Polit Bureau calls to resist efforts of social division

কাশ্মীরিদের ওপর হামলা, সরব সব মহল

জাতীয়

Polit Bureau calls to resist efforts of social division


-----------------------------------
বিভাজনের চেষ্টা রুখতেই
হবে, বলল পলিট ব্যুরো

 পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে বিভিন্ন রাজ্যে জম্মু-কাশ্মীরের পড়ুয়া এবং ব্যবসায়ীদের যেভাবে হুমকি দেওয়া বা হেনস্তা করা হচ্ছে, তার কড়া ভাষায় নিন্দা করেছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো। শুক্রবার এক বিবৃতিতে পলিট ব্যুরো স্পষ্টই বলে দিয়েছে, এই মুহূর্তে জনগণের যে ঐক্য গড়ে উঠেছে তা ভাঙতে কিংবা ব্যাহত করার চেষ্টাকে প্রতিহত করতে কোনও ধরনের শিথিলতা দেখানো চলবে না। সিপিআই(এম)’র দাবি, যেভাবেই হোক বিভাজনের চেষ্টা রুখতেই হবে।
বিবৃতিতে পলিট ব্যুরো বলেছে, পহেলগামে নৃশংস সন্ত্রাসবাদী হামলার বিরোধিতায় যখন গোটা দেশ ঐক্যবদ্ধ, তখন উত্তরাখণ্ড, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র সহ বিভিন্ন রাজ্যে জম্মু-কাশ্মীরের পড়ুয়া এবং ব্যবসায়ীকে হুমকি কিংবা হেনস্তার খবর পাওয়া যাচ্ছে। দেরাদুনে সাম্প্রদায়িক সংগঠনের পক্ষ থেকে এই ধরনের হুমকি এবং চরম শর্ত দেওয়ার জেরে বহু কাশ্মীরি পড়ুয়া নিজেদের বাড়িতে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
পলিট ব্যুরো বলেছে, কাশ্মীরিরা এবং সংখ্যালঘু মুসলিমদের নিশানা করে ভয়ঙ্কর বিদ্বেষ প্রচার চালানো হচ্ছে সমাজ মাধ্যমে। অথচ গোটা দেশ প্রত্যক্ষ করেছে, কীভাবে কাশ্মীরিরা সমস্বরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে নিন্দায় সরব হওয়ার পাশাপাশি প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন।
একারণেই সিপিআই(এম) মনে করে, এই ধরনের আচরণ বস্তুত সন্ত্রাসবাদীদের উদ্দেশ্যকেই সাহায্য করছে। এভাবে সংহতি নষ্টের চেষ্টাকে যারা মদত জোগাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসনের। এই মুহূর্তে যে ঐক্য গড়ে উঠেছে তার মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি কিংবা সেই প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করা প্রয়াসকে প্রতিহত করার ক্ষেত্রে কোনও শৈথিল্য দেখানো চলবে না।
একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাশ্মীরি পড়ুয়া সহ ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা, হেনস্তার ঘটনায় নিন্দায় সরব হয়েছে বিভিন্ন সংগঠন এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার নিন্দা করে সিআইটিইউ এদিন এক বিবৃতিতে বিভিন্ন রাজ্যে কাশ্মীরিদের যেভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে সেব্যাপারে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। বলা হয়েছে, এভাবে কাশ্মীরি পড়ুয়াদের হেনস্তা এবং হিংসার ঘটনা মোটেই বরদাস্ত করা যায় না। এই ধরনের ঘটনা সমাজে মেরুকরণ তৈরির ভয়ঙ্কর প্রবণতারই প্রতিফলন। এই মুহূর্তে দেশের প্রগতিশীল, গণতন্ত্রপ্রিয়, ধর্মনিরপেক্ষ জনগণকে সজাগ এবং ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে সিআইটিইউ’র পক্ষ থেকে। এরই সঙ্গে সন্ত্রাসবাদী হামলার বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদে শামিল হওয়ার জন্য কাশ্মীরের শ্রমিক শ্রেণিকে অভিনন্দন জানিয়েছে সিআইটিইউ। পাশাপাশি বিভেদকামী শক্তির বিদ্বেষ প্রচার চালানোর মধ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সন্ত্রাসবাদী শক্তির বিরুদ্ধে মানুষের ঐক্যকে শক্তিশালী করার জন্য শ্রমজীবী জনগণকে পাশে থাকার আহ্বানও জানিয়েছে সিআইটিইউ।
এদিন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী জম্মু-কাশ্মীরে গিয়ে পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার বিরুদ্ধে গোটা দেশকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘সমাজে বিভাজন তৈরির লক্ষ্যেই ওই হামলা চালানো হয়েছে। সন্ত্রাসবাদীরা যা করেছে তার বিরুদ্ধে প্রতিটি ভারতবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’’ একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে কাশ্মীরীদের ওপর যে হামলা বা হুমকির ঘটনা ঘটছে তার নিন্দা করেছেন রাহুল গান্ধী। তিনি বলেছেন, ‘‘পহেলগামের ঘটনার পর কাশ্মীরীদের নিশানা করা হচ্ছে। আমাদের ভাইবোনদের (কাশ্মীরি) আক্রমণ করছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সন্ত্রাসবাদকে চিরতরে পরাস্ত করতে হবে। এজন্য একজোট হয়ে থাকা অত্যন্ত জরুরি।’’
গোটা দেশে যেভাবে কাশ্মীরি পড়ুয়া এবং ব্যবসায়ীদের হেনস্তা করা হচ্ছে, সেজন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। তিনি এদিন বলেছেন, ‘‘হামলা কিংবা হেনস্তার খবর পেয়েই তাঁদের নিরাপত্তার জন্য রাজ্য মন্ত্রীসভার কয়েকজন সদস্যকে বিভিন্ন রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। ওই মন্ত্রীরা বিভিন্ন রাজ্য সরকারের সঙ্গে সহযোগিতামূলক উদ্যোগ নেবেন এবং কাশ্মীরিদের নিরাপত্তার বিষয়টি সুনিশ্চিত করার দিকে নজর দেবেন।’’ এক্স হ্যান্ডেলে একথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরবাসীর পাশে আছে তাঁর সরকার, তাঁরা যেখানেই থাকুন না কেন।’’
এদিকে, এদিন সিপিআই(এম) উত্তরাখণ্ড রাজ্য কমিটির একটি প্রতিনিধিদল পুলিশের ডিজি’র অনুপস্থিতিতে আইজি আনন্দ ভারানের সঙ্গে দেখা করে পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী ঘটনার পরে রাজ্যে কাশ্মীরি জনগণের নিরাপত্তা এবং অধ্যয়নরত শত শত কাশ্মীরি পড়ুয়াদের হুমকির কারণে তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখার দাবি জানায়। একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। প্রতিনিধিদলকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন আইজি। স্মারকলিপিতে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের পক্ষ থেকে উত্তরাখণ্ডে কাশ্মীরিদের হুমকি দেওয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং সমাজ মাধ্যমে ভিত্তিহীন পোস্ট নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, পহেলগামে হামলার পরেই দেরাদুনে কাশ্মীরি পড়ুয়াদের হেনস্তা এবং শাসানি দেওয়া শুরু করে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের লোকজন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন পড়ুয়া দেরাদুন ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

Comments :0

Login to leave a comment