‘‘তৃণমূল বনাম বিজেপি যে দ্বৈরথ পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজ্যে তৈরি করার চেষ্টা হয়েছিল তা ভেঙে গিয়েছে। এই নির্বাচন দেখিয়ে দিয়েছে লুঠেরা তৃণমূল এবং বিজেপি একদিকে, অন্যদিকে বাংলার সাধারণ মানুষ।’’
বুধবার বারুইপুরে সিপিআই(এম) দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা দপ্তরে সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বললেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী এবং জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ী।
এদিন সেলিম জানিয়েছেন পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্বে হিংসা এবং ভাঙড়ে পুলিশের গুলিতে তিনজন গ্রামবাসীর মৃত্যুর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বেলা ৪টে ধর্মতলা থেকে মৌলালী পর্যন্ত একটি বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন, মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রশাসনের পরিকল্পনা করে গ্রামে গ্রামে মানুষের ওপর আক্রমণ নামিয়ে আনছে। ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের বেশির ভাগ জায়গায় সিপিআই(এম), আইএসএফ কর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে রাখা হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ তুলে আনছে কোন কারণ ছাড়া। দ্বীপাঞ্চলে মানুষ বেশি আক্রান্ত।’’ এখানেই থেমে না থেকে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী দাবি করছেন যে তিনি শান্তির কবিতা লেখেন। তিনি রাজ্য কি ভাবে চালাচ্ছেন সেটা দেখুন।’’
সিপিআই(এম) দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ী বলেন, ‘‘ভাঙড়ে বাড়ি বাড়ি ঢুকে সিপিআই(এম) এবং আইএসএফ কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে। তৃণমূল এবং পুলিশ দুজনে মিলে এই কাজ করছে।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরের ৬৯ নম্বর জেলা পরিষদের আসনের সিপিআই(এম) প্রার্থী আমজাদ শেখ সহ ১৭ জনকে মিথ্যা অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার করেছে বিষ্ণুপুর থানা। ২০ জুলাই পর্যন্ত হেপাজত তাদের।
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘মঙ্গলবার গণনার প্রথম থেকেই বিরোধী এজেন্টদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ এবং তৃণমূল দুজনে মিলে গণনা কেন্দ্রের দখল নেয়। মনোনয়ন থেকে শুরু করে গণনা পর্ব পর্যন্ত মানুষের অধিকার লুঠ করেছে তৃণমূল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যে হেরেছে তাকে শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে। ব্যালট নষ্ট করা হয়েছে। ব্যালট বাক্সের কোন স্বচ্ছতা নেই। যেই নির্বাচন ঘিরে এতো অভিযোগ সেই ফলাফলের কোন বৈধতা নেই। কোন রকম গণনা না করে জেলা পরিষদের ফলাফল ঘোষনা করা হয়েছে।’’
হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণের উল্লেখ করে এদিন সেলিম বলেন, ‘‘হাইকোর্ট বলছে অনেক ক্ষেত্রে নির্বাচনের কোন আইন মানা হয়নি।’’
ভাঙড়ের অশান্তির পরিপ্রেক্ষিতে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘ভাঙড়ে জাহানারাকে জেতার পরেও বসিয়ে রাখা হয়। জেতার পরেও তাকে জানানো হয় যে সে হেরে গিয়েছে। এই ঘটনায় মানুষের ক্ষোভ স্বাভাবিক। এই ক্ষোভ আরও চলবে।’’
বুধবার মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে জানান যে নির্বাচন পর্বের হিংসায় যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের পরিবারকে ক্ষতিপুরন এবং একজন পরিবারের সদস্যকে চাকরি দেবে সরকার। সেই প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘জঙ্গলমহলে যারা খুন হয়েছিল তাদের পরিবারকে কোন সাহায্য করেনি সরকার। উল্টে যারা সিপিআই(এম) কর্মীদের খুন করেছিল তাদের চাকরি দিয়েছে। এখানেও যেই ১৯ জনকে তিনি পাঠিয়েছিলেন ভোট লুঠ করতে তাদের পরিবারকে চাকরি এবং ক্ষতিপুরণ দেবেন। আমরা দাবি করছি কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয়কেই ক্ষতিপুরণ দিতে।’’
বিজেপি’র যে কেন্দ্রীয় দল রাজ্যে এসেছে সেই প্রসঙ্গে এদিন সেলিম বলেন, ‘‘বাংলার মানুষ জানে আসল তথ্য কি। কি হয়েছে, কি ভাবে ভোট লুঠ হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, মানবাধিকার কমিশন লোক পাঠিয়েছিল সেই সব রিপোর্ট কোথায়?’’
সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যেমন অযোগ্যদের চাকরি দিয়েছে তেমন এখানে অযোগ্যদের জয়ী দেখানো হচ্ছে।’’ মমতা ব্যানার্জিকে চ্যালেঞ্জ করে চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যেই লুঠেরা বাহিনী মুখ্যমন্ত্রী তৈরি করছে তারা একদিন ওর গলা টিপে ধরবে। মানুষের মৃত্যুর দায় তাকে নিতে হবে।’’
চক্রবর্তী বলেন, ‘‘হাসানপুর, বনহুগলীর একাধিক বুথে জয়ী সিপিআই(এম) প্রার্থীদের শংসাপত্র দেওয়া হয়নি। তাদের বলা হয়েছে তৃণমূলে যোগ দিলে তাদের শংসাপত্র দেওয়া হবে। অভিষেক একদিকে বলছে যে নির্দলদের দলে নেবে না অন্যদিকে তার লোকজন এই কাজ করছে।’’ সোনারপুরে গণনা কেন্দ্রে বিধায়ক লাভলী মৈত্র কি ভাবে ঢুকতে পারে তা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। ভাঙড় প্রসঙ্গে সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তৃণমূল পুলিশের পোশাক পড়ে গুলি চালিয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছিল যে ভাঙড়ে পুলিশের পোশাক তৈরি করা হচ্ছে, তৃণমূল তা করছে কিন্তু কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’’
এদিন সিপিআই(এম) নেতৃত্ব স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে গুন্ডারাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে।
Comments :0