিজেপি’র পরাজয়ও তলবের কারণ। 

দুর্নীতির সরাসরি শিকার বিভিন্ন অংশই মনে করাচ্ছে যে অভিযোগ মারাত্মক হলেও তদন্ত করেনি রাজ্যের পুলিশ গোয়েন্দা বাহিনী। সিবিআই বা ইডি নিজেরাও তদন্তে নামেনি। রাস্তায় আন্দোলন আর আদালতের নির্দেশের জেরে তদন্তে নামতে হয়েছে সিবিআই এবং ইডি’কে। বুধবারের তলবেও তদন্ত এগবে নাকি শুধু যাওয়া আসা, সে প্রশ্ন রয়েছে। 

সিপিআই(এম) যদিও জানিয়েছে যে তদন্ত আটকে রাখলে সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দপ্তরে হবে অভিযান, ক্ষতিগ্রস্তদের বিচারের দাবি নিয়ে।

Comments :0

Login to leave a comment