রেশনকার্ড থেকে জমি, সব কেড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। সব স্তরে জানিয়েও লাভ হয়নি। নবান্নের পথে পরিবার নিয়ে রওনা দিয়েছিলেন কোহিনুর শেখ। বর্ধমানের মেমারীর এই মহিলাকে পরিবার সমেত সিঙ্গুরে মাঝরাস্তায় আটকে ফেরত পাঠানো হয় গ্রামে। তাতেও না দমে ফের পথে নামবেন বলে জানাচ্ছে পরিবার।
কোহিনুর শেখের অভিযোগ, শাসকদল তাঁর রেশন কার্ড কেড়ে নিয়েছে। হিমঘরের ৭০ বস্তা আলু লুট করে নেয়। ১১ বিঘা জমি, পুকুরের রেকর্ড অন্য লোকের নামে করে নিয়েছে। মেয়ের বিয়ের জন্য জমি বিক্রি করতে বাধা দিয়েছে। এমন কি বিয়ের সম্বন্ধ এলে তা ভয় দেখিয়ে ভাঙিয়ে দেয়। মেমারী থানা, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপালকে সব জানালেও কোনও বিচার মেলেনি। সেজন্যই মেমারী থানার হেতমপুর গ্রামের এই নির্যাতিতা বৃদ্ধা কোহিনুর শেখ তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বিচারের আশায় নবান্নের দিকে রওনা দিয়েছিলেন।
শুক্রবার তৃণমূল, পুলিশ এবং প্রশাসনের এই ভূমিকা কড়া নিন্দা করেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, বারবার প্রতিবাদীদেরই মুখ বন্ধ করতে নামছে রাজ্য। আক্রান্তকেই শাসিয়ে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। জনতা এই মনোভাবের বিরুদ্ধেই বারবার শামিল হচ্ছেন প্রতিবাদে। এই প্রতিবাদ চলবে।
হুইল চেয়ারে বসেই কোহিনুর শেখ ছেলেদের সাহায্যে প্রায় ৭০ কিলোমিটার চলেও যান। শুক্রবার পুলিশ ও তৃণমূলের দুষ্কৃতীবাহিনী তাঁকে জোর করে পুলিশের গাড়িতে তুলে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। হুমকি দেয় ফের নবান্নের পথে হাঁটলে মিথ্যা কেস দিয়ে জেলে পুরে রাখা হবে। পুলিশ এদিন এই পরিবারের মোবাইল ফোনগুলিও কেড়ে নেয়। পরে আবার ফোন ফিরিয়ে দেয় বিকালে।
শুক্রবার দুপুরে প্রতিবাদী পরিবারকে পুলিশের গাড়িতে তুলে মেমারী থানায় আনা হয়। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় বিডিও অফিসে। তারপর কোহিনুর শেখ’র হাতে রেশনকার্ড, স্বাস্থ্যসাথীর আবেদনপত্র এবং ২ বস্তা চাল দিয়ে কার্যত ধরে বেঁধে ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এদিন কোহিনুর শেখ অভিযোগ করেন, তৃণমূলের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ২৬দিন পূর্ব বর্ধমান জেলা শাসকের দপ্তরের সামনে রোদ, বৃষ্টিতে ধর্নায় বসে থেকেছেন। কোনও বিচার মেলেনি। তারপর বিচারের আশায় এই সংখ্যালঘু পরিবার বর্ধমান থেকে নবান্ন অভিযান করেন। সিঙ্গুরের কাছে এই পরিবারের পথ আটকায় জনা কুড়ি তৃণমূলের দুষ্কৃতী। অভিযোগ, স্থানীয় বিধায়ক অসীমা পাত্রের কাছে এই পরিবারকে ধরে নিয়ে যেতে চায়। কোহিনুর শেখ প্রতিবাদ করে বলেন তিনি রাস্তা ছাড়বেন না। সেই সময় মেমারী থানা ও গুড়াপ থানার পুলিশ কোহিনুর শেখ ও তাঁর পরিবারকে অশ্লীল হুমকি দিতে শুরু করে। তাতেও যখন কাজ না হওয়ায় তৃণমূলের দুষ্কৃতী এবং পুলিশ জোর করে এই পরিবারকে পুলিশের গাড়িতে তোলে টেনে হিঁচড়ে। দুষ্কৃতীরা প্রতিবাদী পরিবারের হ্যান্ডবিল ও পোস্টার ছিঁড়ে দিয়ে বলে ফের যদি এমন দুঃসাহস দেখাবি তাহলে মিথ্যা কেস দিয়ে লকআপে ভরে দেবো। পরিবারের অভিযোগ, তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের মদত দিয়েছেন মেমারী-১’র বিডিও। এমনই অভিযোগ করেছেন কোহিনুর শেখের ছেলে জীবান শেখ। বিডিও ধমকায় যা দেবো মুখ বুজে নিয়ে বাড়ি চলে যাবি।
এদিন কোহিনুর শেখ অভিযোগ করেন, আর জি কর কান্ডে মুখ্যমন্ত্রী যেমন নির্যাতিতার পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকায় কিনতে চেয়েছিলেন তেমনই আমাদেরও ২ বস্তা চাল দিয়ে প্রতিবাদ বন্ধ করার চেষ্টা হয়েছে। যতই ভয় দেখাক ফের তাঁরা রাস্তায় নেমেই এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
KOHINOOR SHEKH
প্রতিবাদী বৃদ্ধারও ছাড় নেই, হুমকি দিয়ে ঘরে পাঠালো পুলিশ-তৃণমূল, দেখুন ভিডিও
×
Comments :0